ঝিনাইদহ ও বদরগঞ্জ দশমাইলে পথসভায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত হোন
- আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৫২ বার পড়া হয়েছে
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা শান্তির দেখা এখনো পেলাম না। বরং হাজারো অশান্তি আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে আছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর জনগণের শান্তি ছিল নির্বাসনে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ জনগণের শান্তিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেশের দণ্ডমুণ্ডের মালিক হতে চেয়েছিল। আল্লাহ তাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরা যদি ক্ষমতায় যায়, তবে দেশের মালিক হবো না, বরং জনগণের সেবক হবো। দেশে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই নির্বাচন কেন্দ্রিক সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত হোন।’
তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমির আলী আজম মো. আবু বকরের সভাপতিত্বে পখসভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা মোবারক হোসেন, জেলা জামায়াতের নেতা আব্দুল আলীম, মতিয়ার রহমান, আবু তালেব, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতি ইঙ্গিত করে আমিরে জামায়াত বলেন, ‘ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা দেশের জ্ঞানী, শিক্ষিত, মার্জিত ও অভিজ্ঞ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে নির্যাতন করেছে, তারা শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। তারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তারা কথিত উন্নয়নের গালভরা বুলি শুনিয়েছেন। সবশেষে তারা পরপর তিন তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানেরা ছোট্ট একটা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। চাকরিতে কোটা সংস্কার করতে হবে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের যৌক্তিক দাবি বন্দুকের গুলির মুখে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ঠিক তখনই ছাত্ররা আগুনের মতো জ্বলে উঠেছিল। যারা আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল, জনগণ তাদেরকে এক দফা দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানোর মতো সৎ সাহস শেখ হাসিনার ছিল না। যে কারণে তিনিসহ তার দোসররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।’
ছাত্র-জনতার অবদানকে স্মরণ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে এই জাতি দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে ইনশাআল্লাহ। তরুণ-যুব সমাজ চাঁদাবাজমুক্ত, দখলবাজমুক্ত ও পেশিশক্তিমুক্ত নতুন দেশ চায়। আমরাও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। এই প্রজন্ম বুকের রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা ধরে রাখব ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম ছিল, যে শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনের কর্মভিত্তিক যোগ্যতার কোনো মিল ছিল না। যে কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে-বিদেশে কাক্সিক্ষত চাকরি পায়নি। আমরা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যার মাধ্যমে সন্তানেরা শিক্ষিত হয়ে দেশবাসীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই দেশবাসীর সেবা করবে। শিক্ষিতরা তাদের দায়-দায়িত্বগুলো বুঝতে পারবে, এমন একটি শিক্ষা আমরা চাই। আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে নৈতিকতা ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। কালো টাকা ও পেশিশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না। যারা কালো টাকা দিয়ে ভোটের মাঠে আসবে, তাদেরকে না বলে দিতে হবে। আমরা কারও টাকার কাছে নিজেদের ভোট বিক্রি করব না। ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচন কেন্দ্রিক সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত হোন।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে বদরগঞ্জ দশমাইল বাজারে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে এ সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘এই দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি চলবে না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি অফিস-আদালত, মিল-ফ্যাক্টরি ও কর্পোরেশনে দক্ষ লোকদের উপযুক্ত স্থানে বসাতে হবে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক কল্যাণমূলক। কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের সন্তানরা যেন দুর্নীতিমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ দেখে।’
তিনি আরও বলেন, যারা দেশ ও স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের যথাযথ সম্মান ও আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। জামায়াতের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সেবা ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাব।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন, সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমান, সদর থানার নায়েবে আমির বিল্লাহ হুসাইন ও সেক্রেটারি গোলাম রসুল।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির তাজউদ্দিন খান, কুতুবপুর ইউনিয়নের আমির খবির উদ্দিন, ইউনিয়ন অডিট সভাপতি রবিউল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক তারিফুল ইসলামসহ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।