ইপেপার । আজ সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

‘শয়তানের সন্ধানে’ ২৪ ঘণ্টা, গ্রেপ্তার ১৩০৮

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৫:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে

‘সেন্ট্রাল কম্যান্ড সেন্টার’ গতকাল সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু

‘ডেভিল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতির আশা

সারা দেশে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৭৪ জনকে। অন্যদিকে সারা দেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১ হাজার ৩৪ জনকে।

জানা গেছে, ডেভিল অর্থ হচ্ছে শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ডেভিল হান্ট, যার ইংরেজি শাব্দিক অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে, দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনতে বুঝানো হয়েছে।

অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হবে আশা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সব বাহিনীর সমন্বয়ে ‘সেন্ট্রাল কম্যান্ড সেন্টার’ সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু করবে। গতকাল বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সেন্ট্রাল কম্যান্ড সেন্টার গতকাল সন্ধ্যা থেকে কাজ শুরু করবে। এর ফলে খুব দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা উন্নতি হবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, এটা সমন্বয় করবে হোম মিনিস্ট্রি। এখানে প্রত্যেকটা বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন। কন্টিনিউয়াসলি এটা মনিটরিং হবে। গতকালকে তো মাত্র শুরু হবে, যখন পুরোপুরি শুরু করব তখন আপনারাই সেখানে গিয়ে জানতে পারবেন যে তারা কী কী কাজ করছে। 

‘ডেভিল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে:

‘ডেভিল’ যতদিন শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত অপারেশন ডেভিল হান্ট চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে তাদের টার্গেট করে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলবে। গাজীপুরে যারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে তাদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাড়াতাড়ি বাকিদেরও আনা হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অপরাধ দেশবাসীর জানা আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সন্ত্রাসীরা দেশকে অকার্যকরের উদ্দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। এর মধ্যে তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশে কয়েকটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে। তাই দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এ অপারেশন শুরু করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর যৌথভাবে পরিচালিত এ অপারেশনের প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে সারা দেশে একযোগে অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানা যায়, এ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি কারা করছে এবং এ সন্ত্রাসীরা কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেগুলো শনাক্ত করা। শনাক্তের পর দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে না পারে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং উন্নত করার লক্ষ্যে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কাজ করবে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে। পরে গোয়েন্দারা তথ্য দিলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা ৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ফেব্রুয়ারি অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাস নির্মূলের এ অপারেশন পরিচালনা করবে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাহিনীগুলো গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে একযোগে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র?্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রাথমিক ধাপে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এ  অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সূত্রে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট ঘোষণার পর সবগুলো বাহিনী একসঙ্গে সমন্বিতভাবে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। সব গোয়েন্দা তথ্য একসঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট টার্গেটকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অপারেশন ডেভিল হান্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ অভিযানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ এ অভিযানের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পুলিশের সব ইউনিক একযোগে সারা দেশে এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

‘শয়তানের সন্ধানে’ ২৪ ঘণ্টা, গ্রেপ্তার ১৩০৮

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স

আপলোড টাইম : ০৯:৫৫:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘সেন্ট্রাল কম্যান্ড সেন্টার’ গতকাল সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু

‘ডেভিল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতির আশা

সারা দেশে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৭৪ জনকে। অন্যদিকে সারা দেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১ হাজার ৩৪ জনকে।

জানা গেছে, ডেভিল অর্থ হচ্ছে শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ডেভিল হান্ট, যার ইংরেজি শাব্দিক অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে, দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনতে বুঝানো হয়েছে।

অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হবে আশা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সব বাহিনীর সমন্বয়ে ‘সেন্ট্রাল কম্যান্ড সেন্টার’ সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু করবে। গতকাল বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সেন্ট্রাল কম্যান্ড সেন্টার গতকাল সন্ধ্যা থেকে কাজ শুরু করবে। এর ফলে খুব দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা উন্নতি হবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, এটা সমন্বয় করবে হোম মিনিস্ট্রি। এখানে প্রত্যেকটা বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন। কন্টিনিউয়াসলি এটা মনিটরিং হবে। গতকালকে তো মাত্র শুরু হবে, যখন পুরোপুরি শুরু করব তখন আপনারাই সেখানে গিয়ে জানতে পারবেন যে তারা কী কী কাজ করছে। 

‘ডেভিল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে:

‘ডেভিল’ যতদিন শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত অপারেশন ডেভিল হান্ট চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে তাদের টার্গেট করে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলবে। গাজীপুরে যারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে তাদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাড়াতাড়ি বাকিদেরও আনা হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অপরাধ দেশবাসীর জানা আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সন্ত্রাসীরা দেশকে অকার্যকরের উদ্দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। এর মধ্যে তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশে কয়েকটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে। তাই দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এ অপারেশন শুরু করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর যৌথভাবে পরিচালিত এ অপারেশনের প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে সারা দেশে একযোগে অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানা যায়, এ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি কারা করছে এবং এ সন্ত্রাসীরা কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেগুলো শনাক্ত করা। শনাক্তের পর দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে না পারে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং উন্নত করার লক্ষ্যে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কাজ করবে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে। পরে গোয়েন্দারা তথ্য দিলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা ৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ফেব্রুয়ারি অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাস নির্মূলের এ অপারেশন পরিচালনা করবে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাহিনীগুলো গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে একযোগে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র?্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রাথমিক ধাপে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এ  অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সূত্রে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট ঘোষণার পর সবগুলো বাহিনী একসঙ্গে সমন্বিতভাবে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। সব গোয়েন্দা তথ্য একসঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট টার্গেটকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অপারেশন ডেভিল হান্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ অভিযানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ এ অভিযানের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পুলিশের সব ইউনিক একযোগে সারা দেশে এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।