ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

১২ দিন বন্ধের পর আধুনিক প্রযুক্তিতে আখমাড়াই শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি

পুরোনো বয়লিং হাউজে পুনরায় চালু হলো কেরু চিনিকল

দর্শনা অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৩:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৭৪ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা কেরু চিনিকল ১২ দিন বন্ধ রেখে আধুনিক প্রযুক্তিতে আখ মাড়াই শুরু করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়ে আখ মাড়াই শুরু করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ রেখে নতুন বয়লিং হাউজ চালুর করা সিদ্ধান্ত নেয় প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) ফিদা হাসান বাদশা। তবে শেষ পর্যন্ত পুরাতন বয়লিং মিলটি চালু করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। কেরু চিনিকলে এবারের আখ মাড়াই শুরু হয় গত ২০ ডিসেম্বর। টানা ৫২ দিন মাড়াই কার্যক্রম চলার পর হঠাৎ করে নতুন বয়লিং হাউজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএমআরআই প্রকল্প। সে কারণে কেরুজ কর্তৃপক্ষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন বয়লিং হাউজে গরম হয়ে আগুন ধরে যায়। সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার আগেই নতুন বয়লিং হাউজের কিছু পাইপ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে অনেক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

জানতে চাইলে প্রকল্পের ডাইরেক্টর ফিদা হাসান বাদশা বলেন, ‘আমি কিছুই বলতে পারব না। ২০১২ সালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লি. সরকারি অর্থায়নে বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং বিডি লি. প্রথম সংশোধিত প্রকল্প কাজ শুরু করে। দীর্ঘ ১৩ বছরেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২০ কোটি টাকা অনুমোদন হলেও পরে তা বাড়িয়ে ২০০ কোটি টাকারও বেশি করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার নতুন বয়লিং হাউজ চালু হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত চালু হলো না। এ বছরে চালু হবে কি না, তা কেউ বলতে পারছে না। তাহলে কোন ভরসায় ১২ দিন মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হলো, তার কোনো উত্তর মেলেনি।
চাষিরা বলেন, চিনিকলটি ১২ দিন বন্ধ থাকায় আখ রোপণ পিছিয়ে গেছে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিজিএম (সম্প্রসারণ) মাহাবুবুর রহমান গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, অর্ধেক জমিতে আখ দাঁড়িয়ে আছে, বাকি অর্ধেক মুড়ি আখ রয়েছে। জীবননগর সাব জোনের বিশিষ্ট আখচাষি ছাইদার হোসেন বলেন, তিনি তার আখ এখনও সমুদয় সরবরাহ করতে পারেননি। যার কারণে তিনি ক্ষোভে দেড় বিঘা মুড়ি আখ চষে ফেলেছেন। এমন হাজারো চাষি এবার আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আখের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মৌসুমে ৬৫ কার্যদিবসে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ধরা হয় ৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫২ দিনে এ যাবত ৬০ হাজার ৪৩৮ পয়েন্ট ৮৩৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ১২৮ পয়েন্ট ১৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার মিলটি চালু হওয়া পর্যন্ত কেরু ফার্মে এবং কৃষকের জমিতে ৭০০-৮০০ একর দণ্ডায়মান আখ রয়েছে বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান। তিনি আরও বলেন, চলতি আখ রোপণ মৌসুমে ৬ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ হয়েছে। আরও এক হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করা হবে বলে তিনি আশাবাদী।
বাস্তবে কতটুকু তা রোপণ হয়েছে, তা বলা অসম্ভব। কারণ চাষিরা আখ লাগানোর জন্য যে পরিমাণ জমির কথা বলে সার উত্তোলন করেন, তা সঠিক হয় না। কারণ কেরু মিল থেকে সার উত্তোলন করে অনেকেই জমিতে ভুট্টা ও ধান রোপণ করে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মিল এলাকায় আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

১২ দিন বন্ধের পর আধুনিক প্রযুক্তিতে আখমাড়াই শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি

পুরোনো বয়লিং হাউজে পুনরায় চালু হলো কেরু চিনিকল

আপলোড টাইম : ০৩:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দর্শনা কেরু চিনিকল ১২ দিন বন্ধ রেখে আধুনিক প্রযুক্তিতে আখ মাড়াই শুরু করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়ে আখ মাড়াই শুরু করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ রেখে নতুন বয়লিং হাউজ চালুর করা সিদ্ধান্ত নেয় প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) ফিদা হাসান বাদশা। তবে শেষ পর্যন্ত পুরাতন বয়লিং মিলটি চালু করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। কেরু চিনিকলে এবারের আখ মাড়াই শুরু হয় গত ২০ ডিসেম্বর। টানা ৫২ দিন মাড়াই কার্যক্রম চলার পর হঠাৎ করে নতুন বয়লিং হাউজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএমআরআই প্রকল্প। সে কারণে কেরুজ কর্তৃপক্ষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন বয়লিং হাউজে গরম হয়ে আগুন ধরে যায়। সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার আগেই নতুন বয়লিং হাউজের কিছু পাইপ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে অনেক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

জানতে চাইলে প্রকল্পের ডাইরেক্টর ফিদা হাসান বাদশা বলেন, ‘আমি কিছুই বলতে পারব না। ২০১২ সালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লি. সরকারি অর্থায়নে বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং বিডি লি. প্রথম সংশোধিত প্রকল্প কাজ শুরু করে। দীর্ঘ ১৩ বছরেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২০ কোটি টাকা অনুমোদন হলেও পরে তা বাড়িয়ে ২০০ কোটি টাকারও বেশি করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার নতুন বয়লিং হাউজ চালু হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত চালু হলো না। এ বছরে চালু হবে কি না, তা কেউ বলতে পারছে না। তাহলে কোন ভরসায় ১২ দিন মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হলো, তার কোনো উত্তর মেলেনি।
চাষিরা বলেন, চিনিকলটি ১২ দিন বন্ধ থাকায় আখ রোপণ পিছিয়ে গেছে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিজিএম (সম্প্রসারণ) মাহাবুবুর রহমান গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, অর্ধেক জমিতে আখ দাঁড়িয়ে আছে, বাকি অর্ধেক মুড়ি আখ রয়েছে। জীবননগর সাব জোনের বিশিষ্ট আখচাষি ছাইদার হোসেন বলেন, তিনি তার আখ এখনও সমুদয় সরবরাহ করতে পারেননি। যার কারণে তিনি ক্ষোভে দেড় বিঘা মুড়ি আখ চষে ফেলেছেন। এমন হাজারো চাষি এবার আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আখের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মৌসুমে ৬৫ কার্যদিবসে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ধরা হয় ৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫২ দিনে এ যাবত ৬০ হাজার ৪৩৮ পয়েন্ট ৮৩৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ১২৮ পয়েন্ট ১৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার মিলটি চালু হওয়া পর্যন্ত কেরু ফার্মে এবং কৃষকের জমিতে ৭০০-৮০০ একর দণ্ডায়মান আখ রয়েছে বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান। তিনি আরও বলেন, চলতি আখ রোপণ মৌসুমে ৬ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ হয়েছে। আরও এক হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করা হবে বলে তিনি আশাবাদী।
বাস্তবে কতটুকু তা রোপণ হয়েছে, তা বলা অসম্ভব। কারণ চাষিরা আখ লাগানোর জন্য যে পরিমাণ জমির কথা বলে সার উত্তোলন করেন, তা সঠিক হয় না। কারণ কেরু মিল থেকে সার উত্তোলন করে অনেকেই জমিতে ভুট্টা ও ধান রোপণ করে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মিল এলাকায় আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় না।