আবারও কেরু চত্বরে চারটি শক্তিশালী ককটেল উদ্ধার, নাশকতা চেষ্টার পেছনে কারা?
ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে পরিস্থিতি, আতঙ্কে শ্রমিক-কর্মচারীরা!
একটি পক্ষ নির্বাচন বিলম্বিত করতে অপচেষ্টা করছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ
- আপলোড টাইম : ০৯:০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / ২৬ বার পড়া হয়েছে
এবার চুয়াডাঙ্গার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চত্বরে পাওয়া গেল আরও চারটি ককটেল বোমা। গতকাল রোববার বেলা দুইটার দিকে কেরু চত্বরে যৌথ তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও কেরুজ সিকিউরিটি গার্ড। এ অভিযানেই কেরু ক্যাথলিক গীর্জার পাশে একটি ব্যাগে ৪টি লাল টেপ জড়ানো ককটেল পাওয়া যায়। চার দিনে ৬টি ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় কেরু চিনিকল এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে একটি মহল বলছে, কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন বিলম্বিত করতেই একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে।
দর্শনা কেরুজ সিকিউরিটি অফিসার মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, কেরুজ সিকিউরিটি গার্ড ও ডিবি পুলিশ সকাল থেকে কেরু এলাকায় চিরুনী অভিযান পরিচালনা করছিল। এসময় দর্শনা কেরুজ ক্যাথলিক গীর্জার পাশে নফর আলীর অফিসের পিছনে একটি পলিথিনের ব্যাগে ৪টি বোমা সদৃশ বস্তু দেখতে পাই। এরপর বোমাগুলোর চারপাশ ফিতা দিয়ে ঘিরে ফেলে। বোমাগুলো দেখার পর থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, ডিবি পুলিশ, কেরুজ সিকিউরিটি র্গাড বোমাটি পাহারা করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার কেরুজ ক্লাবের পাশে লাল টেপ দিয়ে মোড়ানো একটি শক্তিশালী ককটেল ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার কেরুজ ক্লাবের সামনে পুকুর ধারে কালো টেপ মোড়ানো আরও একটি শক্তিশালী ককটেল পাওয়া যায়। সেগুলো র্যাব নিষ্ক্রিয় করেছে।’
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদ তিতুমীর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একটি এবং এক দিনের ব্যবধানে শনিবার আরও একটি ককটেল বোমা উদ্ধার করা হয়। তাই আমাদের ধারণা ছিল আরও ককটেল থাকতে পারে। এ জন্য আমরা রোববার দুপুরে যৌথ তল্লাশি অভিযান শুরু করি। এই তল্লাশি অভিযানে আমরা দর্শনা কেরু ক্যাথলিক গীর্জার পাশে একটি ব্যাগে ৪টি লাল টেপ জড়ানো ককটেল পেয়েছি।’
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে বা কারা রেখে গেছে তদন্ত চলছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আপাতত সেগুলো পাহারায় রাখা হয়েছে। রাজশাহীতে র্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এটি নিষ্ক্রিয় করবে। কেরু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আগেই একটি মামলা দায়ের করেছিল। আমরা গভীর তদন্ত করছি।’
র্যাব বলছে ককটেলগুলো বেশ শক্তিশালী। কেরু চত্বরে পাওয়া আগের দুটি ককটেলও নিষ্ক্রিয় করেছে রাজশাহী র্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট। রাজশাহী র্যাব-৫ এর উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আশরাফুল আলম এই ককটেল নিষ্ক্রিয় অভিযানে নেতৃত্বে দেন। তার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ককটেলগুলো খুবই শক্তিশালী। বিষ্ফোরণের সময় বিকট শব্দ হয়েছিল। এর ওপরে রাখা ইটগুলো চুরমার হয়েছিল। সরাসরি এটা দিয়ে কাউকে টার্গেট করলে তার মৃত্যু হতে পারে। পাশে লাগলেও হাত-পা উড়ে যাবে।’
এদিকে, মাত্র চার দিনে কেরু চত্বরে পাওয়া গেল শক্তিশালী ৬টি ককটেল। তিনবার ককটেল-বোমা উদ্ধার ও দুইবার নিষ্ক্রিয়করণে বিষ্ফোরণের বিকট শব্দে কেরুর শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। একদিকে আতঙ্ক, আরেকদিকে কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়েও রয়েছে দুশ্চিন্তা। গুঞ্জন রয়েছে কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে একটি মহল এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একজন কর্মচারীকে বদলির আদেশ দেয়াকে কেন্দ্র করে কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয় কয়েকদিন আগেই। ইতোমধ্যে ককটেল পাওয়ার এই ঘটনায় কেরুজ নির্বাচন কতটা বিলম্বিত হতে পারে, সেই প্রশ্ন শ্রমিকদের। আবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যেও আছে দুশ্চিন্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরুর একজন শ্রমিক বলেন, ‘দ্রুতই কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন। এটি সামনে রেখে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। তৃতীয় একটি পক্ষ এই ঘটনার পেছনে থাকতে পারে। সম্প্রতি কেরু চত্বরে বহিরাগতদের আনাগোনা এবং প্রশাসনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। সম্ভবত একটি মহল নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সম্ভাব্য প্রার্থী বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতি ভিন্ন। তবে নির্বাচন সময়মতো হওয়ায় উচিত ছিল। এই যে কে বা কারা ককটেল রেখেছে, এখানে নাশকতার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা কারা সেটাই এখনো পুলিশ বের করতে পারেনি। অথচ এই কারণে পেছাতে পারে নির্বাচন। এতে কারা লাভবান হচ্ছে, সেটা ঘাটলেই এর পেছনের রহস্য বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে, কেরু প্রশাসনের ভাষ্য, শ্রমিকদের দুশ্চিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ককটেল পাওয়ার ঘটনার সাথে নির্বাচন পেছাতে পারে বলেই মনে করেন কেরু প্রশাসন। পরিস্থিতি শান্ত না হলে নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই বলেও জানাচ্ছেন তারা। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) ও কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘কেরু প্রশাসন থেকে নির্বাচন স্থগিত করেছে। আপাতত আমার কোনো কার্যক্রম নেই। পুনরায় নির্বাচন চালু না হলে আমরা কিছু করার নেই।’
এ বিষয়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আল ফারুক অমর শরীফ গালিব বলেন, ‘প্রথম দুটি বোমা উদ্ধারের ঘটনায় থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তাধীন থাকায় এর বাইরে কিছু বলার সুযোগ নেই। আর কেন বা কারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে তা আমাদের জানার কথাও নয়। বহিরাগত প্রবেশ নিয়ে ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আল ফারুক অমর শরীফ গালিব, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই কাজ করছি। বহিরাগত বা এরকম কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেরুর নির্বাচন নিয়ে সবসময়ই একটু জমজমাট পরিস্থিতি থাকে। কী কারণে কেন এগুলো হচ্ছে, আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ নিয়েও আসেননি। একজন শ্রমিকের বদলিকে কেন্দ্র করে সাময়িক একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিল, সবার সম্মতিতে নির্বাচন সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল। এখন এ রকম একটি পরিস্থিতি, এতোগুলো ককটেলও পাওয়া গেল। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা, আপনি তো বুঝতেছেন আমাদের জানমালের নিরাপত্তা সবার আগে। কী হইতেছে, আমরা দেখতেছি। সবাই আমাদের সাথে একমত হবে। কেন হচ্ছে, এটা আগে দেখি, তারপর নির্বাচন। নির্বাচন আপাতত আরও পেছাতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো নির্বাচন করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা লাগে।’