ইপেপার । আজ রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঝিনাইদহে স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা

বাড়ছে স্বাস্ব্যঝুঁকি, সুরক্ষার বিষয়ে অনেকে জানেন না

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহে খেতে পোকামাকড় দমনে বাড়ছে কীটনাশকের প্রয়োগ। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সুরক্ষাবিহীন ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকেরা। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা পান না তারা। এদিকে, কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের সচেতন করতে নানারকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে মাঠে দেখা যায়, ফসলের উর্বরতা বৃদ্ধি ও পোকামাকড় দমনে পেঁয়াজ খেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন জেলার শৈলকুপার উপজেলার আশুরহাট গ্রামের কৃষক জাকিরুল ইসলাম। ফসল সুরক্ষায় এতসব আয়োজন থাকলেও নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। কীটনাশক প্রয়োগের সময় মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষিত। ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে। এতে নিজের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এই কৃষক। তিনি বলেন, নিয়ম থাকলেও তারা স্বাস্থ্য সচেতন না। যার কারণে কোনোরকম ‘সেফটি গ্যাজেটস’ বা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেন।

শুধু জাকিরুল ইসলামই নয়, ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে কৃষকদের এমন উদাসীনতার দেখা মিলবে। কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি দপ্তরের সহযোগিতা পান না তারা। এছাড়াও অনেকেই জানেনই না কীটনাশক প্রয়োগের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী কী ব্যবহার করতে হয়। কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘জমিতে কীটনাশক স্প্রে করার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আছে বলে শুনিনি কখনও। মুখ না ঢেকে খালি হাতেই স্প্রে করি। মাঝেমধ্যে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো ভাব হয়। তখন বেশি পানি দিয়ে গোসল করি। দোকান থেকে মাথাব্যথার ওষুধ খাই।’

কৃষক মোস্তাফিজ আলী বলেন, ‘কৃষি অফিসে প্রশিক্ষণে গেলে কীটনাশক স্প্রে করার নিয়মকানুনের কথা বলা হয়। কিন্তু মাঠে কাজ করার সময় এসব মনে থাকে না। তাছাড়া হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক কেনার টাকাও নেই। কৃষি অফিস পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করলে আমার মতো কৃষকরা নিয়মকানুন মানতে পারত।’

কৃষি অফিসের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘ফসলে যে কীটনাশক ব্যবহার করি, তা ঠিকমতো ধোয়া হয় না। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। তবে কৃষি অফিস যদি আমাদের মেশিন কিনে দিত, তাহলে আমরা রোগবালাই থেকে রেহাই পেতাম।’

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) নীতিমালার পরামর্শ হলো, রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশকের অনুপ্রবেশ রোধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বাতাসের উল্টোদিকে তা প্রয়োগ করা যাবে না। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়ার পরও কৃষকরা সচেতন হচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষি বিভাগের। তবে কৃষকরা বলছেন, কৃষি অফিস শুধু কাগজ-কলমে পরামর্শ দেওয়ার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই তাদের।

এদিকে, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আনিসুজ্জামান খানের। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছরই কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কীটনাশক ছিটানোর আগে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। আইপিএম অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি মানছেন না। ভবিষ্যতে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও বিশেষ উদ্যোগ নেব।’

কীটনাশক প্রয়োগের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করলে জটিল ও কঠিন রোগ হতে পারে বলে জানালেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ। তিনি বলেন, ‘মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার না করে কেউ কীটনাশক স্প্রে করলে তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, চর্মরোগ, চোখ ও শরীরে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট এমনকি ফুসফুসে বড় ধরনের রোগও হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’ জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে,জেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমান ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ঝিনাইদহে স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা

বাড়ছে স্বাস্ব্যঝুঁকি, সুরক্ষার বিষয়ে অনেকে জানেন না

আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

ঝিনাইদহে খেতে পোকামাকড় দমনে বাড়ছে কীটনাশকের প্রয়োগ। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সুরক্ষাবিহীন ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকেরা। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা পান না তারা। এদিকে, কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের সচেতন করতে নানারকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে মাঠে দেখা যায়, ফসলের উর্বরতা বৃদ্ধি ও পোকামাকড় দমনে পেঁয়াজ খেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন জেলার শৈলকুপার উপজেলার আশুরহাট গ্রামের কৃষক জাকিরুল ইসলাম। ফসল সুরক্ষায় এতসব আয়োজন থাকলেও নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। কীটনাশক প্রয়োগের সময় মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষিত। ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে। এতে নিজের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এই কৃষক। তিনি বলেন, নিয়ম থাকলেও তারা স্বাস্থ্য সচেতন না। যার কারণে কোনোরকম ‘সেফটি গ্যাজেটস’ বা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেন।

শুধু জাকিরুল ইসলামই নয়, ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে কৃষকদের এমন উদাসীনতার দেখা মিলবে। কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি দপ্তরের সহযোগিতা পান না তারা। এছাড়াও অনেকেই জানেনই না কীটনাশক প্রয়োগের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী কী ব্যবহার করতে হয়। কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘জমিতে কীটনাশক স্প্রে করার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আছে বলে শুনিনি কখনও। মুখ না ঢেকে খালি হাতেই স্প্রে করি। মাঝেমধ্যে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো ভাব হয়। তখন বেশি পানি দিয়ে গোসল করি। দোকান থেকে মাথাব্যথার ওষুধ খাই।’

কৃষক মোস্তাফিজ আলী বলেন, ‘কৃষি অফিসে প্রশিক্ষণে গেলে কীটনাশক স্প্রে করার নিয়মকানুনের কথা বলা হয়। কিন্তু মাঠে কাজ করার সময় এসব মনে থাকে না। তাছাড়া হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক কেনার টাকাও নেই। কৃষি অফিস পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করলে আমার মতো কৃষকরা নিয়মকানুন মানতে পারত।’

কৃষি অফিসের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘ফসলে যে কীটনাশক ব্যবহার করি, তা ঠিকমতো ধোয়া হয় না। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। তবে কৃষি অফিস যদি আমাদের মেশিন কিনে দিত, তাহলে আমরা রোগবালাই থেকে রেহাই পেতাম।’

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) নীতিমালার পরামর্শ হলো, রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশকের অনুপ্রবেশ রোধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বাতাসের উল্টোদিকে তা প্রয়োগ করা যাবে না। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়ার পরও কৃষকরা সচেতন হচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষি বিভাগের। তবে কৃষকরা বলছেন, কৃষি অফিস শুধু কাগজ-কলমে পরামর্শ দেওয়ার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই তাদের।

এদিকে, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আনিসুজ্জামান খানের। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছরই কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কীটনাশক ছিটানোর আগে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। আইপিএম অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি মানছেন না। ভবিষ্যতে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও বিশেষ উদ্যোগ নেব।’

কীটনাশক প্রয়োগের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করলে জটিল ও কঠিন রোগ হতে পারে বলে জানালেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ। তিনি বলেন, ‘মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার না করে কেউ কীটনাশক স্প্রে করলে তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, চর্মরোগ, চোখ ও শরীরে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট এমনকি ফুসফুসে বড় ধরনের রোগও হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’ জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে,জেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমান ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর।