চুয়াডাঙ্গার শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির জনসভায় নেতা-কর্মীদের ঢল
ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়, এটি মানুষের সেবা করার সুযোগ- শরীফ
- আপলোড টাইম : ০৩:২৭:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / ৯ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ সোহরাওয়ার্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণে শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল চারটায় এই জনসভায় নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ।
সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের শুরুতে তিনি বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণরা জীবন বাজি রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার থেকে মুক্তি লাভ করেছি, গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের নতুন করে সাহস জোগায়। আমরা যদি এই আন্দোলন ব্যর্থ করি, তবে শহিদদের আত্মা আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই আগামী দিনের সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘মনোনয়ন যেই পাক, তার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ভুলে গিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’
এসময় তিনি বিগত স্বৈরাচার সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘বিগত স্বৈরশাসক হাসিনার আমলে দিনের ভোট রাতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার সুযোগ এসেছে, আপনার ভোট আপনি দেবেন, যাকে খুশি তাকে দেবেন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, জনগণ সঠিক প্রতিনিধি বেছে নেবে। সেই প্রতিনিধি হতে হবে জনগণের আস্থাভাজন, দলের নীতি ও আদর্শে অবিচল।’
শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘যদি আপনারা মনে করেন, সকল ফ্যাসিস্টের পতন হয়ে গেছে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ এখন আপনাদের দলের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়, এটি মানুষের সেবা করার সুযোগ।’
তিনি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট নেতাদের গ্লানি নিজেদের কাঁধে তুলে নেওয়া যাবে না। আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি। এই ত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হবে কঠিন। এটি শুধু আরেকটি নির্বাচন নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের নির্বাচন। দেশ, সমাজ, গ্রাম, উপজেলা কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নির্ধারণ করবে। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। দলে বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো স্থান নেই। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। যার হাতে আমরা নিরাপদ, আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদ, ভোটাধিকার নিরাপদ- সেই ব্যক্তিকেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ নয়, দলীয় স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ওপরে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রশাসনের যারা বিগত সরকারের পক্ষে অন্যায়ভাবে কাজ করছে, তাদের সাবধান হতে হবে। জনগণের শক্তির সামনে কোনো স্বৈরাচার টিকতে পারেনি, এবারও পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনোনয়ন যেই পাক, সংসদ সদস্য যেই হোক, মনে রাখতে হবে- চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী হলে সেটাই দলের জন্য প্রাপ্তি। আমরা যদি ১৫১টি আসনও পাই, তাতেও লাভ হবে না যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি। নমিনেশন যেই পাক, আমাদের সবাইকে ভোট দিতে হবে। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে প্রতিটি পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছি। তাহলে, আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারবো না? অবশ্যই পারবো।’
তিনি ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের ন্যায় যদি তারা ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে চাই, যারা মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করবে, নির্বাচনের সময় তাদের বয়কট করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, আমরা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৈনিক। আমরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সৈনিক। আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ, আমরা উচ্ছৃঙ্খল নই।’
বক্তব্যের শেষে তিনি নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আগামী দিন বিএনপির, গণতন্ত্রের, জনগণের। আমাদের লড়াই, আন্দোলন, ত্যাগ তখনই সার্থক হবে, যখন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, শফিকুল ইসলাম পিটু, খালিদ মাহমুদ মিল্টন, জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা ও সাবেক সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, সাবেক সদস্য রাফিতুল্লাহ মহলদার, চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফুন্নাহার রীনা, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, চুয়াডাঙ্গা জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির নজরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম.আর মুকুল, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপ্টন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহাবুল হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. এম.এম. শাহজাহান মুকুল।
শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ উদ্দীন রুবেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ হোসেন জোয়াদ্দার সোনা, শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস পঁচা, সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলী, সহসভাপতি আব্দুল হাই মিয়া, ওবাইদুর রহমান, সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দীন, আনোয়ার হোসেন ইংরেজ, সহসভাপতি আলমগীর হোসেন, আব্দুল কাদের মাস্টার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফগুল মিয়া, নাসির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ টোকন মিয়া, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জজ, গ্রাম বিষয়ক সম্পাদক তাজুল ইসলাম তাজু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান সাগর, শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি রায়হান উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন ও বিশিষ্ট সমাজসেবক আমিরুজ্জামান বিশ্বাস।
সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝন্টু, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ, সদর উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মতিউর রহমান মিশর, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কৌশিক আহমেদ রানাসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীবৃন্দ।