ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
চুয়াডাঙ্গায় দোকানপাট বন্ধ রেখে সড়ক অবরোধ করে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

কাস্টমস কর্মকর্তার শাস্তি ও বন্ধ প্রতিষ্ঠান চালুর দাবি

এই অন্যায় দুর্ব্যবহার আমার প্রতিষ্ঠান, কর্মী এবং আমার জন্য অপমানজনক: সেলিম আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:২০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৪ বার পড়া হয়েছে

কাস্টমস কর্মকর্তার হাতে এক ব্যবসায়ীর লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরের শহীদ হাসান চত্বরে সড়র অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। লাঞ্ছিত হওয়া ব্যবসায়ী বলছেন, ন্যায় বিচার না হলে প্রতিষ্ঠান চালু করবেন না। প্রয়োজনে ব্যবসায় বন্ধ করে দেবেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৬ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে অভিযানের নামে ফিল্মি স্টাইলে তল্লাশী চালায় যশোর ভ্যাট এবং কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় প্রতিষ্ঠানের কোনো অনিয়ম খুঁজে না পেয়ে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান প্রতিষ্ঠানের মালিক সেলিম আহমেদের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেলিম আহমেদ ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এতে অপমানিত হয়ে মালিকপক্ষ গত ৯ জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে দেয়।
এতে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকসহ প্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্ভরশীল পাঁচ শতাধিক পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে। অবিলম্বে অভিযুক্ত অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনের শাস্তি, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্বারা অনৈতিক হয়রানি বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।

এসময় বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, সদস্যসচিব ও চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, সোনা জোয়ার্দ্দার, কিশোর কুমার কুণ্ডু, চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, চুয়াডাঙ্গা পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন চান্নু, সভাপতি মাসুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম রিংকুসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু বলেন, ‘একজন বিসিএস ক্যাডার, যিনি সরকারের এতবড় দায়িত্ব পালন করছেন, তার থেকে এমন অশিক্ষিতের ন্যায় আচরণ আমরা ব্যবসায়ীরা মেনে নিতে রাজি নই। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনি অভিযান চালাতেই পারেন, এটিই আপনার কাজ। কিন্তু একজন প্রতিষ্ঠান মালিককে কলার ধরে তার অফিস থেকে বের করে দেয়া কোন ধরণের শিষ্টাচার, তা আমাদের বোধগম্য হয় না। ৫০ লাখ টাকার ঘুষ চেয়ে আপনি যে ঘুষখোর কর্মকর্তা, তার প্রমাণও দিয়েছেন।’

ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু বলেন, ‘আমরা এই অন্যায় আচরণের বিচার চাই, ঘুষেখোর কর্মকর্তাকে তার চাকরি থেকে অপসারণ চাই। আজ মাত্র এক ঘণ্টার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।’

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের এবং দেশেরই সন্তান। কিন্তু তারা আজ ডাকাত হয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার শুরু করছেন। একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের ন্যায় এবং ঘুষ থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দেবে। অথচ আমাদের সেই আশা মাটিতে মিলিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা যেন তাদের ঘুষের নেশা আরও বাড়িয়ে ফেলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মকর্তাদের বলে যেতে চাই, অস্থায়ী রাজধানী বিপ্লবী জেলা চুয়াডাঙ্গাতে কোনো অন্যায় সহ্য করা হবে না। বঙ্গ পিভিসি যেখানে দুই শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে, যে প্রতিষ্ঠানটি জেলা পর্যায়ে পরপর তিনবার সেরা ভ্যাটদাতার সম্মাননা পেয়েছে, অথচ সেই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঘুষের নেশায় লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমরা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলে দিতে চাই, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই অন্যায়ের বিচার না হলে আমরা ব্যবসা বন্ধ করে দেব। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হবে আরও বৃহত্তর।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ গত ২৪ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমরা ২০১৮ থেকে ২০২২ অর্থবছরে পরপর তিনবার উৎপাদন পর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু সম্প্রতি যশোর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ প্রিভেনটিভ দল আমাদের কারখানায় অন্যায়ভাবে অভিযান চালায়।’

তিনি বলেন, ‘গত ৬ জানুয়ারি তারা কারখানায় এসে তল্লাশির নামে আমাদের বিভিন্ন কাগজপত্র তছনছ করে। অভিযানের সময়ই রাকিবুল হাসান সরাসরি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি তাঁর এই অন্যায় দাবি প্রত্যাখ্যান করলে তিনি অপমানজনক ভাষায় গালাগালি করেন এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।’ তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকার নিচে এর সমাধান সম্ভব নয়। টাকা না দিলে তোমার প্রতিষ্ঠান চলবে না। আমি তাদের ঘুষের বিরোধিতা করলে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান আমার জামার কলার চেপে ধরে টান দিয়ে আমার অফিস থেকেই আমাকে বের করে দেয়। এসময় আমার অফিস কক্ষের দরজার বাইরেই ফ্যাক্টারির ৩ জন স্টাফ উপস্থিত ছিলেন।’

সেলিম আহমেদ বলেন, ‘তাদের এই অন্যায় ও দুর্ব্যবহার আমার প্রতিষ্ঠান, কর্মী এবং আমার জন্য অপমানজনক। তল্লাশির নামে তারা আমার অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও নষ্ট করে এবং পুরো কারখানার কার্যক্রম ব্যহত করে। তাদের এই অমানবিক আচরণের কারণে আমরা চরম হতাশ হয়ে পড়ি। পরদিনই পুরো ঘটনাটি আমি চুয়াডাঙ্গা ভ্যাট কর্মকর্তাকে লিখিত জানায় এবং ৯ জানুয়ারি কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হই।’

বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, ‘এই বন্ধের ফলে আমাদের স্থায়ী ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অস্থায়ী আরও দেড় শতাধিক কর্মী এবং তাদের পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে, যে পরিবারগুলো এই প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। বরং আমরা নিয়ম মেনে কাজ করছি এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি।’

বক্তব্যে সেলিম আহমেদ, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা এবং প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আর কোনো হয়রানি সহ্য করব না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, এই ঘটনায় সঠিক তদন্ত করে আমাদের সুবিচার নিশ্চিত করা হোক।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় দোকানপাট বন্ধ রেখে সড়ক অবরোধ করে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

কাস্টমস কর্মকর্তার শাস্তি ও বন্ধ প্রতিষ্ঠান চালুর দাবি

এই অন্যায় দুর্ব্যবহার আমার প্রতিষ্ঠান, কর্মী এবং আমার জন্য অপমানজনক: সেলিম আহমেদ

আপলোড টাইম : ০৯:২০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

কাস্টমস কর্মকর্তার হাতে এক ব্যবসায়ীর লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরের শহীদ হাসান চত্বরে সড়র অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। লাঞ্ছিত হওয়া ব্যবসায়ী বলছেন, ন্যায় বিচার না হলে প্রতিষ্ঠান চালু করবেন না। প্রয়োজনে ব্যবসায় বন্ধ করে দেবেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৬ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে অভিযানের নামে ফিল্মি স্টাইলে তল্লাশী চালায় যশোর ভ্যাট এবং কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় প্রতিষ্ঠানের কোনো অনিয়ম খুঁজে না পেয়ে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান প্রতিষ্ঠানের মালিক সেলিম আহমেদের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেলিম আহমেদ ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এতে অপমানিত হয়ে মালিকপক্ষ গত ৯ জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে দেয়।
এতে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকসহ প্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্ভরশীল পাঁচ শতাধিক পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে। অবিলম্বে অভিযুক্ত অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনের শাস্তি, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্বারা অনৈতিক হয়রানি বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।

এসময় বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, সদস্যসচিব ও চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, সোনা জোয়ার্দ্দার, কিশোর কুমার কুণ্ডু, চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, চুয়াডাঙ্গা পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন চান্নু, সভাপতি মাসুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম রিংকুসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু বলেন, ‘একজন বিসিএস ক্যাডার, যিনি সরকারের এতবড় দায়িত্ব পালন করছেন, তার থেকে এমন অশিক্ষিতের ন্যায় আচরণ আমরা ব্যবসায়ীরা মেনে নিতে রাজি নই। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনি অভিযান চালাতেই পারেন, এটিই আপনার কাজ। কিন্তু একজন প্রতিষ্ঠান মালিককে কলার ধরে তার অফিস থেকে বের করে দেয়া কোন ধরণের শিষ্টাচার, তা আমাদের বোধগম্য হয় না। ৫০ লাখ টাকার ঘুষ চেয়ে আপনি যে ঘুষখোর কর্মকর্তা, তার প্রমাণও দিয়েছেন।’

ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু বলেন, ‘আমরা এই অন্যায় আচরণের বিচার চাই, ঘুষেখোর কর্মকর্তাকে তার চাকরি থেকে অপসারণ চাই। আজ মাত্র এক ঘণ্টার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।’

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের এবং দেশেরই সন্তান। কিন্তু তারা আজ ডাকাত হয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার শুরু করছেন। একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের ন্যায় এবং ঘুষ থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দেবে। অথচ আমাদের সেই আশা মাটিতে মিলিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা যেন তাদের ঘুষের নেশা আরও বাড়িয়ে ফেলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মকর্তাদের বলে যেতে চাই, অস্থায়ী রাজধানী বিপ্লবী জেলা চুয়াডাঙ্গাতে কোনো অন্যায় সহ্য করা হবে না। বঙ্গ পিভিসি যেখানে দুই শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে, যে প্রতিষ্ঠানটি জেলা পর্যায়ে পরপর তিনবার সেরা ভ্যাটদাতার সম্মাননা পেয়েছে, অথচ সেই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঘুষের নেশায় লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমরা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলে দিতে চাই, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই অন্যায়ের বিচার না হলে আমরা ব্যবসা বন্ধ করে দেব। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হবে আরও বৃহত্তর।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ গত ২৪ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমরা ২০১৮ থেকে ২০২২ অর্থবছরে পরপর তিনবার উৎপাদন পর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু সম্প্রতি যশোর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ প্রিভেনটিভ দল আমাদের কারখানায় অন্যায়ভাবে অভিযান চালায়।’

তিনি বলেন, ‘গত ৬ জানুয়ারি তারা কারখানায় এসে তল্লাশির নামে আমাদের বিভিন্ন কাগজপত্র তছনছ করে। অভিযানের সময়ই রাকিবুল হাসান সরাসরি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি তাঁর এই অন্যায় দাবি প্রত্যাখ্যান করলে তিনি অপমানজনক ভাষায় গালাগালি করেন এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।’ তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকার নিচে এর সমাধান সম্ভব নয়। টাকা না দিলে তোমার প্রতিষ্ঠান চলবে না। আমি তাদের ঘুষের বিরোধিতা করলে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান আমার জামার কলার চেপে ধরে টান দিয়ে আমার অফিস থেকেই আমাকে বের করে দেয়। এসময় আমার অফিস কক্ষের দরজার বাইরেই ফ্যাক্টারির ৩ জন স্টাফ উপস্থিত ছিলেন।’

সেলিম আহমেদ বলেন, ‘তাদের এই অন্যায় ও দুর্ব্যবহার আমার প্রতিষ্ঠান, কর্মী এবং আমার জন্য অপমানজনক। তল্লাশির নামে তারা আমার অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও নষ্ট করে এবং পুরো কারখানার কার্যক্রম ব্যহত করে। তাদের এই অমানবিক আচরণের কারণে আমরা চরম হতাশ হয়ে পড়ি। পরদিনই পুরো ঘটনাটি আমি চুয়াডাঙ্গা ভ্যাট কর্মকর্তাকে লিখিত জানায় এবং ৯ জানুয়ারি কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হই।’

বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, ‘এই বন্ধের ফলে আমাদের স্থায়ী ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অস্থায়ী আরও দেড় শতাধিক কর্মী এবং তাদের পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে, যে পরিবারগুলো এই প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। বরং আমরা নিয়ম মেনে কাজ করছি এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি।’

বক্তব্যে সেলিম আহমেদ, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা এবং প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আর কোনো হয়রানি সহ্য করব না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, এই ঘটনায় সঠিক তদন্ত করে আমাদের সুবিচার নিশ্চিত করা হোক।’