জীননগরের বিখ্যাত আনসারবাড়ীয়া কলার হাট
প্রতিদিন ৫-১০ লাখ টাকার বেচাকেনা
- আপলোড টাইম : ০৯:১৮:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৬০ বার পড়া হয়েছে
আনসারবাড়ীয়া রেলস্টেশন। ১৯৮০ সালের দিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় অবস্থিত এই রেলস্টেশন কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল কলার হাট। সপ্তাহে ৭ দিনই চলে এই হাট। রেল কেন্দ্রিক হাট গড়ে উঠলেও এখন এই হাট থেকে ৯০ শতাংশ কলা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। ভরা সিজনে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার কলা বেচা-কেনা হয় এই হাট থেকে। আর বর্তমান ডাল সিজন থাকায় এখন প্রতিদিন ১ থেকে ২ লাখ টাকার কলা বিক্রি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাসহ কৃষকেরা কলা নিয়ে এসেছেন। ঢাকাসহ বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা কলার দর-দাম করে কিনে ট্রাকে লোড করছেন। অপরদিকে কয়কেজন হাট থেকে কলা কিনে ট্রেনে করে যশোর নিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা দৈনিক সময়ের সমীকরণকে জানান, শীতকালটা মূলত কলার জন্য ডাল সিজেন। এই ২-৩ মাস কলার দাম কম থাকে। ভালো কাধিও পাওয়া যায় না। আবারও কলা কেনার ক্রেতায় কম পাওয়া যায়।
কথা হয় কৃষক আরিফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে কলা চাষ আছে। এখানে ১২ মাসই বাজার। বাজার ভালোই থাকে। আর ১৫ দিন পর থেকে ফের কলার দাম বাড়বে বলে আশা করছি।
ব্যবসায়ী মো. ছমির আলী দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, আমি আনসারবাড়ীয়ার এই বাজার থেকেই কাচা কলা কিনি। এখানে আমার ঘর নেওয়া আছে। এই ঘরে আগুনের ধোয়ার হিটের মাধ্যমে কলা পাকাই। পরে এই কলা আমি দর্শনার বিভিন্ন দোকানে দোকানে পাইকারি দিই। এটা দিয়েই আমার সংসার চলে। কলা মূলত পাকানো হয় ধানের যে গুরা আসে সেটি মালসার (পাতিল) মধ্যে দিয়ে পুড়িয়ে ওই আগুনের যে হিট আসে ওই মামলাসহ কলার ঘরে দেওয়া হয়। এরপর কাগজ দিয়ে চাপা দিয়ে দরজা আটকে দেওয়া হয়। গরমের হিটেই কলা লাল হয়ে পেকে যায়।
ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, আমি প্রতিদিন এই হাট থেকে কলা কিনে ট্রেনে যশোরে কলা নিয়ে যায়। এখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় আছি। কলা বিক্রি শেষে আবার নকশিকাঁথা ট্রেনে করে ফিরে আসি।
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, হাটে প্রতিদিন আমার আসে পড়ে না। এক দিন পর পর আমি হাটে কলা নিয়ে আসি। আজ কলা যে দামে কিনে এনেছি এখন সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। একটি স্তুপ বেচেছি আসল টাকায়। আর দুটোই লাভ হয়েছে। এখনো এক স্তূপ পড়ে রয়েছে। এখন বসেই আছি।
বাজারে কলা নিয়ে আসা পাশ্বর্তী দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়তপুরের এক ব্যবসায়ী দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, আমার বাড়ি পাশ্বর্তী দামুড়হুদার হেমায়তপুরে। বাজারের অবস্থা ভালো না। মাল নিয়ে এসেছি লস হচ্ছে। ঠান্ডার কারণে বেচা-কেনা কম। মাঠে চাষিদের কাছ থেকে কিনছি এক দামে, আর এখানে বিক্রি করছি তার থেকে কম দামে। এক আলমসাধু কলা এনে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা লস হচ্ছে। লস হওয়ার পর কলা কিনছি। কারণ ব্যবস্থা তো চালু রাখতে হবে।
ব্যবসায়ী ছমির উদ্দীন দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলনে, এখন বর্তমান বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। সিজেন তো এখন না। মার্চ মাস থেকে সিজেন শুরু হবে। বর্তমানে আমরা মাঠে কৃষকদের কাছ এই কলার কাধি ১৫০-২০০ টাকায় কিনে নিয়ে আসছি। তবে বাইরের পাটি (ব্যবসায়ী) এর থেকে কম দাম বলছে।
আরেক ব্যবসায়ী দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, আমার বাড়ি এখানেই। তবে আমি বাজার থেকে কলা কিনে ঢাকা, বরিশাল, তেজগাঁও, বেড়িবাঁধে পাঠাই। এখন খুব ভালো কলা হলে ৩০০-৩৫০ টাবায় বিক্রি হয়। কমা হলে ২৫০, ২০০, ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। কাল অনুযায়ী দাম।
বাজারের তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, এখানে প্রতিদিই বেচা-কেনা হয়। এখন আমদানি কম। সিজেন ফাল্গুন মাস থেকে শুরু হয়। তখন বাজারে অনেক কলা আমদানি হয়। বাইরের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে কলা কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায়।