ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতা লের চিত্র বদল!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:০০:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিত্র বদলে গেছে। হাসপাতালের সব বিভাগেই যেন পরিবর্তনের ছোঁয়া। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান যোগদানের পর থেকে হাসপাতালটির সেবার মান বদলাতে থাকে। সরকারি ওষুধ নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে দামি ইনজেকশনগুলো মিলছে হাসপাতালে। ভালো খাবারের পাশাপাশি হাসপাতাল আঙিনায় বসানো হয়েছে ফুলের টব। নতুন করে ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা রোগীদের পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ মিলছে সার্বিক বিষয়ে সেবা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ সুশীল সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ঝিনাইদহ পৌর এলাকার হায়দায় আলী নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনেক আগে ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। সে সময় সেবা পাওয়ার জন্য ডাক্তার, নার্স এবং কর্মচারীদের কাছে বারবার নিবেদন করেও সেবা ছিল অধরা। কিন্তু এখন দেখছি হাসপাতালের সব খানেই পরিবর্তন। ১১ প্রকার ওষুধ আমার বাইরে থেকে কিনতে হয়নি।’
মিঠুন শিকদার নামের এক রোগী জানান, হাসপাতালের অনেক অনিয়ম এখন প্রকাশ্যে এসেছে। যা রোগীসহ অনেকেই অবগত। যার ফলে চুরি, সিন্ডিকেটসহ সকল অনিয়ম এখন বন্ধ করেছেন নতুন তত্ত্বাবধায়ক। আমি সেবার মান বৃদ্ধি হওয়ায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে মোট ডাক্তারের প্রয়োজন ৬৪ জনের। তার মধ্যে ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। ৩৯ জন ডাক্তার দ্বারা হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াটা ডাক্তারদের পক্ষে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাসহ সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং অন্যান্য পদে পদসংখ্যা ৯১ জন। তার মধ্যে ৭১ জন কর্মরত, বাকি ২৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও ৩য়, ৪র্থ শ্রেণি ও আউটসোর্সিংয়ে অনেক পদ শূন্য রয়েছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে ঝিনাইদহ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীতকরণ করা হয়। তারপর থেকে সরকারের পর্যাপ্ত বাজেট থাকলেও নানা অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট নতুন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান যোগদানের পর সকল সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়। বর্তমানে হাসপাতালটির আঙিনায় বসানো হয়েছে ফুলের টব। স্যাপটিক ট্যাংক, টয়লেট পরিষ্কার করা, বিল্ডিংয়ের গ্লাস লাগানো, খুলে পড়া টাইলস বসানো, মেইন গেইট লাগানো, খাবারের মান উন্নত, নষ্ট হওয়া সিসি ক্যামেরা মেরামত এর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিকিৎসা রেজিস্ট্রার তৈরি করা হয়েছে। সব চিকিৎসা রেজিস্ট্রারে মাধ্যমে তারা প্রয়োজন হলে ওষুধ সংগ্রহ করবেন, যা তাতে লিপিবদ্ধ থাকবে। অন্যথায় স্বজনপ্রীতি করে ওষুধ সংগ্রহ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও মেডিসিন, সার্জারি এবং গাইনি বিভাগের প্রত্যেক ওয়ার্ড ইনচার্জকে প্রতি ছয় মাস পর এক্সচেঞ্জ করা হবে। যার ফলে সিস্টাররা সকল বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতিপূর্বে প্রত্যেক ওয়ার্ড ইনচার্জকে বছরে ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ দেওয়া লাগতো তত্ত্বাবধায়ককে। মোট ১০টি ওয়ার্ড থেকে দুই লাখ করে টাকা তোলা হতো। যা দিয়ে এক একজন ইনচার্জ তাদের ইচ্ছামতো এক এক ওয়ার্ড পরিচালনা করতেন। ওষুধ ও ইনজেকশন থেকে শুরু করে রোগীদের পালস্ বুঝে সেবা দিতেন ওয়ার্ড ইনচার্জরা। যা নতুন তত্ত্বাবধায়ক এসে বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে প্যাথলজি বিভাগে নির্ভুল রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজি এবং ব্লাড ব্যাংক আলাদা করা হয়েছে। যার ফলে ডোপ টেস্টে এখন অনিয়ম করার সুযোগ নেই। নতুন করে অর্থনৈতিক তদারকি কমিটি করা হয়েছে, কেবিন রাজনীতি মুক্ত করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দ্বারা দালাল অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অর্থপেডিক্স ওটিতে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। মেশিনের অভাবে ডেন্টাল ইউনিটে দাঁতের চিকিৎসা বন্ধ ছিল, যা চালু করা হয়েছে। নাক, কান ও গলার অপারেশন যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা বন্ধ ছিল সেটিও চালু করা হয়েছে। সুপীয় পানির জন্য ৭টি আরও ফিল্টার বসানো হয়েছে। বাৎসরিক গড়ে রোগী রেফার্ডের পার্সেন্ট ৩ থেকে কমিয়ে এক পাসেন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও কনসালটেন্ট ও নার্সিং সুপারভাইজার এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের সান্ধ্য রাউন্ড নিয়মিত করা হয়েছে। রোগীদের খাবারের জন্য নতুন রান্নাঘর পরিবর্তন করা হচ্ছে। সিনিয়র ডাক্তাররা রাতে ডিউটি পালন করছেন।
হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স মিথিলা খাতুন জানান, তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান যোগদানের পর থেকে সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছি। রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য যে মেডিসিন ও ইনস্টুমেন্ট আগে আসতো তা রোগীদের সঠিকভাবে সাপ্লাই দিতে পারতাম না, এখন তা সম্ভব হয়েছে। সব থেকে দামি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন এক গ্রাম মেগাপাইম, এক গ্রাম মেরোপেনাম রোগী প্রতি তিন বার করে দিতে পারছি। রোগীর বেড ছিট, বালিশের কাভার পর্যাপ্ত সাপ¬াই দেওয়া হচ্ছে।
জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড বয় সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ব্যবহৃত সুতা, ভায়োডিন, ক্রিম, টলি, নিডিল, নতুল হুইল চেয়ারসহ যাবতীয় ইকুইপমেন্ট এখন পর্যাপ্ত পাচ্ছি। সেবা দিতে আমাদের কোনো কিছুর ঘাটতি নেই এখন। ফার্মেসি বিভাগের ওয়ার্ড বয় সাকিব আহমেদ তন্ময় জানান, আগে সরকারি স্টাফরা সট স্লিপ ব্যবহার করে ওষুধ তুলতে পারতো। যার ফলে অনেক ওষুধ হিসাবের বাইরে চলে যেত।
অপারেশন থিয়েটারের ওটি বয় মেহেদী হাসান জানান, ওটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিপূর্বে রোগীর অপারেশন করার আগে অতিরিক্ত ওষুধ লেখা হতো, যা ব্যবহারের পর ফেরত দেওয়া হত না। কিন্তু এখন অপারেশন শেষে কোনো ওষুধ থেকে গেলে সেটি ফেরত দেওয়া হয়। অপারেশন সংক্রান্ত জীবাণুনাশক ওষুধ যেমন ভায়োডিন, হেক্সিসল, হাইড্রজেনপারআক্সাইড, ইউজলসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রয়োজনবাদে রোগীকে ফেরত দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রত্যেকটা অপারেশন সিরিয়াল অনুযায়ী করা হয়।
দ্রুত হাসপাতালটি বদলে যাওয়ার বিষয়ে আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে হাসপাতালটি ছিল জর্জরিত। আমি যোগদানের পর থেকে সকলকে নিয়ম মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছি। আগে হাতে রিসিভ লিখে টাকার লেনদেন হতো। বর্তমানে কম্পিউটার অপ্টিমাইজ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং স্টাফরা সঠিক টাইমে আসবে এবং তাদের ডিউটি শেষ করে হাসপাতাল ত্যাগ করবেন। এছাড়াও হাসপাতাল সংক্রান্ত যে কোন অপরাধের সাথে জড়িত হলে যেই অপরাধী হোক না কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতা লের চিত্র বদল!

আপলোড টাইম : ০৭:০০:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিত্র বদলে গেছে। হাসপাতালের সব বিভাগেই যেন পরিবর্তনের ছোঁয়া। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান যোগদানের পর থেকে হাসপাতালটির সেবার মান বদলাতে থাকে। সরকারি ওষুধ নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে দামি ইনজেকশনগুলো মিলছে হাসপাতালে। ভালো খাবারের পাশাপাশি হাসপাতাল আঙিনায় বসানো হয়েছে ফুলের টব। নতুন করে ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা রোগীদের পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ মিলছে সার্বিক বিষয়ে সেবা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ সুশীল সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ঝিনাইদহ পৌর এলাকার হায়দায় আলী নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনেক আগে ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। সে সময় সেবা পাওয়ার জন্য ডাক্তার, নার্স এবং কর্মচারীদের কাছে বারবার নিবেদন করেও সেবা ছিল অধরা। কিন্তু এখন দেখছি হাসপাতালের সব খানেই পরিবর্তন। ১১ প্রকার ওষুধ আমার বাইরে থেকে কিনতে হয়নি।’
মিঠুন শিকদার নামের এক রোগী জানান, হাসপাতালের অনেক অনিয়ম এখন প্রকাশ্যে এসেছে। যা রোগীসহ অনেকেই অবগত। যার ফলে চুরি, সিন্ডিকেটসহ সকল অনিয়ম এখন বন্ধ করেছেন নতুন তত্ত্বাবধায়ক। আমি সেবার মান বৃদ্ধি হওয়ায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে মোট ডাক্তারের প্রয়োজন ৬৪ জনের। তার মধ্যে ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। ৩৯ জন ডাক্তার দ্বারা হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াটা ডাক্তারদের পক্ষে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাসহ সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং অন্যান্য পদে পদসংখ্যা ৯১ জন। তার মধ্যে ৭১ জন কর্মরত, বাকি ২৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও ৩য়, ৪র্থ শ্রেণি ও আউটসোর্সিংয়ে অনেক পদ শূন্য রয়েছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে ঝিনাইদহ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীতকরণ করা হয়। তারপর থেকে সরকারের পর্যাপ্ত বাজেট থাকলেও নানা অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট নতুন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান যোগদানের পর সকল সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়। বর্তমানে হাসপাতালটির আঙিনায় বসানো হয়েছে ফুলের টব। স্যাপটিক ট্যাংক, টয়লেট পরিষ্কার করা, বিল্ডিংয়ের গ্লাস লাগানো, খুলে পড়া টাইলস বসানো, মেইন গেইট লাগানো, খাবারের মান উন্নত, নষ্ট হওয়া সিসি ক্যামেরা মেরামত এর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিকিৎসা রেজিস্ট্রার তৈরি করা হয়েছে। সব চিকিৎসা রেজিস্ট্রারে মাধ্যমে তারা প্রয়োজন হলে ওষুধ সংগ্রহ করবেন, যা তাতে লিপিবদ্ধ থাকবে। অন্যথায় স্বজনপ্রীতি করে ওষুধ সংগ্রহ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও মেডিসিন, সার্জারি এবং গাইনি বিভাগের প্রত্যেক ওয়ার্ড ইনচার্জকে প্রতি ছয় মাস পর এক্সচেঞ্জ করা হবে। যার ফলে সিস্টাররা সকল বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতিপূর্বে প্রত্যেক ওয়ার্ড ইনচার্জকে বছরে ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ দেওয়া লাগতো তত্ত্বাবধায়ককে। মোট ১০টি ওয়ার্ড থেকে দুই লাখ করে টাকা তোলা হতো। যা দিয়ে এক একজন ইনচার্জ তাদের ইচ্ছামতো এক এক ওয়ার্ড পরিচালনা করতেন। ওষুধ ও ইনজেকশন থেকে শুরু করে রোগীদের পালস্ বুঝে সেবা দিতেন ওয়ার্ড ইনচার্জরা। যা নতুন তত্ত্বাবধায়ক এসে বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে প্যাথলজি বিভাগে নির্ভুল রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজি এবং ব্লাড ব্যাংক আলাদা করা হয়েছে। যার ফলে ডোপ টেস্টে এখন অনিয়ম করার সুযোগ নেই। নতুন করে অর্থনৈতিক তদারকি কমিটি করা হয়েছে, কেবিন রাজনীতি মুক্ত করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দ্বারা দালাল অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অর্থপেডিক্স ওটিতে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। মেশিনের অভাবে ডেন্টাল ইউনিটে দাঁতের চিকিৎসা বন্ধ ছিল, যা চালু করা হয়েছে। নাক, কান ও গলার অপারেশন যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা বন্ধ ছিল সেটিও চালু করা হয়েছে। সুপীয় পানির জন্য ৭টি আরও ফিল্টার বসানো হয়েছে। বাৎসরিক গড়ে রোগী রেফার্ডের পার্সেন্ট ৩ থেকে কমিয়ে এক পাসেন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও কনসালটেন্ট ও নার্সিং সুপারভাইজার এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের সান্ধ্য রাউন্ড নিয়মিত করা হয়েছে। রোগীদের খাবারের জন্য নতুন রান্নাঘর পরিবর্তন করা হচ্ছে। সিনিয়র ডাক্তাররা রাতে ডিউটি পালন করছেন।
হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স মিথিলা খাতুন জানান, তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান যোগদানের পর থেকে সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছি। রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য যে মেডিসিন ও ইনস্টুমেন্ট আগে আসতো তা রোগীদের সঠিকভাবে সাপ্লাই দিতে পারতাম না, এখন তা সম্ভব হয়েছে। সব থেকে দামি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন এক গ্রাম মেগাপাইম, এক গ্রাম মেরোপেনাম রোগী প্রতি তিন বার করে দিতে পারছি। রোগীর বেড ছিট, বালিশের কাভার পর্যাপ্ত সাপ¬াই দেওয়া হচ্ছে।
জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড বয় সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ব্যবহৃত সুতা, ভায়োডিন, ক্রিম, টলি, নিডিল, নতুল হুইল চেয়ারসহ যাবতীয় ইকুইপমেন্ট এখন পর্যাপ্ত পাচ্ছি। সেবা দিতে আমাদের কোনো কিছুর ঘাটতি নেই এখন। ফার্মেসি বিভাগের ওয়ার্ড বয় সাকিব আহমেদ তন্ময় জানান, আগে সরকারি স্টাফরা সট স্লিপ ব্যবহার করে ওষুধ তুলতে পারতো। যার ফলে অনেক ওষুধ হিসাবের বাইরে চলে যেত।
অপারেশন থিয়েটারের ওটি বয় মেহেদী হাসান জানান, ওটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিপূর্বে রোগীর অপারেশন করার আগে অতিরিক্ত ওষুধ লেখা হতো, যা ব্যবহারের পর ফেরত দেওয়া হত না। কিন্তু এখন অপারেশন শেষে কোনো ওষুধ থেকে গেলে সেটি ফেরত দেওয়া হয়। অপারেশন সংক্রান্ত জীবাণুনাশক ওষুধ যেমন ভায়োডিন, হেক্সিসল, হাইড্রজেনপারআক্সাইড, ইউজলসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রয়োজনবাদে রোগীকে ফেরত দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রত্যেকটা অপারেশন সিরিয়াল অনুযায়ী করা হয়।
দ্রুত হাসপাতালটি বদলে যাওয়ার বিষয়ে আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে হাসপাতালটি ছিল জর্জরিত। আমি যোগদানের পর থেকে সকলকে নিয়ম মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছি। আগে হাতে রিসিভ লিখে টাকার লেনদেন হতো। বর্তমানে কম্পিউটার অপ্টিমাইজ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং স্টাফরা সঠিক টাইমে আসবে এবং তাদের ডিউটি শেষ করে হাসপাতাল ত্যাগ করবেন। এছাড়াও হাসপাতাল সংক্রান্ত যে কোন অপরাধের সাথে জড়িত হলে যেই অপরাধী হোক না কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।