ইপেপার । আজ শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

শৈলকূপায় ব্রাশফায়ারে নিহত তিনজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

ময়নাতদন্ত শেষে দাফন; হত্যার মোটিভ উদ্ধারে মাঠে পুলিশ

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১০:০৯:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৫৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্তের পর নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এদিকে ট্রিপল মার্ডারের পর পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে হত্যায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ ও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। তারা হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধারে মাঠে নেমেছে বলে জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।

নিহতরা হলেন-নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক কমান্ডার, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে, অসংখ্য হত্যা মামলার আসামি হানিফ আলী (৫২), তার শ্যালক একই উপজেলার দীরামপুর গ্রামের উম্মাদ আলীর ছেলে লিটন (৩৫) ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের আরজাদ আলীর ছেলে রাইসুল ইসলাম (৪০)। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষরা মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে তাদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। হত্যার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয়ে ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, শুক্রবার রাতে প্রতিপক্ষ বন্দুকধারীরা দুই সহযোগীসহ পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক কমান্ডার হানিফকে গুলি করে হত্যা করে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকার একটি ক্যানালের পাশ থেকে নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনজনের মাথায় গুলির চিহ্ন ছিল। পাশে দুটি মোটরসাইকেল ও নিহতদের ব্যবহৃত হেলমেট পড়ে ছিল। নিহত হানিফ প্রায় দুই ডজন হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন।

এ ঘটনায় গতকাল শৈলকূপা থানা চত্বরে নিহত হানিফের ছোট ভাই, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম এশার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার ভাইকে বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে তিনি মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাতে জানতে পারেন, তার ভাই হানিফ, শ্যালক লিটন ও রাইসুল ইসলাম রাজুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম এশা দাবি করেন, তার ভাই সাত বছর ঢাকায় ছিলেন এবং নয় বছর জেল খেটেছেন। দুই বছর আগে তিনি বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, হানিফ বাড়ি আসার পর দিনে আওয়ামী লীগ এবং রাতে নিজস্ব বাহিনী গঠন করে নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন।

সমিতির নামে বাওড় দখল করে মৎস্যজীবীদের বঞ্চিত করে নিজেই মাছ চাষ করতেন তিনি। গতকাল ওই বাওড়ে মাছ ধরার কথা ছিল। বিরোধের কারণে হানিফ তিনবার মাছ ধরার দিনক্ষণ পরিবর্তন করেন। এলাকাবাসীর ধারণা, এ বিরোধের জের ধরেই তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, পিয়ারপুর গ্রামের নিহত রাইসুল ইসলামের মামা কামাল হোসেন জানান, রাইসুল ইসলাম ভালো ছেলে ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন দুই বছর আগে। এরপর বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতেন। তিনি কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না, তা জানা নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

শৈলকূপায় ব্রাশফায়ারে নিহত তিনজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

ময়নাতদন্ত শেষে দাফন; হত্যার মোটিভ উদ্ধারে মাঠে পুলিশ

আপলোড টাইম : ১০:০৯:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্তের পর নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এদিকে ট্রিপল মার্ডারের পর পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে হত্যায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ ও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। তারা হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধারে মাঠে নেমেছে বলে জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।

নিহতরা হলেন-নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক কমান্ডার, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে, অসংখ্য হত্যা মামলার আসামি হানিফ আলী (৫২), তার শ্যালক একই উপজেলার দীরামপুর গ্রামের উম্মাদ আলীর ছেলে লিটন (৩৫) ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের আরজাদ আলীর ছেলে রাইসুল ইসলাম (৪০)। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষরা মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে তাদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। হত্যার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয়ে ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, শুক্রবার রাতে প্রতিপক্ষ বন্দুকধারীরা দুই সহযোগীসহ পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক কমান্ডার হানিফকে গুলি করে হত্যা করে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকার একটি ক্যানালের পাশ থেকে নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনজনের মাথায় গুলির চিহ্ন ছিল। পাশে দুটি মোটরসাইকেল ও নিহতদের ব্যবহৃত হেলমেট পড়ে ছিল। নিহত হানিফ প্রায় দুই ডজন হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন।

এ ঘটনায় গতকাল শৈলকূপা থানা চত্বরে নিহত হানিফের ছোট ভাই, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম এশার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার ভাইকে বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে তিনি মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাতে জানতে পারেন, তার ভাই হানিফ, শ্যালক লিটন ও রাইসুল ইসলাম রাজুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম এশা দাবি করেন, তার ভাই সাত বছর ঢাকায় ছিলেন এবং নয় বছর জেল খেটেছেন। দুই বছর আগে তিনি বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, হানিফ বাড়ি আসার পর দিনে আওয়ামী লীগ এবং রাতে নিজস্ব বাহিনী গঠন করে নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন।

সমিতির নামে বাওড় দখল করে মৎস্যজীবীদের বঞ্চিত করে নিজেই মাছ চাষ করতেন তিনি। গতকাল ওই বাওড়ে মাছ ধরার কথা ছিল। বিরোধের কারণে হানিফ তিনবার মাছ ধরার দিনক্ষণ পরিবর্তন করেন। এলাকাবাসীর ধারণা, এ বিরোধের জের ধরেই তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, পিয়ারপুর গ্রামের নিহত রাইসুল ইসলামের মামা কামাল হোসেন জানান, রাইসুল ইসলাম ভালো ছেলে ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন দুই বছর আগে। এরপর বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতেন। তিনি কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না, তা জানা নেই।