ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

এই মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যও বহন করে- শরীফ

হাজরো মুসল্লির আগমনে ঐতিহ্যবাহী ঠাকুরপুর মসজিদের ইছালে সওয়াব অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১২:০১:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৫৫ বার পড়া হয়েছে


১২ ফাল্গুন, প্রতিবছরের মতো এবারও চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পীরগঞ্জ (ঠাকুরপুর) মসজিদে বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এই মহতি অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সমবেত হন। প্রতি বছর এই ইছালে সওয়াবকে কেন্দ্র করে পুরো ঠাকুরপুর এলাকায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য ও শত শত খাবারের দোকানে মেলার আবহ সৃষ্টি হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নারী-পুরুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে এই মাহফিলে অংশ নেন। বিপুল জনসমাগমের ফলে প্রতি বছর ১২ ফাল্গুন দিনটি ঠাকুরপুরের স্বাভাবিক চিত্রকে পুরোপুরি বদলে দেয়। ধর্মপ্রাণ মানুষ নানা মনের ইচ্ছা নিয়ে এখানে আসেন, মানত করেন, এবং ইচ্ছা পূরণ হলে মানত আদায় করেন।
ইছালে সওয়াব অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পীরগঞ্জ (ঠাকুরপুর) মসজিদ শত শত বছর ধরে ইসলামের আলো ছড়িয়ে আসছে। এই মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যও বহন করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সমাগম প্রমাণ করে, ধর্মীয় অনুশীলনের প্রতি মানুষের ভালোবাসা অটুট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষের পাশাপাশি বিদেশি মুসল্লিরাও এই মাহফিলে অংশ নেন, যা আমাদের জেলার জন্য গৌরবের বিষয়।’
তিনি ঠাকুরপুর মসজিদকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এই মাহফিল শুধু ইবাদতের জন্য নয়, বরং এটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি একটি বিশ্বাস যা শত শত বছর ধরে মানুষকে বছরের একটি দিনে এই ঠাকুরপুরে সমাবেত করে।’ তিনি স্থানীয় মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই মহতি আয়োজন নির্বিঘœ করতে এলাকাবাসীর যে অবদান, তা প্রশংসার দাবিদার। আমাদের সকলের উচিত ধর্মীয় মূল্যবোধ ধরে রাখা এবং একে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।’
এছাড়াও তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও মানুষের বাক স্বাধীনতার ফিরে পাওয়া নিয়ে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। বক্তব্যে তিনি শহীদদের স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আবু সাইদ, মীর মুগ্ধসহ এই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন যে হাজারো মানুষ জাতির প্রতি তাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়, আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি।’ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে প্রধান অতিথি আরও বলেন, ‘মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আমাদের উচিত যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে সচেতন হওয়া। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকতে হবে, যাতে আমাদের সমাজ সঠিক দিকনির্দেশনা পায়।’
এ বছর বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক হযরত মাওলানা মুফতি আল আমীন সাইফী। বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন হযরত মাওলানা আব্দুল মুকিত (ঝিনাইদহ), পীরগঞ্জ (ঠাকুরপুর) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুর রশিদ।স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, খাতা-কলমে ৯৭ বছর ধরে এ মাহফিলের কথা উল্লেখ থাকলেও, আসলে এর ইতিহাস ৩০০ বছরেরও পুরোনো। কালের বিবর্তনে এর নাম পরিবর্তিত হয়েছে, তবে এর মূল তাৎপর্য অক্ষুণœ রয়েছে। ঠাকুরপুরের নাম পীরগঞ্জ হওয়ার অন্যতম কারণ এই বিশাল গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি। ইসলামের আলো ছড়াতে যুগে যুগে অনেক ধর্ম প্রচারক এই অঞ্চলে এসেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাধক আফু শাহ্। ১৬৯৮ সালের দিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাথাভাঙ্গা ও নবগঙ্গা নদীপথে তিনি ঠাকুরপুরে আস্তানা গড়েন। কথিত আছে, তাঁর বিশেষ ক্ষমতার বরকতে এক রাতেই এই বিশাল মসজিদ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে মসজিদের মূল কাঠামো ঠিক রেখে একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অতিথি ছিলেন। মাহফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যবৃন্দ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেশ-বিদেশের মানুষের জন্য এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ধর্মীয়, ঐতিহ্যগত এবং সামাজিক দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। গতরাতে ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

এই মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যও বহন করে- শরীফ

হাজরো মুসল্লির আগমনে ঐতিহ্যবাহী ঠাকুরপুর মসজিদের ইছালে সওয়াব অনুষ্ঠিত

আপলোড টাইম : ১২:০১:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


১২ ফাল্গুন, প্রতিবছরের মতো এবারও চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পীরগঞ্জ (ঠাকুরপুর) মসজিদে বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এই মহতি অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সমবেত হন। প্রতি বছর এই ইছালে সওয়াবকে কেন্দ্র করে পুরো ঠাকুরপুর এলাকায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য ও শত শত খাবারের দোকানে মেলার আবহ সৃষ্টি হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নারী-পুরুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে এই মাহফিলে অংশ নেন। বিপুল জনসমাগমের ফলে প্রতি বছর ১২ ফাল্গুন দিনটি ঠাকুরপুরের স্বাভাবিক চিত্রকে পুরোপুরি বদলে দেয়। ধর্মপ্রাণ মানুষ নানা মনের ইচ্ছা নিয়ে এখানে আসেন, মানত করেন, এবং ইচ্ছা পূরণ হলে মানত আদায় করেন।
ইছালে সওয়াব অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পীরগঞ্জ (ঠাকুরপুর) মসজিদ শত শত বছর ধরে ইসলামের আলো ছড়িয়ে আসছে। এই মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যও বহন করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সমাগম প্রমাণ করে, ধর্মীয় অনুশীলনের প্রতি মানুষের ভালোবাসা অটুট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষের পাশাপাশি বিদেশি মুসল্লিরাও এই মাহফিলে অংশ নেন, যা আমাদের জেলার জন্য গৌরবের বিষয়।’
তিনি ঠাকুরপুর মসজিদকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এই মাহফিল শুধু ইবাদতের জন্য নয়, বরং এটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি একটি বিশ্বাস যা শত শত বছর ধরে মানুষকে বছরের একটি দিনে এই ঠাকুরপুরে সমাবেত করে।’ তিনি স্থানীয় মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই মহতি আয়োজন নির্বিঘœ করতে এলাকাবাসীর যে অবদান, তা প্রশংসার দাবিদার। আমাদের সকলের উচিত ধর্মীয় মূল্যবোধ ধরে রাখা এবং একে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।’
এছাড়াও তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও মানুষের বাক স্বাধীনতার ফিরে পাওয়া নিয়ে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। বক্তব্যে তিনি শহীদদের স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আবু সাইদ, মীর মুগ্ধসহ এই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন যে হাজারো মানুষ জাতির প্রতি তাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়, আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি।’ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে প্রধান অতিথি আরও বলেন, ‘মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আমাদের উচিত যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে সচেতন হওয়া। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকতে হবে, যাতে আমাদের সমাজ সঠিক দিকনির্দেশনা পায়।’
এ বছর বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক হযরত মাওলানা মুফতি আল আমীন সাইফী। বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন হযরত মাওলানা আব্দুল মুকিত (ঝিনাইদহ), পীরগঞ্জ (ঠাকুরপুর) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুর রশিদ।স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, খাতা-কলমে ৯৭ বছর ধরে এ মাহফিলের কথা উল্লেখ থাকলেও, আসলে এর ইতিহাস ৩০০ বছরেরও পুরোনো। কালের বিবর্তনে এর নাম পরিবর্তিত হয়েছে, তবে এর মূল তাৎপর্য অক্ষুণœ রয়েছে। ঠাকুরপুরের নাম পীরগঞ্জ হওয়ার অন্যতম কারণ এই বিশাল গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি। ইসলামের আলো ছড়াতে যুগে যুগে অনেক ধর্ম প্রচারক এই অঞ্চলে এসেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাধক আফু শাহ্। ১৬৯৮ সালের দিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাথাভাঙ্গা ও নবগঙ্গা নদীপথে তিনি ঠাকুরপুরে আস্তানা গড়েন। কথিত আছে, তাঁর বিশেষ ক্ষমতার বরকতে এক রাতেই এই বিশাল মসজিদ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে মসজিদের মূল কাঠামো ঠিক রেখে একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকিরে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অতিথি ছিলেন। মাহফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যবৃন্দ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
বার্ষিক ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেশ-বিদেশের মানুষের জন্য এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ধর্মীয়, ঐতিহ্যগত এবং সামাজিক দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। গতরাতে ইছালে সওয়াব ও হালকায়ে জিকির শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।