ইপেপার । আজ সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

জালিয়াতির জায়গায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়; আ’লীগের দলীয় দুর্নীতির প্রতীক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৭:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৭২ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে সরকারের কাছ থেকে অবৈধভাবে বরাদ্দ নেয়া জমিতে। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জায়গাটি জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। অবৈধভাবে দখল করা ওই জায়গায় এখন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ১০ তলা ভবন। জায়গাটির স্থায়ী দলিল করা হয়েছে দলীয় প্রধান ও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নামে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ আয়তনের মূল্যবান এ জায়গা দখলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক শীর্ষ নেতা। জড়িত ছিলেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন আমলারাও। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও গণপূর্ত অধিদফতরের সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের দখলে থাকা রাজধানীর গুলিস্তানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শত কোটি টাকা মূল্যের জায়গাটি উদ্ধারে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। অনিয়ম, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে ওই কমিটি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মালিক ছিলেন একজন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তান চলে যান তিনি। দেশ স্বাধীন হলে ওই ব্যবসায়ীর খাজনা ও কর বকেয়া থাকায় জায়গাটি ‘অনিবাসী সম্পদ’ ঘোষণা করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদফতরের আওতায় নেয়া হয়। অবৈধ দখলের মাধ্যমে ১৯৮১ সালে দলের প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা। ১৯৮১ সালে দলীয় কার্যক্রম শুরু করলেও ১৯৯৭ সালে এটি বরাদ্দ নিতে একটি চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু হাসিনার শাসনামলের প্রথম দফায় বরাদ্দের কার্যক্রম অনিষ্পন্ন থেকে যায়। তা সত্ত্বেও গুলিস্তানের ওই ভবনটি আওয়ামী লীগ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে থাকে। ২০১১ সালের দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই জমিটি ঢাকা জেলা প্রশাসন ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করে। পাশাপাশি জমির বরাদ্দ চেয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেশ করা হয়। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জেলা প্রশাসন আওয়ামী লীগের অনুকূলে জমি বরাদ্দের প্রস্তাব করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। জেলা প্রশাসনের এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৩ মার্চ বরাদ্দপত্র জারি করে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্র পেয়ে ২০১২ সালের ১২ জুন ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক শেখ হাসিনার নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত দলিল করে দেন। মজার ব্যাপার হলো- গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জমি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের অনুমোদন দেয়। অথচ ভূমি মন্ত্রণালয় জমির মালিকই নয়। সঙ্গত কারণে অনায়াসে বলা যায়, ভুয়া দলিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সুরম্য কেন্দ্রীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছে। শুধু দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়, সারা দেশেই এভাবে জায়গা-জমি দখল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আসলে দখল সংস্কৃতি দলটির মজ্জাগত স্বভাব। আমরা মনে করি, ঢাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়টি ফ্যাসিবাদে বিশ্বাসী এই দলের দলীয় প্রতীকরূপে দেশের মানুষের মানসপটে দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়ে থাকবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জালিয়াতির জায়গায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়; আ’লীগের দলীয় দুর্নীতির প্রতীক

আপলোড টাইম : ০৯:২৭:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে সরকারের কাছ থেকে অবৈধভাবে বরাদ্দ নেয়া জমিতে। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জায়গাটি জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। অবৈধভাবে দখল করা ওই জায়গায় এখন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ১০ তলা ভবন। জায়গাটির স্থায়ী দলিল করা হয়েছে দলীয় প্রধান ও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নামে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ আয়তনের মূল্যবান এ জায়গা দখলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক শীর্ষ নেতা। জড়িত ছিলেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন আমলারাও। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও গণপূর্ত অধিদফতরের সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের দখলে থাকা রাজধানীর গুলিস্তানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শত কোটি টাকা মূল্যের জায়গাটি উদ্ধারে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। অনিয়ম, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে ওই কমিটি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মালিক ছিলেন একজন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তান চলে যান তিনি। দেশ স্বাধীন হলে ওই ব্যবসায়ীর খাজনা ও কর বকেয়া থাকায় জায়গাটি ‘অনিবাসী সম্পদ’ ঘোষণা করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদফতরের আওতায় নেয়া হয়। অবৈধ দখলের মাধ্যমে ১৯৮১ সালে দলের প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা। ১৯৮১ সালে দলীয় কার্যক্রম শুরু করলেও ১৯৯৭ সালে এটি বরাদ্দ নিতে একটি চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু হাসিনার শাসনামলের প্রথম দফায় বরাদ্দের কার্যক্রম অনিষ্পন্ন থেকে যায়। তা সত্ত্বেও গুলিস্তানের ওই ভবনটি আওয়ামী লীগ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে থাকে। ২০১১ সালের দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই জমিটি ঢাকা জেলা প্রশাসন ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করে। পাশাপাশি জমির বরাদ্দ চেয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেশ করা হয়। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জেলা প্রশাসন আওয়ামী লীগের অনুকূলে জমি বরাদ্দের প্রস্তাব করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। জেলা প্রশাসনের এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৩ মার্চ বরাদ্দপত্র জারি করে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্র পেয়ে ২০১২ সালের ১২ জুন ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক শেখ হাসিনার নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত দলিল করে দেন। মজার ব্যাপার হলো- গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জমি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের অনুমোদন দেয়। অথচ ভূমি মন্ত্রণালয় জমির মালিকই নয়। সঙ্গত কারণে অনায়াসে বলা যায়, ভুয়া দলিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সুরম্য কেন্দ্রীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছে। শুধু দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়, সারা দেশেই এভাবে জায়গা-জমি দখল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আসলে দখল সংস্কৃতি দলটির মজ্জাগত স্বভাব। আমরা মনে করি, ঢাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়টি ফ্যাসিবাদে বিশ্বাসী এই দলের দলীয় প্রতীকরূপে দেশের মানুষের মানসপটে দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়ে থাকবে।