ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নীতিমালা বহির্ভূত দায়িত্ব দেয়ার অভিযোগ

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি শিক্ষকদের, অধ্যক্ষের কক্ষে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৫:২১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ও ক্লপসিবল গেটে তালা দেন কলেজের শিক্ষক—কর্মচারীরা। এছাড়াও এর প্রতিবাদে কলেজটির শিক্ষক—কর্মচারীরা আজ বুধবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। তাছাড়া দায়িত্ব পুনরায় বণ্টন না করলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শিক্ষকরা। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যিনি বিধি মোতাবেক যোগ্য, তিনিই দায়িত্ব পাবেন। এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি কে হবেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের একাংশ জানান, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আবু রাশেদ ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি. (আজ বুধবার) তারিখে অবসরে যাবেন। অবসরজনিত অধ্যক্ষের শূন্যতা পূরণে কলেজ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষকদের আপত্তিতে পরিচালনা পরিষদের রেজ্যুলেশন গতকাল মঙ্গলবার তৈরি করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষকদের দাবি, কলেজে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র বিএম শাখায় বাংলার সহকারী অধ্যাপক মোসা. নাজনীন আরা খাতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ্য। বিধি অনুযায়ী তার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেতে নেই কোনো বাধা।
সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) মোসা. নাজনীন আরা খাতুন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী আমি যোগদানে জ্যেষ্ঠ, জন্ম তারিখ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞতার দিকসহ সকল বিষয়ে জ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাংলাদেশে এতগুলো তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল, সেখানে সেই বৈষম্যবিরোধী রক্তক্ষয়ী আন্দোলনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বৈষম্যের আশ্রয় নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
নাজনীন আরা খাতুন আরও বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ১১.২৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়/উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা/কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাষক (সাধারণ), জ্যেষ্ঠ প্রভাষক (সাধারণ), সহকারী অধ্যাপক (সাধারণ)—এর পূর্বের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বিধি মোতাবেক গণনাযোগ্য হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি মাধ্যমিক—৩ শাখা সচিবালায় ঢাকার সর্বশেষ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪—এর পরিপত্রের ‘গ’ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ হলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি শিক্ষক/জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/ সহকারী অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক/ জ্যেষ্ঠতম জৈষ্ঠ প্রভাষক/ জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। একই পরিপত্রের ‘ঘ’ ধারায় বর্ণিত আছে, জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক/ জ্যেষ্ঠতম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম এমপিওভুক্তির তারিখ, একই তারিখে এমপিওভুক্ত হলে যোগদানের তারিখ এবং যোগদানের তারিখ একই হলে বয়সের দিক থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষককে জ্যেষ্ঠতম গণ্য করতে হবে। একইভাবে একই বয়সের দুজন হলে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষককে জ্যেষ্ঠতম গণ্য করতে হবে। অথচ আমাকে ডিঙিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে শামীমা সুলতানাকে (জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদার্থবিজ্ঞান) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা খুবই পীড়াদায়ক।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ পরিচালনা পরিষদের এডহক কমিটির সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যিনি বিধি মোতাবেক যোগ্য তিনিই দায়িত্ব পাবেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নীতিমালা বহির্ভূত দায়িত্ব দেয়ার অভিযোগ

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি শিক্ষকদের, অধ্যক্ষের কক্ষে তালা

আপলোড টাইম : ০৫:২১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ও ক্লপসিবল গেটে তালা দেন কলেজের শিক্ষক—কর্মচারীরা। এছাড়াও এর প্রতিবাদে কলেজটির শিক্ষক—কর্মচারীরা আজ বুধবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। তাছাড়া দায়িত্ব পুনরায় বণ্টন না করলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শিক্ষকরা। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যিনি বিধি মোতাবেক যোগ্য, তিনিই দায়িত্ব পাবেন। এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি কে হবেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের একাংশ জানান, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আবু রাশেদ ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি. (আজ বুধবার) তারিখে অবসরে যাবেন। অবসরজনিত অধ্যক্ষের শূন্যতা পূরণে কলেজ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষকদের আপত্তিতে পরিচালনা পরিষদের রেজ্যুলেশন গতকাল মঙ্গলবার তৈরি করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষকদের দাবি, কলেজে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র বিএম শাখায় বাংলার সহকারী অধ্যাপক মোসা. নাজনীন আরা খাতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ্য। বিধি অনুযায়ী তার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেতে নেই কোনো বাধা।
সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) মোসা. নাজনীন আরা খাতুন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী আমি যোগদানে জ্যেষ্ঠ, জন্ম তারিখ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞতার দিকসহ সকল বিষয়ে জ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাংলাদেশে এতগুলো তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল, সেখানে সেই বৈষম্যবিরোধী রক্তক্ষয়ী আন্দোলনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বৈষম্যের আশ্রয় নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
নাজনীন আরা খাতুন আরও বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ১১.২৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়/উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা/কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাষক (সাধারণ), জ্যেষ্ঠ প্রভাষক (সাধারণ), সহকারী অধ্যাপক (সাধারণ)—এর পূর্বের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বিধি মোতাবেক গণনাযোগ্য হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি মাধ্যমিক—৩ শাখা সচিবালায় ঢাকার সর্বশেষ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪—এর পরিপত্রের ‘গ’ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ হলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি শিক্ষক/জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/ সহকারী অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক/ জ্যেষ্ঠতম জৈষ্ঠ প্রভাষক/ জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। একই পরিপত্রের ‘ঘ’ ধারায় বর্ণিত আছে, জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক/ জ্যেষ্ঠতম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম এমপিওভুক্তির তারিখ, একই তারিখে এমপিওভুক্ত হলে যোগদানের তারিখ এবং যোগদানের তারিখ একই হলে বয়সের দিক থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষককে জ্যেষ্ঠতম গণ্য করতে হবে। একইভাবে একই বয়সের দুজন হলে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষককে জ্যেষ্ঠতম গণ্য করতে হবে। অথচ আমাকে ডিঙিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে শামীমা সুলতানাকে (জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদার্থবিজ্ঞান) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা খুবই পীড়াদায়ক।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ পরিচালনা পরিষদের এডহক কমিটির সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যিনি বিধি মোতাবেক যোগ্য তিনিই দায়িত্ব পাবেন।’