ইপেপার । আজ রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আ.লীগের প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার ঝিনাইদহ পৌর সুপার মার্কেট

চার বছর ধরে কাজ বন্ধ, কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১০:১৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৪১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল ও প্রতিহিংসার রাজনীতির রোষানলে পড়ে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঝিনাইদহ পৌর সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আছে। চার বছর আগে আদালতের আদেশে নির্মাণকাজ বন্ধ হলেও ঝিনাইদহ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আইনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এদিকে ঝিনাইদহ পৌরসভার সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। সেই সাথে চলছে দখল বাণিজ্য। মার্কেটের সামনে রাতারাতি দখল করে বিশেষ মহল গড়ে তুলেছে ২০টি দোকান। মার্কেটের কয়েক কোটি টাকার রড জং ধরে মরিচা পড়ে গেছে।

ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ জাইকার অর্থায়নে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহ পৌর সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ চলা অবস্থায় ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির মামলার (রিট পিটিশন নম্বর ১২৪৪০/১৯) কারণে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। বাদী পক্ষের দাবি মার্কেটের জায়গায় একটি পার্ক ছিল। সেখানে বাঁচ্চারা খেলতো। বহুতল মার্কেট তৈরি হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে। আদালত ৬ মাসের মধ্যে সিএস ৭৮৪ দাগে অবস্থিত রাস্তা ও মসজিদ ব্যতীত সকল অবৈধ স্থাপনা উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেয়।

মামলার বিরুদ্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটি-এমইপি (জেভি) উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত স্থিতিতাবস্থা জারি করে। গত চার বছর ধরে একই অবস্থায় মামলাটি পড়ে আছে। মামলার কারণে ঠিকাদারের দেড় কোটি টাকার সম্পদ পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সে সময় ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টু। মেয়র মিণ্টুর সঙ্গে স্থানীয় এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা বাবু জীবন কুমার বিশ^াস ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটনের বিরোধ থাকায় তারাই মূলত মার্কেট নির্মাণের বিরুদ্ধে মামলায় ইন্ধন যুগিয়েছে। কারণ হিসেবে পৌর নাগরিকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নেতা ফোটনের “মকবুল প্লাজা” নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণাধীন ঝিনাইদহ পৌরসুপার মার্কেটের সামনেই অবস্থিত। তার মার্কেটের সামনে এমন একটি অত্যাধুনিক সুপার মার্কেট নির্মিত হলে আওয়ামী লীগ নেতা ফোটনের ব্যবসা লাঠে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিকে দিয়ে এই রিট পিটিশন করা হয় বলে শহরজুড়ে কথিত আছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন গতকাল মঙ্গলবার জানান, পৌর সুপার মার্কেটটি নির্মিত হলে শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেতো। সেই সঙ্গে বাড়তো পৌরসভার আভ্যন্তরীণ আয়। সুপার মার্কেটটি ছিল অত্যাধুনিক। আশপাশের কোনো জেলায় এমন শপিংমল নেই। মার্কেটের ডিজাইনে ছিল ১১৯টি পার্কিং লট, চলন্ত সিঁড়ি, লিফট ও হাই পাওয়ারের জেনারেটর।

ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতে চলা মামলা নিষ্পত্তি করে দ্রুত মার্কেটটির নির্মাণকাজ শুরু করা হোক। সুপার মার্কেটটি নির্মিত হলে শহরের আভিজাত্যতা ফুটে উঠতো বলে তিনি মনে করেন। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এমন একটি সৃষ্টি ধ্বংস করা ঠিক নয়। তিনি সুপার মার্কেটটির কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।

ঝিনাইদহের তরুণ উদ্যোক্তা ফিরোজ আনোয়ার মাসুম বলেন, আদালতের আদেশ মানতে হলে শুধু পৌর সুপার মার্কেটই নয়, আশপাশের বহু সরকারি স্থাপনা ভাঙ্গতে হবে। তার চেয়ে বরং পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অন্য স্থানে একটি শিশু পার্ক তৈরি করে আদালতের কাছ থেকে নতুন নির্দেশনা চাওয়া। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটি-এমইপির (জেভি) পক্ষে এস এম বিল্লাহ রিণ্টু জানান, সুপার মার্কেটটির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় তিনি প্রায় চার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেড় কোটি টাকার নির্মাণসামগ্রী নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কর্তনকৃত জামানতের টাকা ফেরত পাননি। সব মিলিয়ি তিনি পৌরসভার কাছে সাড়ে চার কোটি টাকা পাবেন। একাধিকবার তিনি চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ তাকে এখনো বিল পরিশোধ করেননি। তিনি বিলের টাকা পেতে আদালতের দারস্থ হবেন বলেও জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

আ.লীগের প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার ঝিনাইদহ পৌর সুপার মার্কেট

চার বছর ধরে কাজ বন্ধ, কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট

আপলোড টাইম : ১০:১৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল ও প্রতিহিংসার রাজনীতির রোষানলে পড়ে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঝিনাইদহ পৌর সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আছে। চার বছর আগে আদালতের আদেশে নির্মাণকাজ বন্ধ হলেও ঝিনাইদহ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আইনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এদিকে ঝিনাইদহ পৌরসভার সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। সেই সাথে চলছে দখল বাণিজ্য। মার্কেটের সামনে রাতারাতি দখল করে বিশেষ মহল গড়ে তুলেছে ২০টি দোকান। মার্কেটের কয়েক কোটি টাকার রড জং ধরে মরিচা পড়ে গেছে।

ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ জাইকার অর্থায়নে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহ পৌর সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ চলা অবস্থায় ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির মামলার (রিট পিটিশন নম্বর ১২৪৪০/১৯) কারণে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। বাদী পক্ষের দাবি মার্কেটের জায়গায় একটি পার্ক ছিল। সেখানে বাঁচ্চারা খেলতো। বহুতল মার্কেট তৈরি হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে। আদালত ৬ মাসের মধ্যে সিএস ৭৮৪ দাগে অবস্থিত রাস্তা ও মসজিদ ব্যতীত সকল অবৈধ স্থাপনা উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেয়।

মামলার বিরুদ্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটি-এমইপি (জেভি) উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত স্থিতিতাবস্থা জারি করে। গত চার বছর ধরে একই অবস্থায় মামলাটি পড়ে আছে। মামলার কারণে ঠিকাদারের দেড় কোটি টাকার সম্পদ পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সে সময় ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টু। মেয়র মিণ্টুর সঙ্গে স্থানীয় এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা বাবু জীবন কুমার বিশ^াস ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটনের বিরোধ থাকায় তারাই মূলত মার্কেট নির্মাণের বিরুদ্ধে মামলায় ইন্ধন যুগিয়েছে। কারণ হিসেবে পৌর নাগরিকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নেতা ফোটনের “মকবুল প্লাজা” নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণাধীন ঝিনাইদহ পৌরসুপার মার্কেটের সামনেই অবস্থিত। তার মার্কেটের সামনে এমন একটি অত্যাধুনিক সুপার মার্কেট নির্মিত হলে আওয়ামী লীগ নেতা ফোটনের ব্যবসা লাঠে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিকে দিয়ে এই রিট পিটিশন করা হয় বলে শহরজুড়ে কথিত আছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন গতকাল মঙ্গলবার জানান, পৌর সুপার মার্কেটটি নির্মিত হলে শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেতো। সেই সঙ্গে বাড়তো পৌরসভার আভ্যন্তরীণ আয়। সুপার মার্কেটটি ছিল অত্যাধুনিক। আশপাশের কোনো জেলায় এমন শপিংমল নেই। মার্কেটের ডিজাইনে ছিল ১১৯টি পার্কিং লট, চলন্ত সিঁড়ি, লিফট ও হাই পাওয়ারের জেনারেটর।

ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতে চলা মামলা নিষ্পত্তি করে দ্রুত মার্কেটটির নির্মাণকাজ শুরু করা হোক। সুপার মার্কেটটি নির্মিত হলে শহরের আভিজাত্যতা ফুটে উঠতো বলে তিনি মনে করেন। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এমন একটি সৃষ্টি ধ্বংস করা ঠিক নয়। তিনি সুপার মার্কেটটির কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।

ঝিনাইদহের তরুণ উদ্যোক্তা ফিরোজ আনোয়ার মাসুম বলেন, আদালতের আদেশ মানতে হলে শুধু পৌর সুপার মার্কেটই নয়, আশপাশের বহু সরকারি স্থাপনা ভাঙ্গতে হবে। তার চেয়ে বরং পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অন্য স্থানে একটি শিশু পার্ক তৈরি করে আদালতের কাছ থেকে নতুন নির্দেশনা চাওয়া। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটি-এমইপির (জেভি) পক্ষে এস এম বিল্লাহ রিণ্টু জানান, সুপার মার্কেটটির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় তিনি প্রায় চার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেড় কোটি টাকার নির্মাণসামগ্রী নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কর্তনকৃত জামানতের টাকা ফেরত পাননি। সব মিলিয়ি তিনি পৌরসভার কাছে সাড়ে চার কোটি টাকা পাবেন। একাধিকবার তিনি চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ তাকে এখনো বিল পরিশোধ করেননি। তিনি বিলের টাকা পেতে আদালতের দারস্থ হবেন বলেও জানান।