ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে: প্রধান উপদেষ্টা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:০৯:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা। তিনি বলেন, আমি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে স্মরণ করছি, জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসী ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে। মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশের বইমেলার উদ্বোধন শেষে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমে ক্রমে এর গুণগত ও আয়োজনগত বিবর্তন হতেই থাকবে। বইমেলায় হাজির করার জন্য লেখক-লেখিকারা সারা বছর প্রস্তুতি নিতে থাকেন যথাসময়ে নিজ নিজ বই শেষ করার জন্য। প্রকাশকরা অনেক আয়োজন করেন নিজেদের বইগুলো যথাসময়ে হাজির করার জন্য।
তিনি বলেন, বরাবরই একুশে মানে জেগে উঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদেরকে নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, বরকত, সালাম, রফিক, জাব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহা বিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহবিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় গ্রোথিত করে দিয়ে গেল। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্ত্বায় এই প্রত্যয় গভীরভাবে গ্রোথিত। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী-দীর্ঘস্থায়ী সকল দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এজন্য সব ধরনের জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। সেখানে আমরা স্বস্তি, শান্তি, সমাধান পাই। সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পায়। ২১ আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়, জাগিয়ে তোলে। মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে এক ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এক দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার উদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে। প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে শুধু তাই নয়, এই-টান গভীরতর হয়েছে। আমাদেরকে দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর- কিশোরী রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে তাদের স্বপ্নগুলো, তাদের আকাঙক্ষাগুলো, তাদের দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় এঁকে দিয়েছে। আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এগুলোর স্থান এখন আমাদের বুকের মধ্যে এবং জাদুঘরে হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের, প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। পৃথিবীজুড়ে নানা কাজে বাংলাদেশিরা কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। আমরা একুশের দিনে তাদের সবাইকে স্মরণ করতে চাই। তারা সবাই একুশের দিনে নিজের দেশকে স্মরণ করে অনুষ্ঠান করে। তারা আমাদের পরিবারের অংশ হিসাবে তাদের সন্তান-সন্ততির কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে: প্রধান উপদেষ্টা

আপলোড টাইম : ০৩:০৯:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা। তিনি বলেন, আমি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে স্মরণ করছি, জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসী ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে। মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশের বইমেলার উদ্বোধন শেষে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমে ক্রমে এর গুণগত ও আয়োজনগত বিবর্তন হতেই থাকবে। বইমেলায় হাজির করার জন্য লেখক-লেখিকারা সারা বছর প্রস্তুতি নিতে থাকেন যথাসময়ে নিজ নিজ বই শেষ করার জন্য। প্রকাশকরা অনেক আয়োজন করেন নিজেদের বইগুলো যথাসময়ে হাজির করার জন্য।
তিনি বলেন, বরাবরই একুশে মানে জেগে উঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদেরকে নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, বরকত, সালাম, রফিক, জাব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহা বিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহবিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় গ্রোথিত করে দিয়ে গেল। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্ত্বায় এই প্রত্যয় গভীরভাবে গ্রোথিত। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী-দীর্ঘস্থায়ী সকল দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এজন্য সব ধরনের জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। সেখানে আমরা স্বস্তি, শান্তি, সমাধান পাই। সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পায়। ২১ আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়, জাগিয়ে তোলে। মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে এক ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এক দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার উদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে। প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে শুধু তাই নয়, এই-টান গভীরতর হয়েছে। আমাদেরকে দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর- কিশোরী রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে তাদের স্বপ্নগুলো, তাদের আকাঙক্ষাগুলো, তাদের দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় এঁকে দিয়েছে। আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এগুলোর স্থান এখন আমাদের বুকের মধ্যে এবং জাদুঘরে হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের, প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। পৃথিবীজুড়ে নানা কাজে বাংলাদেশিরা কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। আমরা একুশের দিনে তাদের সবাইকে স্মরণ করতে চাই। তারা সবাই একুশের দিনে নিজের দেশকে স্মরণ করে অনুষ্ঠান করে। তারা আমাদের পরিবারের অংশ হিসাবে তাদের সন্তান-সন্ততির কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।