ইপেপার । আজ রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গড়াইটুপিতে ছয় দশক ধরে মিষ্টি তৈরির কারিগর মিনতি অধিকারী

শেষ জীবনে চান খাদ্য-বস্ত্রের নিশ্চয়তা

আরিফ হাসান ও মিঠুন মাহমুদ:
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে

ছয় দশক আগে পিতার বাড়ি থেকে কিশোরী মিনতিকে বধূবেশে স্বামী সোনাতন অধিকারী নিয়ে আসেন নিজ বাড়িতে। আজ সেই কিশোরী মিনতি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কুচকে গেছে ত্বক, পড়ে গেছে দাঁত। সোনাতন অধিকারীর সঙ্গে সংসারের শুরু থেকে মিষ্টির ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও বর্তমানে জীবন-সংগ্রামের চাকা নিজ হাতেই ঘোরাচ্ছেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গড়াইটুপি বাজারের শাপলা মোড়ে জীর্ণ সাইনবোর্ডহীন একটি দোকানই মিনতি অধিকারীর জীবনের একমাত্র অবলম্বন। মৃত সোনাতন অধিকারী ছিলেন দক্ষ ময়রা। নিজের তৈরি মিষ্টি বিক্রি করেই সংসার চালাতেন। স্ত্রী মিনতি ছিলেন তাঁর একমাত্র সহযোগী। তবে চার বছর আগে স্বামীর মৃত্যু তাঁকে একাই দাঁড় করিয়েছে জীবনের কঠিন বাস্তবতায়। ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বলহীন এই নারী স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানেই তৈরি করছেন মিষ্টি। সেখান থেকে সামান্য আয় দিয়েই কোনো রকমে চলছে তাঁর জীবন।

মিনতি অধিকারী বলেন, ‘আমার ওস্তাদ ছিল আমার স্বামী। তাঁর কাছেই সব শিখেছি। আগে দুজন একসঙ্গে কাজ করতাম, এখন একাই করি। আয় যা হয়, তাতেই কোনোভাবে সংসার চলে। তবে এখন বেচাকেনা অনেক কম। বিদ্যুৎ বিল দিতে না পারায় পাশের দোকানদার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে। সন্ধ্যার পর বেচাকেনা করতেও কষ্ট হয়। এত বয়স হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি। এমনকি শীতেও কেউ একটা কম্বল দেয়নি। তবে শরীর সুস্থ থাকলেই আয় করতে পারব।’

স্থানীয় বাসিন্দা জুল হোসেন বলেন, ‘মিনতি রানী দীর্ঘদিন ধরে গড়াইটুপি বাজারে মিষ্টি বিক্রি করে আসছেন। কখনো কারো কাছে হাত পাতেননি।’ একই কথা বলেন লাবলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পরও মিনতি রানী একাই দোকান চালাচ্ছেন। তাঁর মতো সংগ্রামী নারী খুব কমই আছে।’

সংগ্রামী নারীদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মিনতি অধিকারী। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় তিনি যেন মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং নিশ্চিতময় জীবন পান-এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

গড়াইটুপিতে ছয় দশক ধরে মিষ্টি তৈরির কারিগর মিনতি অধিকারী

শেষ জীবনে চান খাদ্য-বস্ত্রের নিশ্চয়তা

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

ছয় দশক আগে পিতার বাড়ি থেকে কিশোরী মিনতিকে বধূবেশে স্বামী সোনাতন অধিকারী নিয়ে আসেন নিজ বাড়িতে। আজ সেই কিশোরী মিনতি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কুচকে গেছে ত্বক, পড়ে গেছে দাঁত। সোনাতন অধিকারীর সঙ্গে সংসারের শুরু থেকে মিষ্টির ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও বর্তমানে জীবন-সংগ্রামের চাকা নিজ হাতেই ঘোরাচ্ছেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গড়াইটুপি বাজারের শাপলা মোড়ে জীর্ণ সাইনবোর্ডহীন একটি দোকানই মিনতি অধিকারীর জীবনের একমাত্র অবলম্বন। মৃত সোনাতন অধিকারী ছিলেন দক্ষ ময়রা। নিজের তৈরি মিষ্টি বিক্রি করেই সংসার চালাতেন। স্ত্রী মিনতি ছিলেন তাঁর একমাত্র সহযোগী। তবে চার বছর আগে স্বামীর মৃত্যু তাঁকে একাই দাঁড় করিয়েছে জীবনের কঠিন বাস্তবতায়। ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বলহীন এই নারী স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানেই তৈরি করছেন মিষ্টি। সেখান থেকে সামান্য আয় দিয়েই কোনো রকমে চলছে তাঁর জীবন।

মিনতি অধিকারী বলেন, ‘আমার ওস্তাদ ছিল আমার স্বামী। তাঁর কাছেই সব শিখেছি। আগে দুজন একসঙ্গে কাজ করতাম, এখন একাই করি। আয় যা হয়, তাতেই কোনোভাবে সংসার চলে। তবে এখন বেচাকেনা অনেক কম। বিদ্যুৎ বিল দিতে না পারায় পাশের দোকানদার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে। সন্ধ্যার পর বেচাকেনা করতেও কষ্ট হয়। এত বয়স হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি। এমনকি শীতেও কেউ একটা কম্বল দেয়নি। তবে শরীর সুস্থ থাকলেই আয় করতে পারব।’

স্থানীয় বাসিন্দা জুল হোসেন বলেন, ‘মিনতি রানী দীর্ঘদিন ধরে গড়াইটুপি বাজারে মিষ্টি বিক্রি করে আসছেন। কখনো কারো কাছে হাত পাতেননি।’ একই কথা বলেন লাবলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পরও মিনতি রানী একাই দোকান চালাচ্ছেন। তাঁর মতো সংগ্রামী নারী খুব কমই আছে।’

সংগ্রামী নারীদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মিনতি অধিকারী। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় তিনি যেন মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং নিশ্চিতময় জীবন পান-এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।