শেখ হাসিনার জামানায় ঘরে ঘরে চাকরি মেলেনি, বিদেশে যাওয়ার হিড়িক
ঝিনাইদহে প্রতি মাসে গড়ে ৮৩৩ জন যুবক দেড় ছাড়ছেন
- আপলোড টাইম : ০৮:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / ৭০ বার পড়া হয়েছে
ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ‘ঘরে ঘরে চাকরি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরি মেলেনি। আর চাকরি না পেয়ে ঝিনাইদহ জেলা থেকে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা গত ১৬ বছরে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ পাড়ি দেওয়ার এই স্রোত এখনো থামেনি। ঝিনাইদহ জেলা থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৮৩৩ জন বেকার যুবক কর্মসংস্থানের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন। ফলে ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্র ও বেকার যুবক।
কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্যমতে, গত ৮ বছরে ঝিনাইদহ জেলা থেকে বিভিন্ন দেশে ৫৫ হাজার বেকার যুবক বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার নারী কর্মী রয়েছে। তবে তাদের এই যাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। আর এতে সমাজ-সংসারে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মশালায় চাকরির জন্য বিদেশ গমনের এই তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঝিনাইদহ জেলার এক লাখ ২৪ হাজার নাগরিক বিদেশে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ১৪ হাজার নারী রয়েছে। পাসপোর্ট অফিস, জেলা কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও কারিগরি প্রশিক্ষক কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও নিরক্ষর বেকার যুবকেরা বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ঝিনাইদহে কর্মসংস্থানের অভাব এবং দারিদ্রতার কারণে অনেকে আবার বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে উন্নত দেশে যাওয়ারার পথ বেছে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। এতে অনেকের অকাল মৃত্যু ঘটছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত হরিণাকুণ্ডু ও ঝিনাইদহ সদর থানার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অন্তত ২৫ জন মানুষ সাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হওয়ার তথ্য আছে। এর মধ্যে হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ও সড়াবাড়িয়া গ্রামের ৮ জন ও সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের ৩ জন, পিরোজপুর গ্রামের দুজন, মিয়াকুন্ডু গ্রামের ৪ জন, মহামায়া ও গাড়ামারা গ্রামের ৮ জন যুবক। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে জীবিত ও অনেকে লাশ হয়ে ফিরে আসলেও বেশির ভাগ রয়েছে নিখোঁজ।
ঝিনাইদহ জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান, ঝিনাইদহে সর্বশেষ জরিপে ২০ লাখ ৫ হাজার জনসংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩.১% বেকার। সে হিসাব মতে জেলায় বেকারের সংখ্যা হবে আনুমানিক ৬০ হাজার। তবে সরকারি এই জরিপ সঠিক মনে কারণে না অনেকেই। কারণ প্রতিটি বাড়িতেই বেকার যুবক রয়েছে। বাড়ি বাড়ি কর্মক্ষম বেকার যুবক থাকায় সংসারে অশান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাকরি না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে বিপথগামী হচ্ছে।
হরিণাকুণ্ডুুর শ্রীফলতলা গ্রামের নাবাব আলী শিকদার জানান, চাকরি না পাওয়ায় প্রায় চার বছর তিনি সৌদি আরব এসেছেন। ঝিনাইদহ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক সামিউল ইসলাম জানান, বর্তমান বিদেশ গমনেচ্ছুদের মধ্যে মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে যাবার প্রবণতাই বেশি। তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার মানুষ চাকরির নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। জেলার ৬ উপজেলা থেকে এখন লক্ষাধীক মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কথা হয় বংকিরা গ্রামের নাজমুস সাবিক ও হাসান মাহমুদ নামে দুই যুবকের সাথে। তারা জানান, এইচএসসি পাস করে কোনো চাকরি পাননি। তাই বাপের জমিজাতি বিক্রি করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিস থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন ঝিনাইদহ জেলা থেকে শতাধিক মানুষ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছেন। এই হার দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে, বেকার যুবকদের ভিসা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ঋণসুবিধা দিচ্ছে ঝিনাইদহ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ব্যাংকের শাখা স্থাপিত হওয়ার পর থেকে ৫ বছরে প্রায় দুই হাজার যুবককে ঋন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রায় ২২ কোটিরও বেশি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ রুস্তম আলী জানান, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে থেকে বেকার যুবকদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে তারা বিদেশে গিয়ে ভালো বেতন পান। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকে ১০টি ট্রেডে দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, ওয়ার্কার হিসেবে যারাই বিদেশে যাবেন, তাদেরই টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক।
ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, সাধারণত স্কুলের গণ্ডি না পেরনো যুবকদের মাঠে কাজ ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে তারা বিদেশে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগে দালালযোগে বিদেশ পাড়ি দিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। তবে এখন অবৈধ পড়ে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে বলে তিনি মনে করেন।