প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দেবে আজ
৫০৫ আসনের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ করছে দুটি কমিশন
- আপলোড টাইম : ১১:১১:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৬ বার পড়া হয়েছে
সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ- এই চারটি বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন আজ বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সম্পর্কিত সংস্কার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করছে। একইসঙ্গে ‘না’ ভোটের বিধান রাখাও প্রস্তাব করবে এই কমিশন। আর জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ) করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন রাখার এবং বর্তমান পদ্ধতিতেই নির্বাচন করার প্রস্তাব থাকছে। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার সুপারিশ করা হবে। যারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি, এখানে নির্বাচন হবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট ৫০৫টি আসন রাখার প্রস্তাব করবে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
গতকালের ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আজ চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর রিপোর্ট নিয়ে একটু আলাপ হবে, পুরো জিনিসটি তারা বলবেন কী কী পাওয়া গেছে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আশা করছি এই মিটিং হবে। এরপর দুপুর তিনটায় সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জানাবেন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দফায় গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ-সম্বলিত প্রতিবেদন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে ছয়টি কমিশনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। বর্ধিত সময় অনুযায়ী আজ চারটি কমিশন প্রতিবেদন দাখিল করতে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় নিয়েছে। আর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও চলতি মাসেই প্রতিবেদন জমা দেবে।
দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’
ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসমূহ, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজসহ সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে নবঘোষিত ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’। ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সহ-সভাপতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আর এই কমিশনের সদস্য হিসেবে থাকছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
সংবিধান সংস্কার কমিশন:
সংবিধান সংস্কার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র রোধে বা এক ব্যক্তির হাতে যাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে না যায়, সে জন্য ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ থাকছে। বিদ্যমান সংবিধানের মূলনীতিতেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ থাকছে। নিম্নকক্ষের ৪০০টি আসনে নির্বাচন হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে। আর উচ্চকক্ষে মোট ১০৫ আসনের ৫টি থাকবে রাষ্ট্রপতির হাতে। তিনি এই পাঁচ আসনে সংসদ সদস্য মনোনয়ন দেবেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতির হাতে পাঁচটি আসন রাখার প্রস্তাব করবে কমিশন। উচ্চকক্ষের বাকি ১০০টি আসনে নির্বাচন হবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে। দলগুলো নির্বাচনে যত ভোট পাবে তার অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন পাবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কয়টি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা যাতে না হন, এমন বিধান; নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করা; নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান; প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাবও থাকছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন:
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনে সংশোধন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো এবং নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার জায়গা তৈরির সুপারিশ থাকছে প্রতিবেদনে।
দুদক সংস্কারে ৪৭ সুপারিশ:
দুর্নীতি দমন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে ৪৭টি প্রস্তাবনা দেওয়া হচ্ছে প্রতিবেদনে। যেখানে মোটা দাগে প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের কাছে দুদকের দায়বদ্ধ নিশ্চিত করা হবে। দুদকের অভ্যন্তরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দেওয়া পদায়নে নিয়ন্ত্রণ আনার ব্যাপারেও সুপারিশ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় সাবেক আমলাদের নিয়ে দুর্নীতির অনুসন্ধান দূরূহ, সেখানে অভিজ্ঞদের সঙ্গে তরুণদেরও নিতে হবে। দুদক কর্মকর্তদের পরিচয়গত দিক থেকে যে আইনি স্বীকৃতি সেখানেও পরিবর্তন আসবে। একচ্ছত্র ক্ষমতা যে প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে না, দায়বদ্ধ থাকবে জনগণের কাছেও।