শত বছরের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তমাল গাছ
- আপলোড টাইম : ০৯:৫৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / ১৬ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর ইউনিয়নের বলরামনগরে কয়েকশত বছরের পুরাতন ও ঐতিহাসিক স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তমালগাছ। প্রায় দেড় শতক জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা তমাল গাছটির বয়স কত তা সঠিকভাবে জানেন না কেউ। স্থানীয়রা প্রজন্মের পর প্রজম্ম ধরে দেখে আসছেন গাছটি। যা নিয়ে এলাকায় রয়েছে অলৌকিক নানান গল্প ও কাহিনি।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে, বিরাট নগরের শাসক দরবেশ শাহ্ সিকান্দারের পুত্র ইতিহাসের সারাজাগানো চরিত্র গাজী। গাজীর সঙ্গী কালু সিকান্দারের পোষ্য পুত্র ছিলেন। কালু গাজীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং সর্বত্র তাকে অনুসরণ করতেন। গাজীর সাথে ছাপাই নগরের সাভ্রান্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর দেখা হয়। গাজী ছিলেন মুসলমান আর চম্পাবর্তী ছিলেন হিন্দু। চম্পাবর্তীর প্রেমে মজে গাজী ভুলে গেলেন তিনি মুসলমান, অন্যদিকে চম্পাবতীও ভুলে গেলেন তিনি হিন্দু রাজার মেয়ে। ধর্মের অভেদ্য দেয়াল টপকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলো। তাদের মিলনের মাঝে দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়াল সামাজিক ও ধর্মীয় বাঁধা। চম্পাবর্তীর পিতা মুকুট রাজা তাঁর সেনাপতিকে হুকুম দিলেন গাজী ও কালুকে শায়েস্তা করতে। ঘোর যুদ্ধে মুকুট রায়ের সেনাপতি দক্ষিণী রায় পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গাজীর অনুসারী হয়।
পৌরনিক কাহিনীর বিশাল অংশ জুড়ে গাজী-কালু ও চম্পাবর্তীর প্রেমের কাহিনি রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলার বারোবাজারে গাজী-কালূ ও চম্পাবতীর মাজারের সাথে দক্ষক্ষণা রায়ের মাজার আছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুকুট রাজা ঝিনাইদহ, কোটচাঁদপুর, বারোবাজারের পূর্ব এলাকা ও বেনাপোল অঞ্চলের প্রতাপশালী রাজা ছিলেন। অন্যত্র তিনি রামচন্দ্র, শ্রীরাম বলে পরিচিত ছিল। মুকুট রাজার চারটি বাড়ি ছিল। যেগুলো হলো- ঝিনাইদহের বাড়িবাথান, বারোবাজারের ছাপাইনগর (বর্তমানে বাদুরগাছা), কোটচাঁদপুরের জয়দিয়া বাওড়ের বলরামনগর ও বেনাপোলের কাগজপুরে। মুকুট রাজার বিশাল বহুল রাজপ্রসাদ ছিল বলরামনগরে। জয়দিয়া ব্ওারের পাড়ের এই বাড়ির সামনেই রয়েছে ঐতিহাসিক তমলা গাছটি। কয়েক প্রজন্ম ধরে ঠিকে থাকা ইতিহাসের অমর কীর্তি তলাম গাছকে ঘিরে রয়েছে নানান লৌকিক কাহিনি।
জনশ্রুতি আছে মুকুট রাজা নিজ হাতে বাড়ির আঙিনাতে রোপণ করেছিলেন এই তমাল গাছ। যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে এখানে দুই দিনব্যাপী ওরশ অনুষ্ঠিত বলে স্থানীয়রা জানান। প্রতাপশালী মুকুট রাজার হাতে লাগানো তমাল গাছটি ঠিকে থাকলেও বর্তমানে রাজবাড়িটি পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিদিন দূর-দূরন্ত থেকে মানুষ আসে ঐতিহাসিক এই তমাল গাছটি দেখতে।
বলরামনগরের জাহিদ হোসেন নামে একজন জানান, তার গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরাও এই গাছ সম্পর্ক তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছেন। ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নবীছদ্দিন মন্ডল বলেন, আমরা ছোট বেলাতে রাজবাড়ির ভাঙ্গা অংশ দেখেছি। আর গাছটা তখনও এমনই ছিল। তিনি আরও বলেন, গাছটি বর্তমানে গ্রামের মিয়াদের জমিতে রয়েছে। অমঙ্গল হওয়ার ভয়ে কেউ গাছটি কাটে না। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে গাছটি দেখতে।
সাগর হোসেন নামে একজন বলেন, এই গাছে যখন ফুল ফোটে তখন প্রায় এক কিলোমিটার দুর থেকে সুগন্ধ পাওয়া যায়। আর পুরো গ্রাম জুড়ে সুভাশিত হয়। তবে এই গাছে কোনো ফল হয় না। সিতারা রানী নামের এক বৃদ্ধা মহিলা বলেন, কালের সাক্ষী এই গাছটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ ও এর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারলে নতুন প্রজন্ম শিকরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। স্থানীয়রা এই গাছটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করার জোর দাবি জানান।