‘রাষ্ট্র্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ত’ শীর্ষক কর্মশালায় তারেক রহমান
জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না
- আপলোড টাইম : ১০:১৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৪৫ বার পড়া হয়েছে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এই পরিবর্তন কোনো যাদু বা ম্যাজিক নয় যে, বলব আর হয়ে যাব। এ জন্য জনগনের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণ, জনগণ ও জনগণ। শুধু তাই নয়, এই ৩১ দফা বাস্তবয়নের মাধ্যমে আমরা সকল জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব।
তারেক রহমান গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইল জেলা বিএনপি আয়োজিত “রাষ্ট্র্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি” শীর্ষক এক কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি স্থানীয় জোহান ড্রিম ভ্যালি মিলনায়তনে এই কর্মশালালায় অংশ নেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রতিবারই বলছি সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতা-কর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তারেক রহমান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও গত ১৬ বছর গুম খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে শহিদ হয়েছেন, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হবে। তালিকা করে শহিদ ও আহতদের খোঁজখবর নেয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দলীয়ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
তারেক রহমান আর বলেন, বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়ে নিজে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। আবার দেশ পরিচালনায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের মানুষকে সংগঠিত করে কীভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করতে হয়, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই দেশের প্রতিটি কমবেশি নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। এটি বিএনপির সবচে বড় অর্জন। যতদিন পৃথিবী থাকবে, ততদিন এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, ৭১ সালে যুদ্ধের সময় কোনো দল বর্ডার টপকে ভারতে আমোদ-প্রমোদ করে কাটিয়েছে, আবার কোনো দল স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করাও এই ঈমানের মধ্যে পড়ে। তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা খুন গুম, হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপির দ্বারাই হবে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠে ঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহিদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ৭১ সালে একটা দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গিয়েছিল। আরেকটি দল মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করেছে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের সকল নেতা-কর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তিনি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ বিএনপি জনগণের দল। নিজেদেরকে জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে। নিজেদেরকে শুধরাতে হবে। দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে এক চ্যালেঞ্জ। কাজেই আগামীতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সকল প্রতিশোধ নেব। আমি মনে করি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এ জন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি। ৩১ দফা নিয়ে নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধির করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পান্নুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্ট্রার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঝিনাইদহ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, সাজেদুর রহমান পাপ্পু, আহসান হাবীব রনক, আশরাফুল ইসলাম পিণ্টু, হুমায়ুন বাবর ফিরোজ, আসিফ ইকবাল মাখন, এস এম সমেনুজ্জামান সমেন, মুশফিকুর রহমান মানিক, রাসেল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।