ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

যাত্রী ছাউনী দখল করে কৃষক দল নেতার দোকান!

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৬৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহে এবার সংস্কারের নামে জেলা পরিষদের যাত্রী ছাউনী দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এই যাত্রী ছাউনীটি অগ্রিম দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ইসাহাক আলী নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান বাজারে। গতকাল রোববার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নগরবাথান বাজারের যাত্রী ছাউনীতে পলেস্তারার কাজ চলছে। বসার জায়গা ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং যাত্রী ছাউনীর একপাশে দোকানের দরজার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে।
কাজে নিয়োজিত মিস্ত্রিদের একাধিকজন জানান, আব্দুর রউফ তাদের এখানে কাজ করতে এনেছেন। প্রথমে বলা হয়েছিল, যাত্রী ছাউনী সংস্কার করা হবে। পরে জানানো হয়, এখানে তিনটি স্টিলের সাটার দরজা লাগাতে হবে। মজুরির বিনিময়ে তারা কাজ করছেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকদিন ধরে যাত্রী ছাউনীর বসার জায়গা ও বিশ্রামের স্থান ভেঙে দোকানের অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পূর্ব পাশের দেয়ালে দরজার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই স্টিলের সাটার দরজা লাগানো হবে।

বাসযাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখানে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতাম। এখন দোকান বানানো হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে।’ এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সদর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফ লোকজন নিয়ে এসে গত শুক্রবার যাত্রী ছাউনী ভাঙার কাজ শুরু করেন। এসময় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ও সভাপতি হায়দার আলী সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং যাত্রী ছাউনীর পাশে থাকা একটি দোকান ভেঙে সরিয়ে দেন। এদিকে, বাজারের ব্যবসায়ীরা বিষয়টি জানতে চাইলে আব্দুর রউফ জানান, জেলা পরিষদ যাত্রী ছাউনী সংস্কার করছে।
জানা গেছে, আব্দুর রউফ কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। আর কথিত ঠিকাদার ইসাহাক আলী দাবি করছেন, টেন্ডারের মাধ্যমে তিনি যাত্রী ছাউনী সংস্কারের কাজ পেয়েছেন। তার হয়ে কাজটি তদারকি করছেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের হামিরহাটি গ্রামের ঠান্ডু মিয়া। কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আব্দুর রউফ বাজারে মিস্ত্রি নিয়ে এসে যাত্রী ছাউনী ভাঙার কাজ শুরু করেন। ইসাহাক আলী টেন্ডারের মাধ্যমে সংস্কারের কাজ পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু দোকান বানানোর বিষয়টি আমি জানি না, আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।’ এ বিষয়ে জানতে আব্দুর রউফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘যাত্রী ছাউনী জেলা পরিষদের দায়িত্বাধীন। এটি সংস্কার হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘যাত্রী ছাউনী সংস্কারের কোনো কাজ হচ্ছে না। কোনো টেন্ডারও হয়নি। কে বা কারা যাত্রী ছাউনী দখল করে দোকান বানাচ্ছে, তা জানা নেই। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদ বলেন, ‘ইসাহাক আলী বিএনপির কেউ নন। তিনি ভুয়া টেন্ডারের নামে প্রতারণা ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত। তবে আব্দুর রউফ বা বিএনপির অন্য কোনো নেতা-কর্মী এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

যাত্রী ছাউনী দখল করে কৃষক দল নেতার দোকান!

আপলোড টাইম : ০৮:৪২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঝিনাইদহে এবার সংস্কারের নামে জেলা পরিষদের যাত্রী ছাউনী দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এই যাত্রী ছাউনীটি অগ্রিম দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ইসাহাক আলী নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান বাজারে। গতকাল রোববার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নগরবাথান বাজারের যাত্রী ছাউনীতে পলেস্তারার কাজ চলছে। বসার জায়গা ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং যাত্রী ছাউনীর একপাশে দোকানের দরজার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে।
কাজে নিয়োজিত মিস্ত্রিদের একাধিকজন জানান, আব্দুর রউফ তাদের এখানে কাজ করতে এনেছেন। প্রথমে বলা হয়েছিল, যাত্রী ছাউনী সংস্কার করা হবে। পরে জানানো হয়, এখানে তিনটি স্টিলের সাটার দরজা লাগাতে হবে। মজুরির বিনিময়ে তারা কাজ করছেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকদিন ধরে যাত্রী ছাউনীর বসার জায়গা ও বিশ্রামের স্থান ভেঙে দোকানের অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পূর্ব পাশের দেয়ালে দরজার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই স্টিলের সাটার দরজা লাগানো হবে।

বাসযাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখানে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতাম। এখন দোকান বানানো হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে।’ এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সদর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফ লোকজন নিয়ে এসে গত শুক্রবার যাত্রী ছাউনী ভাঙার কাজ শুরু করেন। এসময় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ও সভাপতি হায়দার আলী সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং যাত্রী ছাউনীর পাশে থাকা একটি দোকান ভেঙে সরিয়ে দেন। এদিকে, বাজারের ব্যবসায়ীরা বিষয়টি জানতে চাইলে আব্দুর রউফ জানান, জেলা পরিষদ যাত্রী ছাউনী সংস্কার করছে।
জানা গেছে, আব্দুর রউফ কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। আর কথিত ঠিকাদার ইসাহাক আলী দাবি করছেন, টেন্ডারের মাধ্যমে তিনি যাত্রী ছাউনী সংস্কারের কাজ পেয়েছেন। তার হয়ে কাজটি তদারকি করছেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের হামিরহাটি গ্রামের ঠান্ডু মিয়া। কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আব্দুর রউফ বাজারে মিস্ত্রি নিয়ে এসে যাত্রী ছাউনী ভাঙার কাজ শুরু করেন। ইসাহাক আলী টেন্ডারের মাধ্যমে সংস্কারের কাজ পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু দোকান বানানোর বিষয়টি আমি জানি না, আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।’ এ বিষয়ে জানতে আব্দুর রউফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘যাত্রী ছাউনী জেলা পরিষদের দায়িত্বাধীন। এটি সংস্কার হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘যাত্রী ছাউনী সংস্কারের কোনো কাজ হচ্ছে না। কোনো টেন্ডারও হয়নি। কে বা কারা যাত্রী ছাউনী দখল করে দোকান বানাচ্ছে, তা জানা নেই। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদ বলেন, ‘ইসাহাক আলী বিএনপির কেউ নন। তিনি ভুয়া টেন্ডারের নামে প্রতারণা ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত। তবে আব্দুর রউফ বা বিএনপির অন্য কোনো নেতা-কর্মী এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’