ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এনসিপির যাত্রা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪১:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 90

নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মত্মপ্রকাশ করল চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করাই দলটির লক্ষ্য। গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জুলাই আন্দোলনের নায়করা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আত্মত্মপ্রকাশ করে দলটি। সদ্য সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে এনসিপির ১৫১ সদস্য ঘোষণা করা হয়েছে। শহীদ মো. ইসমাইল হাসান রাব্বির বোন মিম আক্তার দলটির নাম ঘোষণা করেন। মিম আক্তার বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, গত ৫ আগস্ট দুই বোনের কাঁধে ভাইয়ের লাশ। সে দুই বোনের মধ্যে আমি একজন। ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলের নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণা করছি।’

এসময় তিনি আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। এরপর আখতার হোসেন মঞ্চে উঠে নতুন এ রাজনৈতিক দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিতে মোট ১৫১টি পদ রয়েছে। আখতার হোসেন জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, ডা. তাসনীম জারা ও নাহিদা সারোয়ার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে নতুন দলের প্রধান সমন্বয়কারী, আবদুল হান্নান মাসউদকে যুগ্ম সমন্বয়ক, হাসনাত আবদুল্লাহকে মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল), সারজিস আলমকে মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ও সালেহউদ্দিন সিফাতকে দপ্তর সম্পাদক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিন বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একে একে পাঠ করা হয় গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল। পরে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে অংশ নেন। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির ঠাঁই হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করব। আমরা সামনের কথা বলতে চাই। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’ স্লোগানটি তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিকল্পের জায়গা থেকে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। আজকের মঞ্চ থেকে শপথ, বাংলাদেশকে বিভাজিত করা। যাবে না।

এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাহিদ ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জুলাই ২০২৪ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে, আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা এই মর্মে ঘোষণা করছি, আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বর্ষীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে- এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি। বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।”

‘জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাক্সক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।’

‘আমরা মনে করি জুলাই ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্যদিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারব। আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।’

‘আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। আমাদের রিপাবলিকে সাধারণ মানুষ, একমাত্র সাধারণ মানুষই হবে ক্ষমতার সর্বময় উৎস। তাদের সব ধরনের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের শক্তিশালী সুরক্ষাই হবে আমাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র। আমরা রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে একটি বহুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। আমাদের রিপাবলিক সব নাগরিককে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর কোনো অংশকেই অপরায়ণ করা হবে না। বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’

‘অর্থনীতিতে, আমরা কৃষি সেবা-উৎপাদন খাতের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন একটি জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই যেটি হবে স্বনির্ভর, আয়- বৈষম্যহীন ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল। আমাদের অর্থনীতিতে সম্পদ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে পুঞ্জীভূত হবে না, বরং সম্পদের সুষম পুনর্বণ্টন হবে আমাদের অর্থনীতির মূলমন্ত্র। আমরা বেসরকারি খাতের সিন্ডিকেট ও গোষ্ঠীস্বার্থ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ভোক্তা ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ করব। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে এই অঞ্চলের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত করব এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে জোর দিয়ে উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি টেকসই, আধুনিক অর্থনীতি গড়ে তুলব।’

‘পরিশেষে, আমরা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্প আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ। চলুন আমরা একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে, এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হবে, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকারের সংগ্রামই হবে রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য। যেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখনই সময়-নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন পথচলার এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার! এই নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমরা সবাই প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে শপথ করি। ঐক্যবদ্ধ হই এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে যাই। আমাদের দেশ, আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ-আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, আমাদের প্রতিজ্ঞা!’

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ নতুন এক সুযোগের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি মনে করেন, যারা দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক এবং নতুন কিছু উপহার দিতে চান, তাদের এখনই এগিয়ে আসার সময়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ এক নতুনের সুযোগ পেয়েছে। এই নতুনের দায়িত্ব যারা বহন করতে ইচ্ছুক, যারা বাংলাদেশকে নতুন কিছু উপহার দিতে চাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম- সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে চাই।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ করার প্রত্যয় জানিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এ দেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ হয়েছে। এ দেশে কামারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে, এ দেশে কুমারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে। এ দেশে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব উঠে আসবে। এ দেশে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। রাজনৈতিক পরমত সহিষ্ণুতা থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।’ নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সারজিস আলম বলেন, এই মঞ্চ থেকে আমরা শপথ নিতে চাই- এই ছোট জীবনে এত বড় দায়িত্বের আমানতকে যেন আমরা খেয়ানত না করি। যারা বড় রাজনৈতিক দল রয়েছে, তারা যদি ছোট দলকে এগিয়ে যেতে না দেয় তাহলে আবার একটি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে। খুনি হাসিনাকে দেখে যেন আমরা সেই শিক্ষা নিতে পারি। আমরা দেশ এবং জাতিকে সবার ওপরে রেখে যেন নতুন ও সাম্যের বাংলাদেশ গঠন করতে পারি।’

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, সময়ের রাজনীতি ছিল ক্ষমতার খেলা, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও স্বার্থের লেনদেন। আমরা এর অবসান চাই। আমরা এমন এক রাজনীতি চাই যেখানে কোনো পারিবারিক আধিপত্য থাকবে না। এমন এক রাজনীতি চাই যেখানে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফেরত দেওয়া হবে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামীর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ হবে। আমরা আপনাদের নতুন দলের পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, আগামীর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ হবে। আগামীর বাংলাদেশে তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে চাঁদাবাজ, দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করবেই করবে।

গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশে উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত নেতারাও। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয় মঞ্চের সামনেই। এরপর ছিল শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধা পরিবারের জন্য আসন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এসেছেন অনুষ্ঠানে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এনসিপির যাত্রা

আপলোড টাইম : ০২:৪১:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মত্মপ্রকাশ করল চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করাই দলটির লক্ষ্য। গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জুলাই আন্দোলনের নায়করা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আত্মত্মপ্রকাশ করে দলটি। সদ্য সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে এনসিপির ১৫১ সদস্য ঘোষণা করা হয়েছে। শহীদ মো. ইসমাইল হাসান রাব্বির বোন মিম আক্তার দলটির নাম ঘোষণা করেন। মিম আক্তার বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, গত ৫ আগস্ট দুই বোনের কাঁধে ভাইয়ের লাশ। সে দুই বোনের মধ্যে আমি একজন। ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলের নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণা করছি।’

এসময় তিনি আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। এরপর আখতার হোসেন মঞ্চে উঠে নতুন এ রাজনৈতিক দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিতে মোট ১৫১টি পদ রয়েছে। আখতার হোসেন জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, ডা. তাসনীম জারা ও নাহিদা সারোয়ার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে নতুন দলের প্রধান সমন্বয়কারী, আবদুল হান্নান মাসউদকে যুগ্ম সমন্বয়ক, হাসনাত আবদুল্লাহকে মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল), সারজিস আলমকে মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ও সালেহউদ্দিন সিফাতকে দপ্তর সম্পাদক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিন বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একে একে পাঠ করা হয় গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল। পরে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে অংশ নেন। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির ঠাঁই হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করব। আমরা সামনের কথা বলতে চাই। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’ স্লোগানটি তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিকল্পের জায়গা থেকে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। আজকের মঞ্চ থেকে শপথ, বাংলাদেশকে বিভাজিত করা। যাবে না।

এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাহিদ ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জুলাই ২০২৪ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে, আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা এই মর্মে ঘোষণা করছি, আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বর্ষীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে- এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি। বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।”

‘জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাক্সক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।’

‘আমরা মনে করি জুলাই ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্যদিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারব। আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।’

‘আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। আমাদের রিপাবলিকে সাধারণ মানুষ, একমাত্র সাধারণ মানুষই হবে ক্ষমতার সর্বময় উৎস। তাদের সব ধরনের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের শক্তিশালী সুরক্ষাই হবে আমাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র। আমরা রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে একটি বহুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। আমাদের রিপাবলিক সব নাগরিককে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর কোনো অংশকেই অপরায়ণ করা হবে না। বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’

‘অর্থনীতিতে, আমরা কৃষি সেবা-উৎপাদন খাতের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন একটি জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই যেটি হবে স্বনির্ভর, আয়- বৈষম্যহীন ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল। আমাদের অর্থনীতিতে সম্পদ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে পুঞ্জীভূত হবে না, বরং সম্পদের সুষম পুনর্বণ্টন হবে আমাদের অর্থনীতির মূলমন্ত্র। আমরা বেসরকারি খাতের সিন্ডিকেট ও গোষ্ঠীস্বার্থ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ভোক্তা ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ করব। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে এই অঞ্চলের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত করব এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে জোর দিয়ে উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি টেকসই, আধুনিক অর্থনীতি গড়ে তুলব।’

‘পরিশেষে, আমরা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্প আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ। চলুন আমরা একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে, এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হবে, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকারের সংগ্রামই হবে রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য। যেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখনই সময়-নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন পথচলার এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার! এই নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমরা সবাই প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে শপথ করি। ঐক্যবদ্ধ হই এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে যাই। আমাদের দেশ, আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ-আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, আমাদের প্রতিজ্ঞা!’

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ নতুন এক সুযোগের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি মনে করেন, যারা দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক এবং নতুন কিছু উপহার দিতে চান, তাদের এখনই এগিয়ে আসার সময়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ এক নতুনের সুযোগ পেয়েছে। এই নতুনের দায়িত্ব যারা বহন করতে ইচ্ছুক, যারা বাংলাদেশকে নতুন কিছু উপহার দিতে চাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম- সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে চাই।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ করার প্রত্যয় জানিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এ দেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ হয়েছে। এ দেশে কামারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে, এ দেশে কুমারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে। এ দেশে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব উঠে আসবে। এ দেশে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। রাজনৈতিক পরমত সহিষ্ণুতা থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।’ নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সারজিস আলম বলেন, এই মঞ্চ থেকে আমরা শপথ নিতে চাই- এই ছোট জীবনে এত বড় দায়িত্বের আমানতকে যেন আমরা খেয়ানত না করি। যারা বড় রাজনৈতিক দল রয়েছে, তারা যদি ছোট দলকে এগিয়ে যেতে না দেয় তাহলে আবার একটি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে। খুনি হাসিনাকে দেখে যেন আমরা সেই শিক্ষা নিতে পারি। আমরা দেশ এবং জাতিকে সবার ওপরে রেখে যেন নতুন ও সাম্যের বাংলাদেশ গঠন করতে পারি।’

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, সময়ের রাজনীতি ছিল ক্ষমতার খেলা, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও স্বার্থের লেনদেন। আমরা এর অবসান চাই। আমরা এমন এক রাজনীতি চাই যেখানে কোনো পারিবারিক আধিপত্য থাকবে না। এমন এক রাজনীতি চাই যেখানে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফেরত দেওয়া হবে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামীর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ হবে। আমরা আপনাদের নতুন দলের পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, আগামীর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ হবে। আগামীর বাংলাদেশে তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে চাঁদাবাজ, দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করবেই করবে।

গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশে উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত নেতারাও। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয় মঞ্চের সামনেই। এরপর ছিল শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধা পরিবারের জন্য আসন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এসেছেন অনুষ্ঠানে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।