ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
বিদায়ী ভাষণে ড. আব্দুল আজিজ- মনুষ্যত্ববোধ না জাগলে ডিগ্রি-সমস্ত অর্জন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজের বিদায় সংবর্ধনা

ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানালেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩৬:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ। হাসিমাখা মুখ, সকলের সাথে দারুণ আচরণ আর সৃজনশীল প্রতিভায় তিনি সকলের প্রিয়, পরিচিত মুখ। তাঁর কর্মযজ্ঞ শুধু বিভাগে নয়, পুরো কলেজজুড়েই ছিল অসাধারণ। প্রত্যেক আয়োজনকে মেধা ও শ্রম দিয়ে কলেজের গণ্ডি পার করে নিয়ে যেতেন সারাদেশের পরিমণ্ডলে। সকলের প্রিয় সেই শিক্ষক বদলি হয়েছেন ঢাকার সুনামধন্য বাংলা কলেজে। তাই কলেজজুড়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়। গতকাল সোমবার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রিয় শিক্ষককে বদলিজনিত বিদায় সংবর্ধনা জানায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগ পরিবার। বাংলা বিভাগের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সী আবু সাইফের সভাপতিত্বে বিদায়ী অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিদায়ী বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ।
বিদায়ী ভাষণে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এখানে আমার মনে হয়েছিল, কাজ করতে পারব। এই কারণে যে, বাংলা বিভাগের সহকর্মী, আমার ভাই আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমার সকল সহকর্মী দক্ষ, প্রাজ্ঞ, অনেক জ্ঞানী। আমি তাদের থেকে শিখেছি। তখন আমি ভেবেছিলাম, কিছু করা যায়। হোস্টেলে থাকাকালে ছাত্রদের সাথে অনেক মিশতে পেরেছি। সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় এই কলেজের বাংলা বিভাগ এক স্থানে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে একটি দাবি সবসময় করেছি, ভালো মানুষ হওয়ার দাবি। যদি ভালো মানুষ না হও, মনুষ্যত্ববোধ যদি না জাগে, তাহলে এই ডিগ্রি এই সমস্ত অর্জন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। সব ক্ষেত্রেই সব জায়গাতেই, মানুষ হওয়া খুবই প্রয়োজন। যদি এখানে ঘাটতি থাকে, তাহলে সব জায়গায় ঘাটতি হবে।’
অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভালো মানুষ না হলে ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। আমি চেষ্টা করেছি, যেটুকু দেওয়ার, সেটুকু দিতে। একজন শিক্ষক শুধু শেখায় না, একজন শিক্ষক সবসময় তার শিক্ষার্থীদের কাছে শেখে। চারপাশের কঠিন কাজের মধ্যে সবথেকে কঠিন কাজ হলো একজন ভালো শিক্ষক হওয়া। আমার শিক্ষকের বিদায় বেলার কথা আমিও আজকে বলব, আমি হয়ত ভালো শিক্ষক ছিলাম না। তবে আমি অনেক বড় মাপের শিক্ষকের ছাত্র ছিলাম।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. একেএম সাইফুর রশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফারজানা কেতকী, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. সফিকুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক মারুফা ইয়াসমিন, প্রভাষক আজিম হোসেন ও মাসুদ আলম। এছাড়াও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রিয় শিক্ষকের বিদায় বেলায় শিক্ষার্থীরা তুলে দেন নানা উপহার। বাংলা বিভাগের না হয়েও ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধায় ছুটে আসেন দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর নিজস্ব প্রতিবেদক, জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকা ও ডেইলি মর্নিং গ্লোরি পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি মেহেরাব্বিন সানভী। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করে প্রিয় শিক্ষকের থেকে নেন দোয়া।
বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. একেএম সাইফুর রশিদ বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে এসে আমার মনে হয়েছে, আমার শিক্ষার্থী আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে। তাদের যে আন্তরিকতা, সমস্ত জিনিস আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অভিভূত করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ড. মো. আব্দুল আজিজ কথা দিয়ে কথা রাখেনি। সে বলেছিল বা আমি শুনেছিলাম, আমি যতদিন আছি, সে এই কলেজে ততদিন থাকবে। সে থাকেনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কি সেখানে ভালো থাকবে। সে আমাকে বলেছিল, ‘আমি স্বর্গ থেকে মর্তে নেমে আসলাম।’ আমি কয়েকবার তাকে বলেছি, তোমাকে শিক্ষার্থীরা খুঁজে বেড়াবে। মনে মনে কষ্ট পাবে। আমিও তাকে খুঁজব। সে শুধু এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মন জয়ই করেনি, ইন্টার, ডিগ্রি এবং অনান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।’
প্রফেসর ড. একেএম সাইফুর রশিদ আরও বলেন, ‘পিঠা উৎসব, বর্ষবরণ উৎসব আর যা কিছু উৎসব, সেই উৎসবগুলো নিখুতভাবে, কোনো রকম ভুলক্রটিহীনভাবে সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য যত মেধা দরকার, পরিশ্রম দরকার, তিনি তা দিয়েছেন। তিনি অনন্য উচ্চতায় নিশ্চয় পৌঁছে যাবেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বিদায়ী ভাষণে ড. আব্দুল আজিজ- মনুষ্যত্ববোধ না জাগলে ডিগ্রি-সমস্ত অর্জন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজের বিদায় সংবর্ধনা

ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানালেন শিক্ষার্থীরা

আপলোড টাইম : ০৫:৩৬:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ। হাসিমাখা মুখ, সকলের সাথে দারুণ আচরণ আর সৃজনশীল প্রতিভায় তিনি সকলের প্রিয়, পরিচিত মুখ। তাঁর কর্মযজ্ঞ শুধু বিভাগে নয়, পুরো কলেজজুড়েই ছিল অসাধারণ। প্রত্যেক আয়োজনকে মেধা ও শ্রম দিয়ে কলেজের গণ্ডি পার করে নিয়ে যেতেন সারাদেশের পরিমণ্ডলে। সকলের প্রিয় সেই শিক্ষক বদলি হয়েছেন ঢাকার সুনামধন্য বাংলা কলেজে। তাই কলেজজুড়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়। গতকাল সোমবার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রিয় শিক্ষককে বদলিজনিত বিদায় সংবর্ধনা জানায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগ পরিবার। বাংলা বিভাগের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সী আবু সাইফের সভাপতিত্বে বিদায়ী অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিদায়ী বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ।
বিদায়ী ভাষণে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এখানে আমার মনে হয়েছিল, কাজ করতে পারব। এই কারণে যে, বাংলা বিভাগের সহকর্মী, আমার ভাই আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমার সকল সহকর্মী দক্ষ, প্রাজ্ঞ, অনেক জ্ঞানী। আমি তাদের থেকে শিখেছি। তখন আমি ভেবেছিলাম, কিছু করা যায়। হোস্টেলে থাকাকালে ছাত্রদের সাথে অনেক মিশতে পেরেছি। সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় এই কলেজের বাংলা বিভাগ এক স্থানে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে একটি দাবি সবসময় করেছি, ভালো মানুষ হওয়ার দাবি। যদি ভালো মানুষ না হও, মনুষ্যত্ববোধ যদি না জাগে, তাহলে এই ডিগ্রি এই সমস্ত অর্জন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। সব ক্ষেত্রেই সব জায়গাতেই, মানুষ হওয়া খুবই প্রয়োজন। যদি এখানে ঘাটতি থাকে, তাহলে সব জায়গায় ঘাটতি হবে।’
অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভালো মানুষ না হলে ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। আমি চেষ্টা করেছি, যেটুকু দেওয়ার, সেটুকু দিতে। একজন শিক্ষক শুধু শেখায় না, একজন শিক্ষক সবসময় তার শিক্ষার্থীদের কাছে শেখে। চারপাশের কঠিন কাজের মধ্যে সবথেকে কঠিন কাজ হলো একজন ভালো শিক্ষক হওয়া। আমার শিক্ষকের বিদায় বেলার কথা আমিও আজকে বলব, আমি হয়ত ভালো শিক্ষক ছিলাম না। তবে আমি অনেক বড় মাপের শিক্ষকের ছাত্র ছিলাম।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. একেএম সাইফুর রশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফারজানা কেতকী, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. সফিকুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক মারুফা ইয়াসমিন, প্রভাষক আজিম হোসেন ও মাসুদ আলম। এছাড়াও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রিয় শিক্ষকের বিদায় বেলায় শিক্ষার্থীরা তুলে দেন নানা উপহার। বাংলা বিভাগের না হয়েও ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধায় ছুটে আসেন দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর নিজস্ব প্রতিবেদক, জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকা ও ডেইলি মর্নিং গ্লোরি পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি মেহেরাব্বিন সানভী। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করে প্রিয় শিক্ষকের থেকে নেন দোয়া।
বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. একেএম সাইফুর রশিদ বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে এসে আমার মনে হয়েছে, আমার শিক্ষার্থী আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে। তাদের যে আন্তরিকতা, সমস্ত জিনিস আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অভিভূত করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ড. মো. আব্দুল আজিজ কথা দিয়ে কথা রাখেনি। সে বলেছিল বা আমি শুনেছিলাম, আমি যতদিন আছি, সে এই কলেজে ততদিন থাকবে। সে থাকেনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কি সেখানে ভালো থাকবে। সে আমাকে বলেছিল, ‘আমি স্বর্গ থেকে মর্তে নেমে আসলাম।’ আমি কয়েকবার তাকে বলেছি, তোমাকে শিক্ষার্থীরা খুঁজে বেড়াবে। মনে মনে কষ্ট পাবে। আমিও তাকে খুঁজব। সে শুধু এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মন জয়ই করেনি, ইন্টার, ডিগ্রি এবং অনান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।’
প্রফেসর ড. একেএম সাইফুর রশিদ আরও বলেন, ‘পিঠা উৎসব, বর্ষবরণ উৎসব আর যা কিছু উৎসব, সেই উৎসবগুলো নিখুতভাবে, কোনো রকম ভুলক্রটিহীনভাবে সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য যত মেধা দরকার, পরিশ্রম দরকার, তিনি তা দিয়েছেন। তিনি অনন্য উচ্চতায় নিশ্চয় পৌঁছে যাবেন।’