ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দর্শনায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিপাকে অসংখ্য গ্রাহক

ঋণ পরিশোধ করেও ৫ নারী জেলহাজতে

দর্শনা অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১১:৫২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

দর্শনায় ঋণ পরিশোধ করার পরও পাঁচ নারীকে জেলহাজতে যেতে হয়েছে। দর্শনা থানা পুলিশ গতকাল শুক্রবার ভোরে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে এবং সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে প্রেরণ করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দর্শনা সোসাইটি নামে একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান সমবায়ের অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দর্শনায় অবৈধভাবে চড়া সুদে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাহিদ পারভেজ ও যুবলীগ নেতা পলাশ আহমেদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এই সোসাইটি গড়ে ওঠে। প্রায় ৫ হাজার মানুষের মধ্যে চড়া সুদের ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণগ্রহীতারা কোনো অনিয়মের অভিযোগ করলেই তাদের মামলা ও পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হতো। সরকার পরিবর্তনের পরও দর্শনা সোসাইটি আদালতে মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁসানোর অভিযোগ আনে। এদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শ্রী বিশ্বনাথ অধিকারীর স্ত্রী শ্রী অনিমা রায় (৩৫), হায়দার আলীর স্ত্রী রিক্তা খাতুন (৪৪), আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মোছা চাঁদনী খাতুন (৪২), মোহাম্মদ মামুনের স্ত্রী মোছা সেলিনা বেগম (৩২) ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছা জাহানারা বেগম (৩৮)।
গ্রেপ্তার হওয়া শ্রী অনিমা রায়ের স্বামী শ্রী বিশ্বনাথ অধিকারী বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নামে ৯ হাজার টাকা ঋণ ছিল, যা সঞ্চয় থেকে পরিশোধ করেছি। সঞ্চয়ে ৯ হাজার ৩১০ টাকা ছিল। ঋণ পরিশোধের পর আমাদের পাওনা ছিল ১০ টাকা। কিন্তু এখন ক্ষমতা দেখিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা দাবি করে সোসাইটি কর্তৃপক্ষ। টাকা না দেয়ার কারণে মামলায় পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তারি পরোনা জারি করে তারা। ভোরবেলা বাড়ি থেকে আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযুক্ত পলাশ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। বরং আমরাই অনেক মানুষের কাছে লাখ লাখ টাকা পাই। টাকা আদায়ে বাধ্য হয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি।’
এদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া নারীদের পরিবারের সদস্যরা দর্শনা সোসাইটির বিরুদ্ধে চড়া সুদের ঋণ বিতরণ, আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জনগণকে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন। তারা এই অবৈধ কার্যক্রমের সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শহীদ তিতুমীর বলেন, ‘আদালতের ওয়ারেন্ট থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং আদালতের নির্দেশ মোতাবেক তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দর্শনায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিপাকে অসংখ্য গ্রাহক

ঋণ পরিশোধ করেও ৫ নারী জেলহাজতে

আপলোড টাইম : ১১:৫২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

দর্শনায় ঋণ পরিশোধ করার পরও পাঁচ নারীকে জেলহাজতে যেতে হয়েছে। দর্শনা থানা পুলিশ গতকাল শুক্রবার ভোরে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে এবং সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে প্রেরণ করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দর্শনা সোসাইটি নামে একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান সমবায়ের অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দর্শনায় অবৈধভাবে চড়া সুদে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাহিদ পারভেজ ও যুবলীগ নেতা পলাশ আহমেদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এই সোসাইটি গড়ে ওঠে। প্রায় ৫ হাজার মানুষের মধ্যে চড়া সুদের ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণগ্রহীতারা কোনো অনিয়মের অভিযোগ করলেই তাদের মামলা ও পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হতো। সরকার পরিবর্তনের পরও দর্শনা সোসাইটি আদালতে মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁসানোর অভিযোগ আনে। এদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শ্রী বিশ্বনাথ অধিকারীর স্ত্রী শ্রী অনিমা রায় (৩৫), হায়দার আলীর স্ত্রী রিক্তা খাতুন (৪৪), আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মোছা চাঁদনী খাতুন (৪২), মোহাম্মদ মামুনের স্ত্রী মোছা সেলিনা বেগম (৩২) ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছা জাহানারা বেগম (৩৮)।
গ্রেপ্তার হওয়া শ্রী অনিমা রায়ের স্বামী শ্রী বিশ্বনাথ অধিকারী বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নামে ৯ হাজার টাকা ঋণ ছিল, যা সঞ্চয় থেকে পরিশোধ করেছি। সঞ্চয়ে ৯ হাজার ৩১০ টাকা ছিল। ঋণ পরিশোধের পর আমাদের পাওনা ছিল ১০ টাকা। কিন্তু এখন ক্ষমতা দেখিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা দাবি করে সোসাইটি কর্তৃপক্ষ। টাকা না দেয়ার কারণে মামলায় পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তারি পরোনা জারি করে তারা। ভোরবেলা বাড়ি থেকে আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযুক্ত পলাশ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। বরং আমরাই অনেক মানুষের কাছে লাখ লাখ টাকা পাই। টাকা আদায়ে বাধ্য হয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি।’
এদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া নারীদের পরিবারের সদস্যরা দর্শনা সোসাইটির বিরুদ্ধে চড়া সুদের ঋণ বিতরণ, আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জনগণকে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন। তারা এই অবৈধ কার্যক্রমের সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শহীদ তিতুমীর বলেন, ‘আদালতের ওয়ারেন্ট থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং আদালতের নির্দেশ মোতাবেক তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’