আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মার মুক্তি ও ঐক্য কামনা
- আপলোড টাইম : ১০:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / ১৭ বার পড়া হয়েছে
দেশ-জাতি তথা বিশ্বমানবের মুক্তি-কল্যাণ ও ঐক্য কামনায় লাখো মুসলিস্নর অংশগ্রহণে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম অংশের আয়োজন। আখেরি মোনাজাতের সময় ‘আমিন, আলস্নাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর। এ সময় আলস্নাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সমবেত লাখো মুসলিস্ন আকুতি জানান। পমানাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আলস্নাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখো মুসলিস্ন প্রার্থনা করেন।
ইজতেমা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্য শত শত নারী আশপাশের মিল-কারখানা ও বাসাবাড়ির ভেতর মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের তাশকিল কামরার পাশে প্রতিবন্ধীদের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় দুই শতাধিক প্রতিবন্ধী বিশ্ব মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। এদিকে প্রথম দফার আয়োজনে ৫ মুসলিস্নর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জোবায়ের। শূরায়ে নেজামীর শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা কেফায়েত উলস্নাহ জানান, সকাল ৯টায় শুরু হয়ে ৯টা বেজে ৩৫ মিনিটে মোনাজাত শেষ হয়। এর আগে ভোর ৪টা থেকে সারাদেশের মুসুলিস্নরা ইজতেমা মাঠে জমায়েত হতে শুরু করেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ভোর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মুসলিস্নদের ঢল নামে। ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এই পুরো পথ হেঁটেই মুসলিস্নদের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আসতে দেখা গেছে।
গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) জানায়, শনিবার মধ্যরাত থেকে টঙ্গী-কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত এবং আবদুলস্নাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ী হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়।
তাবলিগের শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের প্রথম ধাপের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে রোববার সকাল থেকে বাড়ি ফিরছেন মুসলিস্নরা। কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউবা বাড়ি ফিরছেন হেঁটে। এতে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীর ও আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে মানুষের ভিড়। যান চলাচলে দেখা দিয়েছে ধীরগতি।
আখেরি মোনাজাত শেষে একসঙ্গে লাখ লাখ মানুষ ফিরতে শুরু করায় সর্বত্র মহাজটের সৃষ্টি হয়। টঙ্গী স্টেশনে ফিরতি যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমাণ ট্রেনগুলোতে উঠতে মানুষের জীবনবাজির লড়াই ছিল উদ্বেগজনক। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে ও দরজা-জানালায় ঝুলে হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে দেখা যায়। একপর্যায়ে মানুষের জন্য ট্রেন দেখা যাচ্ছিল না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরতি মুসলিস্নদের বিড়ম্বনা ও কষ্টের সীমা ছিল না। তিন-চার দিন ধরে টঙ্গীতে জমায়েত হওয়া মুসলিস্নরা আখেরি মোনাজাতের পর একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে চাইলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।
হাজার হাজার বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর ও নারী মাইলের পর মাইল হেঁটে মোনাজাতে শরিক হন এবং একইভাবে ফিরতে শুরু করেন। মোনাজাতের পর সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তবে অধিকাংশ যানবাহন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক মুসলিস্ন।
আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিস্নরা টঙ্গী অভিমুখে ছুটতে থাকেন শুক্রবার থেকেই। বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও কেবলমাত্র আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসলিস্নরা বাস, ট্রাক, পিকআপ, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমারে করে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে নানা ঝক্কি-ঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখী হন।