চুয়াডাঙ্গায় ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ ও জনসম্পৃক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তারেক রহমান
সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা না হলে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়
- আপলোড টাইম : ১০:২৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ২১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা যত কিছুই করি না কেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারি, কোনোভাবেই কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ঝড়-তুফান যাই হোক, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হতেই হবে। জনগণ ভোট দিতে পারবে না, এমন অবস্থা কোনোভাবেই চলতে পারে না। প্রকৃত নেতা নির্বাচিত হলে তিনি জনগণের দায়িত্ব নেবেন এবং তাদের সমস্যার সমাধান করবেন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে খুলনা বিভাগের চার জেলা চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও মাগুরায় ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ ও জনসম্পৃক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে তিনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং মতামত নেন।
গতকাল চার জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীতে শাহেদ গার্ডেনে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর দুই জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ ও জনসম্পৃক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে নয়টায় দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাড. নেওয়া হালিমা আরলী। প্রথম অধিবেশনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এছাড়া দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও সুসংহত ও কার্যকর করতে কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
কর্মশালার দ্বিতীয় অধিবেশনে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওফুন নাহার রিনা নারী কৃষকদের জন্য বিশেষ সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মা-বোনেরা কারুশিল্পের কাজ করেন, তাদের উদ্যোগকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এক সময় গ্রামীণ মেলা হতো, সেগুলো আবার চালু করা দরকার। নারী কৃষকদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন বাধ নির্মাণের ফলে আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা জিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। আমাদের আবার সেই উদ্যোগ নিতে হবে। নদীগুলো রক্ষা করতে হবে, পানি সংরক্ষণ করতে হবে, খাল খনন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার নিজস্ব কৃষ্টি ও পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে এবং শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়াতে হবে।’
প্রধান অতিথি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় যা শিখেছি, তা হলো-গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা সবার আগে প্রয়োজন। তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে সবার আগে এই নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমরা যত কিছুই করি না কেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারি, তাহলে কোনোভাবেই কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৫ বছর বাধ্য হয়ে বিদেশের মাটিতে অবস্থান করছি। লন্ডনের রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে বলতে চাই, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষকে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ করে দেবে, এটিই হবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘ঝড়-তুফান যাই হোক না কেন, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে আমাদের সামনের দিকে টেনে নিয়ে যেতেই হবে। যেখানে জনগণ ভোটার, সেখানে জনগণকে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। জনগণের ভোটে প্রকৃত নেতা দায়িত্বে এলে, তা একজন ওয়ার্ড কমিশনার হোক, পৌর মেয়র হোক, রাজধানী কিংবা জেলার নেতৃত্বে যেই আসুক না কেন, যারা সত্যিকারভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি, তারা অবশ্যই তাদের এলাকার সমস্যা সমাধান করবেন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বাস্তবতা অনেক সোজা, এক দিনে এটি সম্ভব নয়। তবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রকৃত প্রতিনিধি দায়িত্বে এলে, তা নিশ্চিতভাবে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছরে আমরা হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, হত্যা, গুম ও খুনের শিকার হয়েছি। কারণ আমরা প্রতিবার মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছি, মানুষের বাকস্বাধীনতার কথা বলেছি। রাজনৈতিক অধিকার যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলেই জনগণের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলা যাবে, সমাধান করা যাবে। এভাবেই দেশের সমস্যাগুলো সমাধান হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। সমস্যা তৈরি হবেই। কিন্তু আমরা তা তখনই সমাধান করতে পারব, যখন এর দায়িত্ব থাকবে প্রকৃত দায়িত্বশীল ব্যক্তির হাতে। সেই দায়িত্বশীল ব্যক্তি তৈরি করা সম্ভব, তাকে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব, তার কাছে প্রত্যাশা করা সম্ভব, যদি জনগণ তাদের ইচ্ছা ও পছন্দে তাকে বেছে নিতে পারে। সেই ব্যক্তি যদি বাধ্য থাকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে, সেই ব্যক্তিদের যদি আমরা তৈরি করতে পারি, দাঁড় করাতে পারি, তাহলেই একমাত্র আমাদের পক্ষে সকল সমস্যার সমাধান ও তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’ তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছি, যে নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কে তাদের দেখভাল করবে।’
কর্মশালায় তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা কর্মশালায় ৩১ দফা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই ৩১ দফা কেন? ৩১ দফা জনগণের জন্য, দেশের জন্য। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনি জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা জাতীয়তাবাদী দলের যে কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের কর্মী হন, জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ হন বা যেই হন না কেন, আপনারা প্রত্যেকেই একেকজন নেতা। নেতা হিসেবে আপনাদের ৩১ দফা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে, দেশের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মা-বোনেরা বিভিন্ন ধরনের কারুশিল্পের কাজ করেন। এটিকে বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে আড়ং আছে, এরকম আরও প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা যেতে পারে। একসময় গ্রামীণ মেলা হতো। আমরা উদ্যোগ নিতে পারি, যেন এসব মেলা আবার শুরু হয় এবং এগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংযুক্ত করা যায়। নারীদের উন্নয়নে আমরা আরও কী করতে পারি, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। আমাদের নারী কৃষকদের জন্যও বিশেষ কিছু করা যায় কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে দেশকে দ্বি-রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা আগামী দিনে একটি স্বাভাবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো। আমাদের দেশে জনসংখ্যা ২০ কোটি। এটি কোনোভাবেই কম নয়। তাই সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই কর্মশালায় আমি যুক্ত ছিলাম এবং নেতা-কর্মীদের মতামত ও প্রশ্ন শুনেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই সংগ্রাম একদিন সফল হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রথম ও দ্বিতীয় দুটি অধিবেশনেই সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহামুদ হাসান খান বাবু। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতিতে সভাপতির বক্তব্য দেন। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর দুই জেলার প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন। আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক অ্যাড. নেওয়া হালিমা আরলী (সাবেক এমপি), সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মোছা. শাম্মী আক্তার, কর্মশালার উপস্থাপক ও আলোচক ছিলেন সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন। এছাড়াও আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। এছাড়াও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন ও সদস্যসচিব অ্যাড. কামরুল হাসান। অনুষ্ঠিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ ও জনসম্পৃক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালার সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবীব সেলিম।