দর্শনায় সুমাইয়া ধর্ষণ ও হত্যার ৫ বছর পূর্ণ
প্রতিশ্রুতি দিলেও সহযোগিতা করেনি লোকমোর্চা, নেয়নি খোঁজখবরও
- আপলোড টাইম : ০৬:৪১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / ১৬ বার পড়া হয়েছে
দর্শনায় সুমাইয়া খাতুন (৭) ধর্ষণ ও হত্যার ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে মামলায় কারো কাছ থেকে কোনো আইনি সহায়তা পায়নি হতদরিদ্র পরিবারটি। বিগত ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দর্শনার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের নাসিরুল ইসলামের কন্যা সুমাইয়া খাতুন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। এসময় একই গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে মোমিনুল ইসলাম (২০) সুমাইয়া খাতুনকে ফুঁসলিয়ে বাড়ির পাশে মাঠে শিম বানের নিচে নিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে বলে পুলিশ আলমত দেখে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের শতশত মানুষ ধর্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ওই দিন বিকেলে খবর পেয়ে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চা নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রামবাসীর মানবন্ধনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লোকমোর্চার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে আইনি সহায়তায় নানা প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে সংগঠনটি দীর্ঘ ৫ বছরে সুমাইয়ার পরিবারকে আজ পর্যন্ত দেখা বা খোঁজখবর নেয়নি। কোনো প্রকার আইনি বা অন্যান্য সহযোগিতা করেনি বলে সুমাইয়ার মা পলি খাতুন প্রতিবেদককে জানান।
সুমাইয়ার পরিবার ও স্থানীয় লোকজন বলেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন তাদের কার্যক্রমের অপকর্ম ঠেকাতে লোকমোর্চাকে শুধুমাত্র ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এ লোকমোর্চার মূলত কাজ হলো শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যক্রম পরিচালনা করা। এ লোকমোর্চা কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। লোকমোর্চা মূলত ঘটনার শুরুতে তোড়জোড় দেখা গেলেও পরবর্তীতে তেমন কোনো খোঁজখবর রাখে না। কেউ কেউ বলছেন, লোকমোর্চা শুধমাত্র ইলেক্ট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রচার-প্রচারণা পেতে এবং এনজিওটি লোকমোর্চাকে তাদের অপকর্ম ঢাকতে ব্যবহার করে আসছে।
পারকৃষ্ণপুর গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সরেজমিনে সুমাইয়া খাতুন ধর্ষণ ও হত্যা মামলা খোঁজখবর নিতে গেল সুমাইয়ার মা পলি খাতুন জানান, ‘আজ অবদি এ মামলার আইনি সহায়তা পাইনি। সুমাইয়া আমার কন্যা একমাত্র কন্যা। সুমাইয়ার জন্য আমি কোর্টে কোর্টে ৫ আজ বছর বেড়াচ্ছি। আজও আমি ন্যায়বিচার পাইনি।’
লোকমোর্চা কোনো সহযোগিতা করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষে সরকারি কেস চলে, কিন্তু আমি আমার কেস নিজে একজন উকিল ধরে নিজের নিজেই চালাই। আমাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। চার আনাও কারো কাছ থেকে সাহায্য পাইনি। এখন কেস শেষ প্রান্তে, এখন কী হবে, রায় জানি না। সাক্ষী সব শেষ। ১২ তারিখে ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষী দিলে আমার কেসে নাকি সাক্ষী শেষ হয়ে যাবে। আমি তার ফাঁসি না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষ্যান্ত দেব না। আমি চাই তার ফাঁসি হোক। আমার মেয়ে যেভাবে কবরে শুয়ে আছে, তাকেও এ দুনিয়া ছাড়তে হবে। আমার এটাই দাবি। আমার ছোট মেয়ের বিচার আমি চাই চাই।’
এছাড়া পলি খাতুন বলেন, ‘আমি গত ৩১ জানুয়ারি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক কিতাব আলীর কাছে বললাম ভাই সুমাইয়ার ব্যাপারে আমার কোনো সহযোগিতা করা যাবে? তখন কিতাব আলী বললেন, আমি ভেবে দেখব শনিবার বাইরে যাচ্ছি। ফিরে দেখবো কী করা যায়। আর কোনো খোঁজ নেই তার।’
এ বিষয় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের লোকমোর্চার সাথে সংশ্লিষ্ট কামরুজ্জামান যুদ্ধের নিকট সুমাইয়া ধর্ষণ ও হত্যা বিচার সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সেদিন পত্রিকায় দেখলাম কেসের বিষয় কী যেন লিখেছে। আমি একটা মিটিংয়ে আছি, পরে বলছি বলে ফোনটি কেটে দেন।’