ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

লোডশেডিংয়ের চোখ রাঙানি

কারিগরি ত্রুটিতে হঠাৎ বন্ধ আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৪:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে ভারতের আদানি গ্রুপ। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি গত নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। বকেয়া বিল বেড়ে যাওয়ায় সে সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয় ভারতের এ কোম্পানিটি। তবে গতকাল দুপুর ১টায় অপর ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যায়। এতে আদানির বিদ্যুৎ আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও রোজাকে সামনে রেখে আদানির সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে কারিগরি ত্রুটিতে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আপাতত আদানির ব্যাকআপ দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছে সংস্থাটি।

সূত্রমতে, এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি থেকে গত বছর সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০১ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় পরিচালিত হলে আদানির কেন্দ্র থেকে গড়ে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তবে গত ১২ আগস্ট কেন্দ্রটির লোড টেস্টে ডিপেন্ডেবল ক্যাপাসিটি (নির্ভরযোগ্য সক্ষমতা) হ্রাস পায়। এতে কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ সক্ষমতায় পরিচালিত হলেও এক হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা। পিডিবিকে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে আদানি জানায়, ১২ আগস্ট বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। এতে নির্ভরযোগ্য সক্ষমতা পাওয়া যায় এক হাজার ৩৪৭ দশমিক ৫৪ মেগাওয়াট। আদানির সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির (পিপিএ) আওতায় ১৩ আগস্ট থেকে কেন্দ্রটির নির্ভরযোগ্য সক্ষমতা এক হাজার ৩৪৭ দশমিক ৫৪ মেগাওয়াট বিবেচিত হবে। পরবর্তী লোড টেস্টের আগ পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে।

এদিকে গত বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধে বিলম্বের কারণে গত বছরের ৩১ আগস্ট ভারতের গৌতম আদানির কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে অর্ধেক করে দেয়। আর ১ নভেম্বর ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি। শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে, সে কারণে বাংলাদেশও বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয়; সেই সঙ্গে মূল্য পরিশোধের বিষয়টি তো ছিলই। যদিও গ্রীষ্ম মৌসুমের আগেই রোজার মধ্যেই পিডিবির অনুরোধে আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্মত হয়েছে আদানি পাওয়ার। তবে গতকাল হঠাৎ করে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে চালু থাকা ইউনিটটিতে উৎপাদন হ্রাস পায়। এতে সকাল ১০টায় কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ আসে ৭৩৫ মেগাওয়াট। বেলা ১১টায় তা আরও কমে দাঁড়ায় ৪২৫ মেগাওয়াট ও দুপুর ১২টায় দাঁড়ায় ২২১ মেগাওয়াট। তবে দুপুর ১টা থেকে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

জানতে চাইলে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে গতকাল সকালেই তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি জানায়। তবে দুপুর ১টায় তা শূন্য হয়ে যায়। কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ার আগে আদানি গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। তবে হঠাৎ তা বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদানির বন্ধ থাকা ইউনিটটি ঠিকঠাক থাকলে দুইদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তা না হলে রোজায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ গ্যাসের সংকট থাকায় এ মুহূর্তে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। এছাড়া ফার্নেস অয়েল আমদানি সংকট থাকায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

লোডশেডিংয়ের চোখ রাঙানি

কারিগরি ত্রুটিতে হঠাৎ বন্ধ আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ

আপলোড টাইম : ০৮:২৪:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে ভারতের আদানি গ্রুপ। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি গত নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। বকেয়া বিল বেড়ে যাওয়ায় সে সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয় ভারতের এ কোম্পানিটি। তবে গতকাল দুপুর ১টায় অপর ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যায়। এতে আদানির বিদ্যুৎ আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও রোজাকে সামনে রেখে আদানির সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে কারিগরি ত্রুটিতে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আপাতত আদানির ব্যাকআপ দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছে সংস্থাটি।

সূত্রমতে, এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি থেকে গত বছর সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০১ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় পরিচালিত হলে আদানির কেন্দ্র থেকে গড়ে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তবে গত ১২ আগস্ট কেন্দ্রটির লোড টেস্টে ডিপেন্ডেবল ক্যাপাসিটি (নির্ভরযোগ্য সক্ষমতা) হ্রাস পায়। এতে কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ সক্ষমতায় পরিচালিত হলেও এক হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা। পিডিবিকে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে আদানি জানায়, ১২ আগস্ট বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। এতে নির্ভরযোগ্য সক্ষমতা পাওয়া যায় এক হাজার ৩৪৭ দশমিক ৫৪ মেগাওয়াট। আদানির সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির (পিপিএ) আওতায় ১৩ আগস্ট থেকে কেন্দ্রটির নির্ভরযোগ্য সক্ষমতা এক হাজার ৩৪৭ দশমিক ৫৪ মেগাওয়াট বিবেচিত হবে। পরবর্তী লোড টেস্টের আগ পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে।

এদিকে গত বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধে বিলম্বের কারণে গত বছরের ৩১ আগস্ট ভারতের গৌতম আদানির কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে অর্ধেক করে দেয়। আর ১ নভেম্বর ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি। শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে, সে কারণে বাংলাদেশও বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয়; সেই সঙ্গে মূল্য পরিশোধের বিষয়টি তো ছিলই। যদিও গ্রীষ্ম মৌসুমের আগেই রোজার মধ্যেই পিডিবির অনুরোধে আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্মত হয়েছে আদানি পাওয়ার। তবে গতকাল হঠাৎ করে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে চালু থাকা ইউনিটটিতে উৎপাদন হ্রাস পায়। এতে সকাল ১০টায় কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ আসে ৭৩৫ মেগাওয়াট। বেলা ১১টায় তা আরও কমে দাঁড়ায় ৪২৫ মেগাওয়াট ও দুপুর ১২টায় দাঁড়ায় ২২১ মেগাওয়াট। তবে দুপুর ১টা থেকে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

জানতে চাইলে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে গতকাল সকালেই তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি জানায়। তবে দুপুর ১টায় তা শূন্য হয়ে যায়। কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ার আগে আদানি গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। তবে হঠাৎ তা বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদানির বন্ধ থাকা ইউনিটটি ঠিকঠাক থাকলে দুইদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তা না হলে রোজায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ গ্যাসের সংকট থাকায় এ মুহূর্তে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। এছাড়া ফার্নেস অয়েল আমদানি সংকট থাকায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়।