ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

জীবননগরে তানজিনা ক্লিনিকে সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

তড়িঘড়ি করে দাফন, মোটা টাকায় আপসের গুঞ্জন!

জীবননগর অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৭৬ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরে তানজিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে আন্নি খাতুন (২০) নামের ওই প্রসূতির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

এর তিন ঘণ্টা পর তার অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু পথেই তিনি মারা যান। নিহত আন্নি খাতুন (২০) ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়নের মথুরানগর গ্রামের শাহিন আলমের স্ত্রী।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত নয়টার দিকে আন্নির প্রসব বেদনা উঠলে তাকে তানজিনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সিজারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে পরিবারের সদস্যরা সম্মতি দেন। এদিকে, অস্ত্রোপচারের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দাবি তুলেছে। তবে স্থানীয়দের অনেকে দাবি করেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়। পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আপস করা হয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে, নিহতের জানাজার নামাজ গতকাল যোহরের পর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনকভাবে তা বেলা ১১টার মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, অস্ত্রোপচারটি করেন সার্জন ডা. সোহেল রানা। অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. আনিসুর রহমান। সহযোগী হিসেবে ছিলেন ইবনে সিনা ক্লিনিকের এক পার্টনার, যার পরিচয় জব্বার নামে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিকের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়েই অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর শরীরে চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এটি ছিল তার তৃতীয় সিজার। অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। রাত ৪টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়, কিন্তু পথেই তিনি মারা যান।’

তবে সার্জন ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকের বক্তব্য জানতে চাইলে ক্লিনিকের মালিক সিরাজুল ইসলাম এই দুই চিকিৎসকের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। এমনকি তাদের মোবাইল নম্বর দিতে চাইলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। ওই দুই চিকিৎসকের বিষয়ে আর কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রসূতির মৃত্যুর পর থেকে তাদের আর কেউ দেখেনি।

এদিকে, তানজিনা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আগেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ক্লিনিকটিতে কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। সরেজমিন দেখা গেছে, ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নিশ্চিত করা হয়নি। এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। উপজেলায় যেসব ক্লিনিকের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাটির বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জীবননগরে তানজিনা ক্লিনিকে সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

তড়িঘড়ি করে দাফন, মোটা টাকায় আপসের গুঞ্জন!

আপলোড টাইম : ০২:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জীবননগরে তানজিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে আন্নি খাতুন (২০) নামের ওই প্রসূতির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

এর তিন ঘণ্টা পর তার অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু পথেই তিনি মারা যান। নিহত আন্নি খাতুন (২০) ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়নের মথুরানগর গ্রামের শাহিন আলমের স্ত্রী।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত নয়টার দিকে আন্নির প্রসব বেদনা উঠলে তাকে তানজিনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সিজারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে পরিবারের সদস্যরা সম্মতি দেন। এদিকে, অস্ত্রোপচারের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দাবি তুলেছে। তবে স্থানীয়দের অনেকে দাবি করেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়। পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আপস করা হয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে, নিহতের জানাজার নামাজ গতকাল যোহরের পর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনকভাবে তা বেলা ১১টার মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, অস্ত্রোপচারটি করেন সার্জন ডা. সোহেল রানা। অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. আনিসুর রহমান। সহযোগী হিসেবে ছিলেন ইবনে সিনা ক্লিনিকের এক পার্টনার, যার পরিচয় জব্বার নামে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিকের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়েই অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর শরীরে চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এটি ছিল তার তৃতীয় সিজার। অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। রাত ৪টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়, কিন্তু পথেই তিনি মারা যান।’

তবে সার্জন ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকের বক্তব্য জানতে চাইলে ক্লিনিকের মালিক সিরাজুল ইসলাম এই দুই চিকিৎসকের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। এমনকি তাদের মোবাইল নম্বর দিতে চাইলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। ওই দুই চিকিৎসকের বিষয়ে আর কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রসূতির মৃত্যুর পর থেকে তাদের আর কেউ দেখেনি।

এদিকে, তানজিনা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আগেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ক্লিনিকটিতে কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। সরেজমিন দেখা গেছে, ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নিশ্চিত করা হয়নি। এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। উপজেলায় যেসব ক্লিনিকের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাটির বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’