ইপেপার । আজ সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

এসপি গলিতে আর দেখা যাবে না সুলতান মামাকে

জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ, এলাকায় শোকের ছায়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৫:১৭:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ১৬১ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার শহরের অতিপরিচিত মুখ ও সকলের ভালোবাসার পাত্র ছিলেন সুলতান আলম। বিনয়ী ব্যবহার, ভালোবাসা আর সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব তাঁকে এলাকার মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই চেনা মুখ আর দেখা যাবে না, চুয়াডাঙ্গা শহরের কেউ তাকে সুলতান মামা বলে ডাকবে না, চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট মোড়ের এসপি গলিতে গেলে আর সুলতান মামাকে পাওয়া যাবে না। মাত্র ৬২ বছর বয়সে সুলতান আলম গতকাল সোমবার সকাল ছয়টায় রাজশাহী শহরে তার ভাগ্নি ফারহা তাজের বাড়িতে চিকিৎসা নিতে অবস্থানকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ডায়াবেটিস ও কিডনিজনিত বিভিন্ন রোগে কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। প্রয়াত সৈয়দ সুলতানের ছেলে চিরকুমার সুলতান আলম শুধু পরিবারের নয়, ছিলেন পুরো মহল্লার একজন অভিভাবকের মতো। তাঁর মত্যুতে এলাকাবাসী হারিয়েছে এক আপনজনকে। নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাজশাহীর সিআরএম হাসপাতালে নেয়া হয়। একসপ্তাহ সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে চিকিৎসক তাকে ছাড়পত্র দেন। সে দিনই হাসপাতাল থেকে তাকে রাজশাহী শহরে ভাগ্নির বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থানকালে গতকাল সকালে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।
এদিকে, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় তার মরদেহ চুয়াডাঙ্গার এসপি গলিতে পৌঁছালে শেষবারের মতো তাকে দেখতে ভিড় জমায় স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। চারপাশে তখন এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সুলতান আলমের প্রয়াণে পুরো কোর্ট মোড় এলাকাজুড়ে নেমে আসে নীরবতা, যেন শূন্য হয়ে গেছে পরিচিত এক আঙিনা। ভারি হয়ে ওঠে সকলের মন।

কোর্ট মোড়ের চা-দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সুলতান মামা ছিলেন আমাদের সবার কাছে ভরসার জায়গা। যেকোনো সমস্যায় তার কাছে গেলে নিরাশ হতে হতো না। আজ মনে হচ্ছে কোর্ট মোড়ের একটা বড় অংশ হারিয়ে গেল। এই কোর্ট মোড় এলাকার বেশিরভাগ মানুষই তাকে মামা বলে ডাকতেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন বিশেষ একজন মানুষ। সবাই তাকে অত্যন্ত পছন্দ এবং শ্রদ্ধা করতেন। তার চলে যাওয়া আমাদের মধ্যে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।’
সুলতান আলমের একজন প্রবীণ প্রতিবেশী আব্দুস সামাদ আবেগভরে বলেন, ‘তিনি শুধু একজন মানুষ নন, ছিলেন আশ্রয়। আমাদের সুখ-দুঃখের সাথী। আজ থেকে কোর্ট মোড় যেন আর আগের মতো থাকবে না। কানে আসবে না সুলতানের কণ্ঠস্বর।’
এদিকে, আসরের নামাজের পর চুয়াডাঙ্গা কোর্ট জামে মসজিদে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জানাজা শেষে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। দাফন শেষে জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান প্রাঙ্গণে সুলতান আলমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন।
মাত্র একদিন আগের সুলতান আলম আজ প্রয়াত। তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গল্পগুলো হয়ত ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাবে। কিন্তু তার রেখে যাওয়া ভালোবাসা ও স্মৃতিগুলো থেকে যাবে চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোক জানিয়েছেন, দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপনসহ সমীকরণ পরিবার।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

এসপি গলিতে আর দেখা যাবে না সুলতান মামাকে

জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ, এলাকায় শোকের ছায়া

আপলোড টাইম : ০৫:১৭:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার শহরের অতিপরিচিত মুখ ও সকলের ভালোবাসার পাত্র ছিলেন সুলতান আলম। বিনয়ী ব্যবহার, ভালোবাসা আর সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব তাঁকে এলাকার মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই চেনা মুখ আর দেখা যাবে না, চুয়াডাঙ্গা শহরের কেউ তাকে সুলতান মামা বলে ডাকবে না, চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট মোড়ের এসপি গলিতে গেলে আর সুলতান মামাকে পাওয়া যাবে না। মাত্র ৬২ বছর বয়সে সুলতান আলম গতকাল সোমবার সকাল ছয়টায় রাজশাহী শহরে তার ভাগ্নি ফারহা তাজের বাড়িতে চিকিৎসা নিতে অবস্থানকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ডায়াবেটিস ও কিডনিজনিত বিভিন্ন রোগে কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। প্রয়াত সৈয়দ সুলতানের ছেলে চিরকুমার সুলতান আলম শুধু পরিবারের নয়, ছিলেন পুরো মহল্লার একজন অভিভাবকের মতো। তাঁর মত্যুতে এলাকাবাসী হারিয়েছে এক আপনজনকে। নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাজশাহীর সিআরএম হাসপাতালে নেয়া হয়। একসপ্তাহ সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে চিকিৎসক তাকে ছাড়পত্র দেন। সে দিনই হাসপাতাল থেকে তাকে রাজশাহী শহরে ভাগ্নির বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থানকালে গতকাল সকালে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।
এদিকে, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় তার মরদেহ চুয়াডাঙ্গার এসপি গলিতে পৌঁছালে শেষবারের মতো তাকে দেখতে ভিড় জমায় স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। চারপাশে তখন এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সুলতান আলমের প্রয়াণে পুরো কোর্ট মোড় এলাকাজুড়ে নেমে আসে নীরবতা, যেন শূন্য হয়ে গেছে পরিচিত এক আঙিনা। ভারি হয়ে ওঠে সকলের মন।

কোর্ট মোড়ের চা-দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সুলতান মামা ছিলেন আমাদের সবার কাছে ভরসার জায়গা। যেকোনো সমস্যায় তার কাছে গেলে নিরাশ হতে হতো না। আজ মনে হচ্ছে কোর্ট মোড়ের একটা বড় অংশ হারিয়ে গেল। এই কোর্ট মোড় এলাকার বেশিরভাগ মানুষই তাকে মামা বলে ডাকতেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন বিশেষ একজন মানুষ। সবাই তাকে অত্যন্ত পছন্দ এবং শ্রদ্ধা করতেন। তার চলে যাওয়া আমাদের মধ্যে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।’
সুলতান আলমের একজন প্রবীণ প্রতিবেশী আব্দুস সামাদ আবেগভরে বলেন, ‘তিনি শুধু একজন মানুষ নন, ছিলেন আশ্রয়। আমাদের সুখ-দুঃখের সাথী। আজ থেকে কোর্ট মোড় যেন আর আগের মতো থাকবে না। কানে আসবে না সুলতানের কণ্ঠস্বর।’
এদিকে, আসরের নামাজের পর চুয়াডাঙ্গা কোর্ট জামে মসজিদে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জানাজা শেষে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। দাফন শেষে জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান প্রাঙ্গণে সুলতান আলমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন।
মাত্র একদিন আগের সুলতান আলম আজ প্রয়াত। তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গল্পগুলো হয়ত ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাবে। কিন্তু তার রেখে যাওয়া ভালোবাসা ও স্মৃতিগুলো থেকে যাবে চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোক জানিয়েছেন, দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপনসহ সমীকরণ পরিবার।