ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসললামীর বিশাল কর্মী সমাবেশে কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান

দুর্নীতি-দুঃশাসন মুক্ত মানবিক বাংলাদেশ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না

হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলনে লোকে লোকারণ্য, মুখরিত শহরের রাজপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৫:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন। খারাপ ফুলের গাছ কাটা পড়েছে, কিন্তু আগাছ রয়ে গেছে। এগুলোকে আমরা পরিষ্কার করব ইনশাল্লাহ। বৈষম্যহীন সমাজ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জীবন যায় যাবে, তবুও আমরা আন্দোলন ছাড়ব না।’ গতকাল শুক্রবার বেলা দুইটায় চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. রুহুল আমিন। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার প্রথম শহীদ শাহরিয়ার শুভর পিতা আবু সাঈদ।
এদিকে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা শহরে দলে দলে আসতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। ব্যানার-ফেস্টুন, পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চুয়াডাঙ্গার রাজপথ। দুপুরের মধ্যেই সম্মেলনস্থল চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠ ছাপিয়ে প্রধান সড়কে হাজার হাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। দুপুরে সম্মেলনস্থলেই জুম্মার নামাজ আদায় করেন নেতা-কর্মীরা। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান জামাতে ইমামতি করেন। জুম্মার নামাজের পরই শুরু হয় সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের পরিচালনায় কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য খন্দকার আলী মোহসিন, যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, ঝিনাইদহ জেলার আমির আলী আজম মো. আবু বকর, কুষ্টিয়া জেলা আমির অধ্যাপক আবুল হাশেম, মেহেরপুর জেলা আমির তাজউদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাগর আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক প্রমুখ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আজ থেকে এক বছর আগেও এমন একটি মুহূর্ত আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। আল্লাহ তা’আলা শত শহীদের রক্ত, মুসলমানের চোখের পানি, পঙ্গু এবং আহত ভাইদের আহাজারি শুনে এবং কবুল করে বাংলাদেশের মানুষকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি দান করেছেন। তিনি বলেন, এই চুয়াডাঙ্গা জেলায় জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলদের বিগত ১৫ বছরে আমরা মন ভরে দেখতে পারিনি, কথা বলতে পারিনি। এসেছি দফায় দফায়, কাজ করেছি চুপি চুপি। চলে যেতে হয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কারণ একটি ফ্যাসিবাদ এই জাতির সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে কোথাও শান্তিতে দাঁড়াতে দেয়নি।

জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বড় মজলুম দল উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এক এক করে আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। বিভিন্ন দলের ওপরেই নির্যাতন-নিষ্পেষন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসললামী ছাড়া আর কেউই বলতে পারবেন না, তাদের নেতাদের তাদের বুক থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের সব অফিস ১৫ বছর ধরে খুলতে দেয়া হয়নি, বসতে দেয়া হয়নি। আমাদের দলীয় কার্যক্রম চালাতে দেয়া হয়নি, আমাদের অফিসগুলো সিলগালা করে রাখা হয়েছিল। এটাও আর কোনো দল বলতে পারবে না। আমাদের নেতৃবৃন্দের বাড়িঘরে বুলড্রোজার চালিয়ে ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। এটাও অন্য কোনো দলের ক্ষেত্রে ঘটে নাই। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের বিরুদ্ধে কায়দা-কানুন করে অন্যায়ভাবে, জবরদস্তি করে দলের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছিল। আর কোনো দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়নি। ছাত্র-জনতার অত্থ্যুথানের মুখে, বিপ্লবের মুখে সরকার দিশাহার হয়ে ১লা আগস্ট আমাদের দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অন্য কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় নাই। তাহলে আপনারাই বলুন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মজলুম দল কোনটা? জামায়াতে ইসলামী। শুধু কয়েকজন নেতার জীবন যায় নাই, আমাদের অসংখ্য কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ধরে নিয়ে গুম করা হয়েছে। আমাদের ঘুর-দুয়োর লুণ্ঠন করা হয়েছে। চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আমাদের জমি থেকে আমাদের তুলে দেয়া হয়েছে। এমনকি কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়া হয়নি। আমাদের মনে অনেক দুঃখ ছিল। কিন্তু আমাদের কলিজার টুকরা সন্তান, ছাত্র-যুবকদের তুমুল আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আপামর জনগণের সহযোগিতায় আল্লাহ তায়ালা ফ্যাসিবাদকে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছেন। বাংলাদেশ থেকে বিদায় করেছেন।

পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে জামায়াতের আমির বলেন, ‘তারা বলত আমরা কিছু করি নাই, আদালত সবকিছু করেছে। আমরাও আপনাদেরকে আদালতের কাছে সোপর্দ করতে চাই, আসেন এই দেশে। সৎ সাহস থাকলে আসেন। যদি এই দেশ ও মাটির প্রতি ভালোবাসা থাকে, যদি সত্যিই দেশের মানুষকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে একা একা থাকতেন না। চলে আসেন আমাদের কাছে। আমরা কাশিমপুরে আপনাদেরকে ভালো জায়গা করে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশটার সবকিছু আপনারা ধ্বংস করে দিলেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি গোর বাহিনীর হাতে তুলে দিলেন। আমাদের উন্নয়নকে আপনারা লুটেরাদের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করলেন। দেশকে গড়লেন না, কিন্তু বিদেশের মাটিতে বেগম পাড়া করলেন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিলেন। গত সাড়ে ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। কী অপরাধ তারা করেছিল! প্রথম ভোটটা হলো, মানুষ তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল। বুথের সামনে নিরীহ প্রাণিরা মনের শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকল। তখন পত্র-পত্রিকায় মিডিয়ায় সেগুলো উঠে এসেছে। ২০১৮ সালে আপনারা করলেন মিডনাইট ইলেকশন, নিশিরাতের নির্বাচন। আর ২৪ এসে করলেন আমি আর মামু, আমি আর ডামি। একজন নৌকা থেকে ক্যান্ডিডেট, আরেকজন নৌকার ডামি ক্যান্ডিডেট। আপনারা সর্বনাশ করলেন। এই অধিকারের জন্যই তো লড়াই করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল। পাকিস্তানিরা এই ভোটের মূল্য দেয়নি বলেই তো মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল। এটাকেই দিলেন আপনারা শেষ করে।’

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘তারা যা করার করেছে, আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমরা দেশবাসী, শুধু জামায়াতে ইসলামী না, দেশের আপামর জনগণ, জাতি, ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে এই দেশে যাদের জন্ম হয়েছে, দেশকে যারা ভালোবাসেন, আমরা সবাই মিলে এই দেশটাকে গড়তে চাই। ওরা আমাদের জন্য দেশের কঙ্কাল রেখে গেছে। সেই কঙ্কালে আমরা গোশত ও চামড়া পরাতে চাই। ওরা উন্নয়নের নামে লুটতরাজের মহারাজ্য কায়েম করেছিল। আমরা মানুষকে ইনসাফ ভিত্তিক উন্নয়ন উপহার দিতে চাই।


অবহেলিত চুয়াডাঙ্গা জেলা নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো জেলায় দেখি পাবলিক ইউনিভার্সিটি আছে, টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি আছে, আবার সেখানে মেডিকেল কলেজ আছে, এগ্রো ইউনিভার্সিটি আছে, অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় কিছুই নেই। তো চুয়াডাঙ্গা কী অপরাধ করেছে, চুয়াডাঙ্গা কি বাংলাদেশের অংশ নয়? এটা কি ৬৪ জেলার একটি নয়? এই চুয়াডাঙ্গার কি বাংলাদেশের উন্নয়নে কোনো অবদান নেই। এখানকার কৃষকের মাঠে ফলানো শস্যদানা বাংলাদেশের মানুষ খায় না? যদি তা খেয়ে থাকে, তবে চুয়াডাঙ্গাকে তার ন্যায্যা অধিকার ও অংশ দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানের কথা এখানে বলা হয়েছে, আমরা বর্তমান সরকারকে বলব, আপনাদের মেয়াদ যেহেতু দীর্ঘ নয়, সব আপনারা পারবেন না। আগামী একনেকে ইনসাফের কারণে কমপক্ষে একটা প্রতিষ্ঠান এখানে দেন, এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটা মেডিকেল কলেজ দেন। ২৫০ বেডের একটা হাসপাতাল আছে, কিন্তু তা মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না। হয় সেখানে জনশক্তি অপ্রতুল, নয় সেখানে যে সুবিধাগুলো থাকার কথা, সেগুলো নেই। এ জন্য বাধ্য হয়ে এদিকে ওদিকে এ জেলার মানুষকে ছুটতে হয়।’
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ, দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না, আল্লাহর কসম আমরা থামব না। আমরা কোনো রক্তচক্ষুর পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি শুধু পরোয়ারদিগার মহান আল্লাহ সুবহানুহু তায়ালার। সেই পরোয়ানা করি না বলেই আমাদের এতগুলো নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথানত করি নাই, করছি না, করব না। হাজার বছর শিয়ালের মতো বাঁচাই চাইতে একটা শ্বাস সিংহের মতো নিতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বলতে চাই, ন্যায্য কথা বলতে কেউ যেন কারো পরোয়া না করে। সাংবাদিকরা সাড়ে ১৫ বছর ন্যায্য কথা বলতে পারে না। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বিভিন্ন মিথ্যা খবর সরবরাহ করতে। সমাজে ভীতি সঞ্চার করে তাদেরকে খবর সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা চাই, মিডিয়া এখন থেকে কালোকে কালো বলবে, সাদাকে সাদা বলবে। চোখে চোখে রেখে খবর পরিবেশন করবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে করে জামায়াতের আমির ডা. শফিক বলেন, ‘আপনার দেশকে ভালোবাসুন। ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে আজ থেকে আমি আর চাঁদাবাজি করব না, দখল বাণিজ্য চালাবো না, ঘুষ খাবো না, মানুষকে ভয়-ভীতি দেখাবো না, কারো ইজ্জত লুণ্ঠন করব না। যখন তখন নিজেদের মাঝে আমরা যুদ্ধ করব না। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ হয়, পদ-পদবি পাই নাই, দুই দিক থেকে লেগে যায়, নিরীহ মানুষ অথবা নিজেদের কর্মীকে অনেক সময় মেরে ফেলে। এগুলোও তো চলছে, এগুলো বাদ দেন। অনেক হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ এগুলো দেখতে দেখতে ক্লান্ত, বিরক্ত। এগুলো মানুষ এখন ঘৃণা করে। এগুলো আমরা সবাই ছেড়ে দেব। এগুলো আমরা আর কেউ করব না। আমি আমরা বলতে জামায়াতে ইসলামীকে বুঝাচ্ছি না, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছি। যদি আমরা ছেড়ে দিই, সত্যিই যদি আমরা দেশকে ভালোবাসি, তাহলে বিবেকবান লোকজন যাকে পছন্দ, তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে। এবং তখন দেশে একটা সুশাসন আশা করা যায়। কিন্তু এই বদ খাসিলত যদি কেউ ছাড়তে না পারে, তাহলে অনুরোধ করব, জনগণকে বোকা ভাববেন না। এই জনগণ যথেষ্ট হুশিয়ার। আর রক্ত দিয়ে দিয়ে হুশিয়ার হয়েছে। অতএব জনগণকে বোকাও ভাববেন না, দুর্বলও মনে করবেন না। যদি মনে করেন, কালো টাকার পেশিশক্তি দিয়ে কিছু করবেন, সেই দিন শেষ। ওই দুশ্চিন্তা আর করার দরকার নেই। জনগণ এই সুযোগ কাউকে দিবে না ইনশাল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বাংলাদেশে আমাদের সন্তানের জন্মের পরে সরকারের দায়িত্ব হবে তার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ৫ বছর বয়স হলে তার শিক্ষা তার হাত তুলে দেয়া। শিক্ষাজীবনে তার পাশে থাকা। যার মা-বাবা আছে, তার দায়িত্ব সে নিজে পালন করবে। যার কেউ নেই, সরকারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। আর একটা ছেলে অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় শেষ হয়ে যাক, এটা আমরা দেখতে চাই না। এই শিক্ষা হবে নৈতিক শিক্ষা, আল্লাহকে ভয় করার শিক্ষা, মানুষকে সম্মান করার শিক্ষা, দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা। এই শিক্ষা হবে দেশ গড়ার কারিগরের শিক্ষা। এই শিক্ষাজীবন শেষ করার সাথে সাথে তাদের হাতে দেশ গড়ার কাজ, দেশ গড়ার চাবি উঠে আসবে ইনশাল্লাহ। নারী-পুরুষ সবাই মিলে আমরা এই দেশকে গড়ব। যার যেখানে যে যোগত্য আছে, সকলেই সম্মান এবং নিরাপত্তার সাথে তার কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। একজন মানুষ ঘরে নিরাপদ থাকবেন, রাস্তায় চলাচলেও নিরাপদ থাকবেন, কর্মক্ষেত্রেও তিনি নিরাপদে থাকবেন। তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে বিধান করতে হবে।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অনেকে বলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ভদ্র লোকের দল। “তোমরা ভালো জায়গায় থাকো, আর খতমে ইউনুস পড়ো। এই সমাজ আমরা চালাচ্ছি, যেভাবে পছন্দ আমরা চালাবো। আমাদের লুট চলবে, দখলবাজি চলবে, চাঁদাবাজি চলবে, ঘুষ চলবে, এগুলো নিয়ে তোমরা কথা বলতে যেও না।” তোমরা কথা বললে আমরা থামব না। আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি, সাড়ে ১৫ বছর তো এরকমই একটা সরকার ছিল, শেষ পর্যন্ত দুপুরের রান্না করা ভাতটাও খেয়ে যেতে পারেনি। সুতরাং খোদার ওপর পোদ্দারি করবেন না। আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহ যাকে ধরে তাকে ছাড়েন না। ক্ষমতা কোনো মামু বাড়ির বিষয় নয়, এটি একটি দুর্বহ বোঝা। জাতির পক্ষ থেকে বিশাল আমানত। এই আমানত আল্লাহ কাউকে কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কাউকে কাউকে সাহায্য করেন। কাউকে এর মাধ্যমে আল্লাহ অভিশপ্ত করেন, কাউকে অভিনন্দিত করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘুষ, ভাগ-বাটায়োরা চলবে না, নিরীহ মানুষকে মামলা দিয়ে মামলা বাণিজ্য চলবে না। এই জন্যই কি আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েছে? নো। তাদের একটাই স্লোগান ছিল “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। আমরা ন্যায়বিচার চাই, আমরা দুর্নীতি চাই না। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই। সে বাংলাদেশ এখনো কায়েম হয় না বলেই আমাদের বুকের সন্তান বীর যোদ্ধারা আবার স্লোগান তুলেছে “আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ”। আমরাও তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব ঠিকই তোমরা বলেছো। একটা মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ, দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না, আল্লাহর কসম।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, এ কথা আর শুনতে হবে না। বিচার কারো মুখের দিকে তাকিয়ে হবে না। কারো পদ-পদবি, দলীয় অবস্থান বিবেচনায় নেয়া হবে না। বরং তিনি যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, অপরাধের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’ এ ধরনের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটা নয়, হাজার আছে। আমরা সেই যুগটা আবার ফিরে পেতে চাই।’ তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এতো মানুষের জীবন, এতো আলেম-ওলামার জীবন, এতো হাফেজে কুরআনের জীবন, এতো এতিমদের জীবন, এত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জীবন, এতো সাধারণ মানুষের জীবন, আসুন আমরা তার মূল্য দিই। আমরা একটা স্বপ্নের, সাম্যের, মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
কুরআনের বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ। আমাদের সেই যুদ্ধ চলবে ইনশাল্লাহ। সেই যুদ্ধের জন্য আপনারা প্রস্তুতি নিন। সাম্যের, ভ্রাতৃত্বের ও সৌহার্দ্যরে কুরআনের এই বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিন। একট ঘরও যেন বাদ না পড়ে। তিনি কোন দলের, কোন ধর্মের, এটা আমাদের দেখার দরকার নাই। তিনি এ দেশের মানুষ। সবার কাছে আপনারা এই আওয়াজ পৌঁছে দিবেন। আমাদের সালাম পৌঁছে দিবেন, দেশ গড়ার জন্য দোয়া চাইবেন। মানুষকে বলবেন, এমন একটি দেশ আপনিও চান নিশ্চয়, সবাই বলবে হ্যাঁ চাই। তখন আপনারা বলবেন, তাহলে আমরা একটু ভালোবাসা চাই, একটু দোয়া চাই, একুট সহানুভূতি চাই, একটু সাহায্য চাই, আপনাদেরকে পাশে চাই, আপনাদেরকে সাথে চাই। আপনাদের বুকের বিছানায় এক টুকরা জায়গা চাই। যদি সেই জায়গাটা আমাদের জন্য করে দেন, তাহলে আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমরা পরোয়া করব না। আপনাদের সাথে নিয়ে ইনশাল্লাহ সাম্যের, সৌহার্দ্যরে এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ব।’


ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আপনারা ঐক্যের জন্য নিজের দিক থেকে চূড়ান্ত চেষ্টা করবেন। নিজের কোনো কথায়, কোনো বক্তব্যে, কোনো আচরণে যেন ঐক্যে ফাটল না ধরে। তবে নিজের চোখের সামনে যখন মন্দ কাজ হতে দেখবেন, অব্যশই তার প্রতিবাদ করবেন। চুপ থাকবেন না। অন্যায় করলে তার প্রতিবাদ না করে চুপ থাকলে আপনিও অন্যায়কারীর মতো সমান অপরাধী। সুতরাং তার প্রতিবাদ করতে হবে। যদি ভালো কাজের সহযোগিতা, আর মন্দ কাজের বিরোধিতা যদি অব্যহত থাকে, ইনশাল্লাহ সমাজ থেকে আগাছ-পরগাছ সব দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা সেই প্রিয় বাংলাদেশ আমাদের দান করুন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসললামীর বিশাল কর্মী সমাবেশে কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান

দুর্নীতি-দুঃশাসন মুক্ত মানবিক বাংলাদেশ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না

হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলনে লোকে লোকারণ্য, মুখরিত শহরের রাজপথ

আপলোড টাইম : ০৮:১৫:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন। খারাপ ফুলের গাছ কাটা পড়েছে, কিন্তু আগাছ রয়ে গেছে। এগুলোকে আমরা পরিষ্কার করব ইনশাল্লাহ। বৈষম্যহীন সমাজ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জীবন যায় যাবে, তবুও আমরা আন্দোলন ছাড়ব না।’ গতকাল শুক্রবার বেলা দুইটায় চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. রুহুল আমিন। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার প্রথম শহীদ শাহরিয়ার শুভর পিতা আবু সাঈদ।
এদিকে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা শহরে দলে দলে আসতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। ব্যানার-ফেস্টুন, পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চুয়াডাঙ্গার রাজপথ। দুপুরের মধ্যেই সম্মেলনস্থল চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠ ছাপিয়ে প্রধান সড়কে হাজার হাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। দুপুরে সম্মেলনস্থলেই জুম্মার নামাজ আদায় করেন নেতা-কর্মীরা। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান জামাতে ইমামতি করেন। জুম্মার নামাজের পরই শুরু হয় সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের পরিচালনায় কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য খন্দকার আলী মোহসিন, যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, ঝিনাইদহ জেলার আমির আলী আজম মো. আবু বকর, কুষ্টিয়া জেলা আমির অধ্যাপক আবুল হাশেম, মেহেরপুর জেলা আমির তাজউদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাগর আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক প্রমুখ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আজ থেকে এক বছর আগেও এমন একটি মুহূর্ত আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। আল্লাহ তা’আলা শত শহীদের রক্ত, মুসলমানের চোখের পানি, পঙ্গু এবং আহত ভাইদের আহাজারি শুনে এবং কবুল করে বাংলাদেশের মানুষকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি দান করেছেন। তিনি বলেন, এই চুয়াডাঙ্গা জেলায় জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলদের বিগত ১৫ বছরে আমরা মন ভরে দেখতে পারিনি, কথা বলতে পারিনি। এসেছি দফায় দফায়, কাজ করেছি চুপি চুপি। চলে যেতে হয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কারণ একটি ফ্যাসিবাদ এই জাতির সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে কোথাও শান্তিতে দাঁড়াতে দেয়নি।

জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বড় মজলুম দল উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এক এক করে আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। বিভিন্ন দলের ওপরেই নির্যাতন-নিষ্পেষন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসললামী ছাড়া আর কেউই বলতে পারবেন না, তাদের নেতাদের তাদের বুক থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের সব অফিস ১৫ বছর ধরে খুলতে দেয়া হয়নি, বসতে দেয়া হয়নি। আমাদের দলীয় কার্যক্রম চালাতে দেয়া হয়নি, আমাদের অফিসগুলো সিলগালা করে রাখা হয়েছিল। এটাও আর কোনো দল বলতে পারবে না। আমাদের নেতৃবৃন্দের বাড়িঘরে বুলড্রোজার চালিয়ে ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। এটাও অন্য কোনো দলের ক্ষেত্রে ঘটে নাই। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের বিরুদ্ধে কায়দা-কানুন করে অন্যায়ভাবে, জবরদস্তি করে দলের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছিল। আর কোনো দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়নি। ছাত্র-জনতার অত্থ্যুথানের মুখে, বিপ্লবের মুখে সরকার দিশাহার হয়ে ১লা আগস্ট আমাদের দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অন্য কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় নাই। তাহলে আপনারাই বলুন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মজলুম দল কোনটা? জামায়াতে ইসলামী। শুধু কয়েকজন নেতার জীবন যায় নাই, আমাদের অসংখ্য কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ধরে নিয়ে গুম করা হয়েছে। আমাদের ঘুর-দুয়োর লুণ্ঠন করা হয়েছে। চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আমাদের জমি থেকে আমাদের তুলে দেয়া হয়েছে। এমনকি কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়া হয়নি। আমাদের মনে অনেক দুঃখ ছিল। কিন্তু আমাদের কলিজার টুকরা সন্তান, ছাত্র-যুবকদের তুমুল আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আপামর জনগণের সহযোগিতায় আল্লাহ তায়ালা ফ্যাসিবাদকে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছেন। বাংলাদেশ থেকে বিদায় করেছেন।

পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে জামায়াতের আমির বলেন, ‘তারা বলত আমরা কিছু করি নাই, আদালত সবকিছু করেছে। আমরাও আপনাদেরকে আদালতের কাছে সোপর্দ করতে চাই, আসেন এই দেশে। সৎ সাহস থাকলে আসেন। যদি এই দেশ ও মাটির প্রতি ভালোবাসা থাকে, যদি সত্যিই দেশের মানুষকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে একা একা থাকতেন না। চলে আসেন আমাদের কাছে। আমরা কাশিমপুরে আপনাদেরকে ভালো জায়গা করে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশটার সবকিছু আপনারা ধ্বংস করে দিলেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি গোর বাহিনীর হাতে তুলে দিলেন। আমাদের উন্নয়নকে আপনারা লুটেরাদের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করলেন। দেশকে গড়লেন না, কিন্তু বিদেশের মাটিতে বেগম পাড়া করলেন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিলেন। গত সাড়ে ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। কী অপরাধ তারা করেছিল! প্রথম ভোটটা হলো, মানুষ তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল। বুথের সামনে নিরীহ প্রাণিরা মনের শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকল। তখন পত্র-পত্রিকায় মিডিয়ায় সেগুলো উঠে এসেছে। ২০১৮ সালে আপনারা করলেন মিডনাইট ইলেকশন, নিশিরাতের নির্বাচন। আর ২৪ এসে করলেন আমি আর মামু, আমি আর ডামি। একজন নৌকা থেকে ক্যান্ডিডেট, আরেকজন নৌকার ডামি ক্যান্ডিডেট। আপনারা সর্বনাশ করলেন। এই অধিকারের জন্যই তো লড়াই করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল। পাকিস্তানিরা এই ভোটের মূল্য দেয়নি বলেই তো মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল। এটাকেই দিলেন আপনারা শেষ করে।’

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘তারা যা করার করেছে, আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমরা দেশবাসী, শুধু জামায়াতে ইসলামী না, দেশের আপামর জনগণ, জাতি, ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে এই দেশে যাদের জন্ম হয়েছে, দেশকে যারা ভালোবাসেন, আমরা সবাই মিলে এই দেশটাকে গড়তে চাই। ওরা আমাদের জন্য দেশের কঙ্কাল রেখে গেছে। সেই কঙ্কালে আমরা গোশত ও চামড়া পরাতে চাই। ওরা উন্নয়নের নামে লুটতরাজের মহারাজ্য কায়েম করেছিল। আমরা মানুষকে ইনসাফ ভিত্তিক উন্নয়ন উপহার দিতে চাই।


অবহেলিত চুয়াডাঙ্গা জেলা নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো জেলায় দেখি পাবলিক ইউনিভার্সিটি আছে, টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি আছে, আবার সেখানে মেডিকেল কলেজ আছে, এগ্রো ইউনিভার্সিটি আছে, অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় কিছুই নেই। তো চুয়াডাঙ্গা কী অপরাধ করেছে, চুয়াডাঙ্গা কি বাংলাদেশের অংশ নয়? এটা কি ৬৪ জেলার একটি নয়? এই চুয়াডাঙ্গার কি বাংলাদেশের উন্নয়নে কোনো অবদান নেই। এখানকার কৃষকের মাঠে ফলানো শস্যদানা বাংলাদেশের মানুষ খায় না? যদি তা খেয়ে থাকে, তবে চুয়াডাঙ্গাকে তার ন্যায্যা অধিকার ও অংশ দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানের কথা এখানে বলা হয়েছে, আমরা বর্তমান সরকারকে বলব, আপনাদের মেয়াদ যেহেতু দীর্ঘ নয়, সব আপনারা পারবেন না। আগামী একনেকে ইনসাফের কারণে কমপক্ষে একটা প্রতিষ্ঠান এখানে দেন, এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটা মেডিকেল কলেজ দেন। ২৫০ বেডের একটা হাসপাতাল আছে, কিন্তু তা মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না। হয় সেখানে জনশক্তি অপ্রতুল, নয় সেখানে যে সুবিধাগুলো থাকার কথা, সেগুলো নেই। এ জন্য বাধ্য হয়ে এদিকে ওদিকে এ জেলার মানুষকে ছুটতে হয়।’
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ, দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না, আল্লাহর কসম আমরা থামব না। আমরা কোনো রক্তচক্ষুর পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি শুধু পরোয়ারদিগার মহান আল্লাহ সুবহানুহু তায়ালার। সেই পরোয়ানা করি না বলেই আমাদের এতগুলো নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথানত করি নাই, করছি না, করব না। হাজার বছর শিয়ালের মতো বাঁচাই চাইতে একটা শ্বাস সিংহের মতো নিতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বলতে চাই, ন্যায্য কথা বলতে কেউ যেন কারো পরোয়া না করে। সাংবাদিকরা সাড়ে ১৫ বছর ন্যায্য কথা বলতে পারে না। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বিভিন্ন মিথ্যা খবর সরবরাহ করতে। সমাজে ভীতি সঞ্চার করে তাদেরকে খবর সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা চাই, মিডিয়া এখন থেকে কালোকে কালো বলবে, সাদাকে সাদা বলবে। চোখে চোখে রেখে খবর পরিবেশন করবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে করে জামায়াতের আমির ডা. শফিক বলেন, ‘আপনার দেশকে ভালোবাসুন। ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে আজ থেকে আমি আর চাঁদাবাজি করব না, দখল বাণিজ্য চালাবো না, ঘুষ খাবো না, মানুষকে ভয়-ভীতি দেখাবো না, কারো ইজ্জত লুণ্ঠন করব না। যখন তখন নিজেদের মাঝে আমরা যুদ্ধ করব না। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ হয়, পদ-পদবি পাই নাই, দুই দিক থেকে লেগে যায়, নিরীহ মানুষ অথবা নিজেদের কর্মীকে অনেক সময় মেরে ফেলে। এগুলোও তো চলছে, এগুলো বাদ দেন। অনেক হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ এগুলো দেখতে দেখতে ক্লান্ত, বিরক্ত। এগুলো মানুষ এখন ঘৃণা করে। এগুলো আমরা সবাই ছেড়ে দেব। এগুলো আমরা আর কেউ করব না। আমি আমরা বলতে জামায়াতে ইসলামীকে বুঝাচ্ছি না, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছি। যদি আমরা ছেড়ে দিই, সত্যিই যদি আমরা দেশকে ভালোবাসি, তাহলে বিবেকবান লোকজন যাকে পছন্দ, তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে। এবং তখন দেশে একটা সুশাসন আশা করা যায়। কিন্তু এই বদ খাসিলত যদি কেউ ছাড়তে না পারে, তাহলে অনুরোধ করব, জনগণকে বোকা ভাববেন না। এই জনগণ যথেষ্ট হুশিয়ার। আর রক্ত দিয়ে দিয়ে হুশিয়ার হয়েছে। অতএব জনগণকে বোকাও ভাববেন না, দুর্বলও মনে করবেন না। যদি মনে করেন, কালো টাকার পেশিশক্তি দিয়ে কিছু করবেন, সেই দিন শেষ। ওই দুশ্চিন্তা আর করার দরকার নেই। জনগণ এই সুযোগ কাউকে দিবে না ইনশাল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বাংলাদেশে আমাদের সন্তানের জন্মের পরে সরকারের দায়িত্ব হবে তার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ৫ বছর বয়স হলে তার শিক্ষা তার হাত তুলে দেয়া। শিক্ষাজীবনে তার পাশে থাকা। যার মা-বাবা আছে, তার দায়িত্ব সে নিজে পালন করবে। যার কেউ নেই, সরকারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। আর একটা ছেলে অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় শেষ হয়ে যাক, এটা আমরা দেখতে চাই না। এই শিক্ষা হবে নৈতিক শিক্ষা, আল্লাহকে ভয় করার শিক্ষা, মানুষকে সম্মান করার শিক্ষা, দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা। এই শিক্ষা হবে দেশ গড়ার কারিগরের শিক্ষা। এই শিক্ষাজীবন শেষ করার সাথে সাথে তাদের হাতে দেশ গড়ার কাজ, দেশ গড়ার চাবি উঠে আসবে ইনশাল্লাহ। নারী-পুরুষ সবাই মিলে আমরা এই দেশকে গড়ব। যার যেখানে যে যোগত্য আছে, সকলেই সম্মান এবং নিরাপত্তার সাথে তার কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। একজন মানুষ ঘরে নিরাপদ থাকবেন, রাস্তায় চলাচলেও নিরাপদ থাকবেন, কর্মক্ষেত্রেও তিনি নিরাপদে থাকবেন। তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে বিধান করতে হবে।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অনেকে বলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ভদ্র লোকের দল। “তোমরা ভালো জায়গায় থাকো, আর খতমে ইউনুস পড়ো। এই সমাজ আমরা চালাচ্ছি, যেভাবে পছন্দ আমরা চালাবো। আমাদের লুট চলবে, দখলবাজি চলবে, চাঁদাবাজি চলবে, ঘুষ চলবে, এগুলো নিয়ে তোমরা কথা বলতে যেও না।” তোমরা কথা বললে আমরা থামব না। আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি, সাড়ে ১৫ বছর তো এরকমই একটা সরকার ছিল, শেষ পর্যন্ত দুপুরের রান্না করা ভাতটাও খেয়ে যেতে পারেনি। সুতরাং খোদার ওপর পোদ্দারি করবেন না। আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহ যাকে ধরে তাকে ছাড়েন না। ক্ষমতা কোনো মামু বাড়ির বিষয় নয়, এটি একটি দুর্বহ বোঝা। জাতির পক্ষ থেকে বিশাল আমানত। এই আমানত আল্লাহ কাউকে কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কাউকে কাউকে সাহায্য করেন। কাউকে এর মাধ্যমে আল্লাহ অভিশপ্ত করেন, কাউকে অভিনন্দিত করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘুষ, ভাগ-বাটায়োরা চলবে না, নিরীহ মানুষকে মামলা দিয়ে মামলা বাণিজ্য চলবে না। এই জন্যই কি আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েছে? নো। তাদের একটাই স্লোগান ছিল “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। আমরা ন্যায়বিচার চাই, আমরা দুর্নীতি চাই না। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই। সে বাংলাদেশ এখনো কায়েম হয় না বলেই আমাদের বুকের সন্তান বীর যোদ্ধারা আবার স্লোগান তুলেছে “আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ”। আমরাও তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব ঠিকই তোমরা বলেছো। একটা মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ, দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না, আল্লাহর কসম।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, এ কথা আর শুনতে হবে না। বিচার কারো মুখের দিকে তাকিয়ে হবে না। কারো পদ-পদবি, দলীয় অবস্থান বিবেচনায় নেয়া হবে না। বরং তিনি যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, অপরাধের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’ এ ধরনের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটা নয়, হাজার আছে। আমরা সেই যুগটা আবার ফিরে পেতে চাই।’ তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এতো মানুষের জীবন, এতো আলেম-ওলামার জীবন, এতো হাফেজে কুরআনের জীবন, এতো এতিমদের জীবন, এত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জীবন, এতো সাধারণ মানুষের জীবন, আসুন আমরা তার মূল্য দিই। আমরা একটা স্বপ্নের, সাম্যের, মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
কুরআনের বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ। আমাদের সেই যুদ্ধ চলবে ইনশাল্লাহ। সেই যুদ্ধের জন্য আপনারা প্রস্তুতি নিন। সাম্যের, ভ্রাতৃত্বের ও সৌহার্দ্যরে কুরআনের এই বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিন। একট ঘরও যেন বাদ না পড়ে। তিনি কোন দলের, কোন ধর্মের, এটা আমাদের দেখার দরকার নাই। তিনি এ দেশের মানুষ। সবার কাছে আপনারা এই আওয়াজ পৌঁছে দিবেন। আমাদের সালাম পৌঁছে দিবেন, দেশ গড়ার জন্য দোয়া চাইবেন। মানুষকে বলবেন, এমন একটি দেশ আপনিও চান নিশ্চয়, সবাই বলবে হ্যাঁ চাই। তখন আপনারা বলবেন, তাহলে আমরা একটু ভালোবাসা চাই, একটু দোয়া চাই, একুট সহানুভূতি চাই, একটু সাহায্য চাই, আপনাদেরকে পাশে চাই, আপনাদেরকে সাথে চাই। আপনাদের বুকের বিছানায় এক টুকরা জায়গা চাই। যদি সেই জায়গাটা আমাদের জন্য করে দেন, তাহলে আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমরা পরোয়া করব না। আপনাদের সাথে নিয়ে ইনশাল্লাহ সাম্যের, সৌহার্দ্যরে এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ব।’


ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আপনারা ঐক্যের জন্য নিজের দিক থেকে চূড়ান্ত চেষ্টা করবেন। নিজের কোনো কথায়, কোনো বক্তব্যে, কোনো আচরণে যেন ঐক্যে ফাটল না ধরে। তবে নিজের চোখের সামনে যখন মন্দ কাজ হতে দেখবেন, অব্যশই তার প্রতিবাদ করবেন। চুপ থাকবেন না। অন্যায় করলে তার প্রতিবাদ না করে চুপ থাকলে আপনিও অন্যায়কারীর মতো সমান অপরাধী। সুতরাং তার প্রতিবাদ করতে হবে। যদি ভালো কাজের সহযোগিতা, আর মন্দ কাজের বিরোধিতা যদি অব্যহত থাকে, ইনশাল্লাহ সমাজ থেকে আগাছ-পরগাছ সব দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা সেই প্রিয় বাংলাদেশ আমাদের দান করুন।’