ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

সমীকরণ প্রতিবেদন:
  • আপলোড টাইম : ০৪:৫৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম ক্রমশ বাড়ায় তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি রয়েছে অগ্রাধিকারের তালিকায়। রয়েছে সংস্কারের বিষয়গুলোও। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কর্মসংস্থানের বিষয়েও থাকছে নজর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৭২ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪.১০ শতাংশে উঠেছিল। আগামী অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। তাই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে না।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, খুব প্রয়োজন না পড়লে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে পণ্য সরবরাহ চেইনের সকল স্তরের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেই জোর দিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বিনিময় হারের ওপর চাপ কমিয়ে রিজার্ভ ধরে রাখতে চায় ব্যাংকটি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে সরকারও সমর্থন দিচ্ছে। এ কারণে সরকারের তরফে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা; কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে গত সোমবার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আপাতত তাদের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতির কমিয়ে আনা। তাই এ মুহূর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে খুব বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে তুলে ধরেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগী বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাসহ প্রায় ১০টি ভাতা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বাড়তে পারে। বর্তমানে সারাদেশে ৬০ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসিক ৬০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। মাসিক ৫৫০ টাকা করে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর ৩২ লাখ ৩৪ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৮৫০ টাকা করে।
হিজড়া, বেদে, চা শ্রমিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতা দিচ্ছে সরকার। তাদের ভাতাও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচি ও ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব পাওয়ার পর আগামী এপ্রিল মাসের শুরুতে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় আলোচনার পর কোন খাতে ভাতা কত বাড়ানো হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে ২৬টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪০টি কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১৭.০৬ শতাংশ। অবশ্য এই বরাদ্দের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের পেনশন সুবিধা বাবদ ৩৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সহায়তায় ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা এবং ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ ৩৪২ কোটি টাকা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

আপলোড টাইম : ০৪:৫৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম ক্রমশ বাড়ায় তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি রয়েছে অগ্রাধিকারের তালিকায়। রয়েছে সংস্কারের বিষয়গুলোও। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কর্মসংস্থানের বিষয়েও থাকছে নজর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৭২ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪.১০ শতাংশে উঠেছিল। আগামী অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। তাই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে না।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, খুব প্রয়োজন না পড়লে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে পণ্য সরবরাহ চেইনের সকল স্তরের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেই জোর দিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বিনিময় হারের ওপর চাপ কমিয়ে রিজার্ভ ধরে রাখতে চায় ব্যাংকটি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে সরকারও সমর্থন দিচ্ছে। এ কারণে সরকারের তরফে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা; কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে গত সোমবার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আপাতত তাদের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতির কমিয়ে আনা। তাই এ মুহূর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে খুব বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে তুলে ধরেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগী বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাসহ প্রায় ১০টি ভাতা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বাড়তে পারে। বর্তমানে সারাদেশে ৬০ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসিক ৬০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। মাসিক ৫৫০ টাকা করে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর ৩২ লাখ ৩৪ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৮৫০ টাকা করে।
হিজড়া, বেদে, চা শ্রমিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতা দিচ্ছে সরকার। তাদের ভাতাও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচি ও ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব পাওয়ার পর আগামী এপ্রিল মাসের শুরুতে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় আলোচনার পর কোন খাতে ভাতা কত বাড়ানো হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে ২৬টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪০টি কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১৭.০৬ শতাংশ। অবশ্য এই বরাদ্দের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের পেনশন সুবিধা বাবদ ৩৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সহায়তায় ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা এবং ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ ৩৪২ কোটি টাকা।