ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় মিথ্যা মামলা থেকে দুই সাংবাদিক খালাস

সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহানকে সহকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ৪৭ বার পড়া হয়েছে

অবশেষে মিথ্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস হলেন ঢাকা টাইমসের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকার চিফ রিপোর্টার আহসান আলম এবং মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাইফ জাহান। গতকাল মঙ্গলবার খুলনা বিভাগীয় সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মুমিনুন নেছা বেগম তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করেন। এই মামলায় আদালত বাদী ও ৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ রায় দেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালে স্থানীয় একটি দৈনিক ও একটি অনলাইনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এমএসআর প্রজেক্টে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওষুধ ক্রয়ে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়। মূলত ২০২০ সালের জুনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ চার উপজেলার জন্য মহামারির সময় জরুরি ওষুধ, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও সার্জিক্যাল মালামাল ক্রয়ে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দের টাকা আসার পর চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীরকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন। ওই বোর্ড স্থানীয়ভাবে ঠিকাদারের মাধ্যমে কেনাকাটা শেষে সবকিছু বুঝে নিয়ে বিল পরিশোধের জন্য জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠায়। এই কেনাকাটায় চরম অনিয়ম হয়েছে বলে ২০২০ সালের ২৮ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। সাড়ে চার কোটি টাকার কোনো ওষুধই কেনা হয়নি।

ওই প্রতিবেদনের জের ধরে ২০২০ সালের ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর বাদী হয়ে দুই সংবাদকর্মীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা করেন। সেই মামলাটিই খুলনা বিভাগীয় সাইবার ক্রাইম আদালতে দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহানকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মুমিনুন নেছা বেগম।
মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মোফাজ্জেল আলম বন্দ বলেন, ‘মামলাটিতে বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ শুনানি করেছে। বাদী এবং ৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। পরিশেষে মঙ্গলবার বিবাদীদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।’

এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ভোগান্তির পর বেকসুর খালাস পাওয়ায় সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে হঠাৎ তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান সহকর্মীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, সাংবাদিক শাহ আলম সনি, ইসলাম রাকিব, হুসাইন মালিক, মেহেরাব্বিন সানভী, পলাশ উদ্দীন, এএইচ কামরুল প্রমুখ।

অপর দিকে, মামলা থেকে বেকসুর খালাস হয়ে সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে পাঁচ বছর আমাদেরকে ভোগান্তির মধ্যে রাখা হয়েছিল। এই মামলার ভোগান্তি আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, এই মামলা থেকে আমরা বেকসুর খালাস পাবো। আমরা জনগণের কল্যাণে অনিয়ম তুলে ধরেছিলাম সংবাদ প্রকাশ করে। জনস্বার্থেই আমরা কাজ করি। আমরা কোনো অন্যায় করিনি। তবুও আমাদের কত দিক থেকে হয়রানি করা হয়েছে। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া, আমাদের এই ঝামেলা আল্লাহ উদ্ধার করেছেন। এবং সম্মানের সাথেই উদ্ধার করেছেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় মিথ্যা মামলা থেকে দুই সাংবাদিক খালাস

সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহানকে সহকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা

আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অবশেষে মিথ্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস হলেন ঢাকা টাইমসের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকার চিফ রিপোর্টার আহসান আলম এবং মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাইফ জাহান। গতকাল মঙ্গলবার খুলনা বিভাগীয় সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মুমিনুন নেছা বেগম তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করেন। এই মামলায় আদালত বাদী ও ৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ রায় দেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালে স্থানীয় একটি দৈনিক ও একটি অনলাইনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এমএসআর প্রজেক্টে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওষুধ ক্রয়ে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়। মূলত ২০২০ সালের জুনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ চার উপজেলার জন্য মহামারির সময় জরুরি ওষুধ, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও সার্জিক্যাল মালামাল ক্রয়ে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দের টাকা আসার পর চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীরকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন। ওই বোর্ড স্থানীয়ভাবে ঠিকাদারের মাধ্যমে কেনাকাটা শেষে সবকিছু বুঝে নিয়ে বিল পরিশোধের জন্য জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠায়। এই কেনাকাটায় চরম অনিয়ম হয়েছে বলে ২০২০ সালের ২৮ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। সাড়ে চার কোটি টাকার কোনো ওষুধই কেনা হয়নি।

ওই প্রতিবেদনের জের ধরে ২০২০ সালের ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর বাদী হয়ে দুই সংবাদকর্মীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা করেন। সেই মামলাটিই খুলনা বিভাগীয় সাইবার ক্রাইম আদালতে দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহানকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মুমিনুন নেছা বেগম।
মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মোফাজ্জেল আলম বন্দ বলেন, ‘মামলাটিতে বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ শুনানি করেছে। বাদী এবং ৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। পরিশেষে মঙ্গলবার বিবাদীদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।’

এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ভোগান্তির পর বেকসুর খালাস পাওয়ায় সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে হঠাৎ তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান সহকর্মীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, সাংবাদিক শাহ আলম সনি, ইসলাম রাকিব, হুসাইন মালিক, মেহেরাব্বিন সানভী, পলাশ উদ্দীন, এএইচ কামরুল প্রমুখ।

অপর দিকে, মামলা থেকে বেকসুর খালাস হয়ে সাংবাদিক আহসান আলম ও সাইফ জাহান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে পাঁচ বছর আমাদেরকে ভোগান্তির মধ্যে রাখা হয়েছিল। এই মামলার ভোগান্তি আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, এই মামলা থেকে আমরা বেকসুর খালাস পাবো। আমরা জনগণের কল্যাণে অনিয়ম তুলে ধরেছিলাম সংবাদ প্রকাশ করে। জনস্বার্থেই আমরা কাজ করি। আমরা কোনো অন্যায় করিনি। তবুও আমাদের কত দিক থেকে হয়রানি করা হয়েছে। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া, আমাদের এই ঝামেলা আল্লাহ উদ্ধার করেছেন। এবং সম্মানের সাথেই উদ্ধার করেছেন।’