ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঋণের বোঝা বাড়বে নিম্নবিত্তের

মূল্যস্ফীতির চাপে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৬:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

দেশে গত দুই বছর ধরেই খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে স্বল্প আয়ের মানুষ সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অনেকেই সমবায় সমিতি, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মীসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই দুঃসময়ে নতুন করে বাড়তি ভ্যাটের বোঝা বাড়ায় সীমিত আয়ে নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ শ্রেণির মানুষের ঋণের বোঝা নতুন করে আরও বাড়বে। যা পরিশোধ করা অনেকের পক্ষেই দুস্কর হবে। অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় ১০০ পণ্য ও সেবার মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে। এসব খাতে বর্তমানে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে। নতুন করে ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে সংসার খরচ গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ খরচ বাড়বে। চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসিক খরচ ৩০ হাজার টাকা হলে সেই পরিবারের খরচ বাড়বে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এ বাড়তি খরচে সাধারণ মানুষের কষ্ট যেমন বাড়বে, তেমনি ঋণের বোঝাও বাড়বে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, সরকার পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে পারত। এতে গরিব বা কম আয়ের মানুষের ওপর চাপ পড়ত না। আইএমএফের চাপে সরকার এটা করলেও নিম্নআয়ের মানুষকে এর চরম খেসারত দিতে হবে। বাড়তি ঋণের বোঝার চাপে নিম্নবিত্ত মানুষ দিশেহারা হয়ে নানা বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়তে পারে। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে হুট করে শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর বা (ভ্যাট) বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি বলে মনে করেন তারা। এদিকে হঠাৎ করে উচ্চহারে ভ্যাট আরোপের ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া না হলেও অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজস্ব আদায়ে ধস নামার প্রভাব ঠেকাতে এবং আইএমএফ-এর কাছ থেকে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্যই সরকার কর আদায়ের এ সহজ পথ বেছে নিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফ-এর সঙ্গে আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দরকষাকষিতে অদক্ষতার কারণেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে অর্থ উপদেষ্টা যে দাবি করেছেন, তা অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর বাড়ানোর কারণে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, জামা কাপড়, রেস্তোরাঁর খাবার, ঔষধ, মিষ্টি, ফলের রস ও এলপি গ্যাসসহ অনেক খাতেই মানুষের খরচ বাড়বে। আর এসব পণ্যের উর্ধ্বমূল্যের প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপরও পড়বে। তাই নিম্নবিত্তেরও এ ফাঁস থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী শুল্ক বা ভ্যাট এভাবে না বাড়িয়ে সরকার আর কী পদক্ষেপ নিতে পারত- তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের অভিমত, সরকার প্রত্যক্ষ কর বাড়ালে এবং কর ফাঁকি রোধে উদ্যোগী হলে সাধারণ মানুষের ওপর এ চাপ তৈরি করতে হতো না। এছাড়া নানারকম সম্পদের ওপর কর দেওয়া যেত। যেমন একাধিক বাড়ি বা গাড়ীর ক্ষেত্রে কর পুনর্বিন্যাস করতে পারত। সম্পদের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে করের স্স্নাব নির্ধারণ করা যেত। দুর্নীতিবাজ যাদের সম্পদ জব্দ হয়েছে বা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়েছে সেগুলোকে ব্যবহার করা যেত। এতে করে বৈষম্য কমত, দুর্নীতি দমন ও লুটপাটকারীদের শাস্তির কর্মসূচি অগ্রসর হতো এবং মুদ্রাস্ফীতিতে কোনো বাড়তি চাপ পড়ত না বলে যুক্তি তুলে ধরেন একাধিক অর্থনীতিবিদ।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকার অধ্যাদেশ জারি করে আইএমএফের চাপে প্রায় শত খাতে খরচ বাড়িয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে কষ্টে ফেলেছে। শুধু সিগারেট বাদ দিলে বাকি সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত। এতে করে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে এবং তা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে। অনেকে জীবন চালাতে শেষ সঞ্চয় ভেঙেছে, ভিটেমাটি বিক্রি করেছে। অনেকে ধারদেনাও করেছে। এখন জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়লে সংসার চালাতে গিয়ে এসব মানুষকে আরও নতুন করে ধারের জন্য কারো না কারো কাছে হাত পাততে হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যয় বাড়ানোয় জীবনযাত্রা চালিয়ে নিতে সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে ফেলবে। এতে তরুণ-তরুণীরা পুঁজির অভাবে ব?্যবসায় আসতে পারবেন না। একদিকে চাকরি নেই। অন্যদিকে ব্যবসা করতে পারবেন না। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়বে। আয় না বাড়লে পরিবারে সচ্ছলতা আসবে না। আর্থিক সংকট কমবে না। বরং বাড়বে।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের বছর ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮। গত বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ছিল মানুষ। সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। উল্টো বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। বিবিএসের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৬০ হাজার, যা এক বছর আগে ওই সময়ে ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার।

এদিকে, অর্থনৈতিক গবেষকরা বলছেন, বাড়তি ভ্যাট আদায়ের খড়গে দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ঘটবে এবং এ কারণে নতুন করে হতদরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। ঋণের বোঝায় ন্যুব্জ মানুষের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়াবে। ঋণ পরিশোধের অক্ষমতার কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কাও করছেন তারা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়, মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট আয় দিয়ে তারা আগের তুলনায় কম দ্রব্য বা সেবা কিনতে পারছেন। এতে করে ৭৮ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছেন। অতি দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়েছেন প্রায় এক কোটি মানুষ। এ ছাড়া ৩৮ লাখ মানুষ দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র শ্রেণিতে নেমে এসেছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন সব মিলিয়ে ২ কোটির বেশি মানুষ।

বিভিন্ন পেশার নিম্নআয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কায় তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আগামী দিনগুলোতে কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ঋণের বোঝা বাড়বে নিম্নবিত্তের

মূল্যস্ফীতির চাপে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম

আপলোড টাইম : ১০:৩৬:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

দেশে গত দুই বছর ধরেই খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে স্বল্প আয়ের মানুষ সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অনেকেই সমবায় সমিতি, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মীসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই দুঃসময়ে নতুন করে বাড়তি ভ্যাটের বোঝা বাড়ায় সীমিত আয়ে নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ শ্রেণির মানুষের ঋণের বোঝা নতুন করে আরও বাড়বে। যা পরিশোধ করা অনেকের পক্ষেই দুস্কর হবে। অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় ১০০ পণ্য ও সেবার মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে। এসব খাতে বর্তমানে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে। নতুন করে ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে সংসার খরচ গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ খরচ বাড়বে। চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসিক খরচ ৩০ হাজার টাকা হলে সেই পরিবারের খরচ বাড়বে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এ বাড়তি খরচে সাধারণ মানুষের কষ্ট যেমন বাড়বে, তেমনি ঋণের বোঝাও বাড়বে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, সরকার পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে পারত। এতে গরিব বা কম আয়ের মানুষের ওপর চাপ পড়ত না। আইএমএফের চাপে সরকার এটা করলেও নিম্নআয়ের মানুষকে এর চরম খেসারত দিতে হবে। বাড়তি ঋণের বোঝার চাপে নিম্নবিত্ত মানুষ দিশেহারা হয়ে নানা বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়তে পারে। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে হুট করে শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর বা (ভ্যাট) বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি বলে মনে করেন তারা। এদিকে হঠাৎ করে উচ্চহারে ভ্যাট আরোপের ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া না হলেও অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজস্ব আদায়ে ধস নামার প্রভাব ঠেকাতে এবং আইএমএফ-এর কাছ থেকে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্যই সরকার কর আদায়ের এ সহজ পথ বেছে নিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফ-এর সঙ্গে আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দরকষাকষিতে অদক্ষতার কারণেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে অর্থ উপদেষ্টা যে দাবি করেছেন, তা অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর বাড়ানোর কারণে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, জামা কাপড়, রেস্তোরাঁর খাবার, ঔষধ, মিষ্টি, ফলের রস ও এলপি গ্যাসসহ অনেক খাতেই মানুষের খরচ বাড়বে। আর এসব পণ্যের উর্ধ্বমূল্যের প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপরও পড়বে। তাই নিম্নবিত্তেরও এ ফাঁস থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী শুল্ক বা ভ্যাট এভাবে না বাড়িয়ে সরকার আর কী পদক্ষেপ নিতে পারত- তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের অভিমত, সরকার প্রত্যক্ষ কর বাড়ালে এবং কর ফাঁকি রোধে উদ্যোগী হলে সাধারণ মানুষের ওপর এ চাপ তৈরি করতে হতো না। এছাড়া নানারকম সম্পদের ওপর কর দেওয়া যেত। যেমন একাধিক বাড়ি বা গাড়ীর ক্ষেত্রে কর পুনর্বিন্যাস করতে পারত। সম্পদের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে করের স্স্নাব নির্ধারণ করা যেত। দুর্নীতিবাজ যাদের সম্পদ জব্দ হয়েছে বা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়েছে সেগুলোকে ব্যবহার করা যেত। এতে করে বৈষম্য কমত, দুর্নীতি দমন ও লুটপাটকারীদের শাস্তির কর্মসূচি অগ্রসর হতো এবং মুদ্রাস্ফীতিতে কোনো বাড়তি চাপ পড়ত না বলে যুক্তি তুলে ধরেন একাধিক অর্থনীতিবিদ।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকার অধ্যাদেশ জারি করে আইএমএফের চাপে প্রায় শত খাতে খরচ বাড়িয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে কষ্টে ফেলেছে। শুধু সিগারেট বাদ দিলে বাকি সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত। এতে করে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে এবং তা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে। অনেকে জীবন চালাতে শেষ সঞ্চয় ভেঙেছে, ভিটেমাটি বিক্রি করেছে। অনেকে ধারদেনাও করেছে। এখন জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়লে সংসার চালাতে গিয়ে এসব মানুষকে আরও নতুন করে ধারের জন্য কারো না কারো কাছে হাত পাততে হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যয় বাড়ানোয় জীবনযাত্রা চালিয়ে নিতে সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে ফেলবে। এতে তরুণ-তরুণীরা পুঁজির অভাবে ব?্যবসায় আসতে পারবেন না। একদিকে চাকরি নেই। অন্যদিকে ব্যবসা করতে পারবেন না। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়বে। আয় না বাড়লে পরিবারে সচ্ছলতা আসবে না। আর্থিক সংকট কমবে না। বরং বাড়বে।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের বছর ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮। গত বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ছিল মানুষ। সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। উল্টো বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। বিবিএসের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৬০ হাজার, যা এক বছর আগে ওই সময়ে ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার।

এদিকে, অর্থনৈতিক গবেষকরা বলছেন, বাড়তি ভ্যাট আদায়ের খড়গে দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ঘটবে এবং এ কারণে নতুন করে হতদরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। ঋণের বোঝায় ন্যুব্জ মানুষের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়াবে। ঋণ পরিশোধের অক্ষমতার কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কাও করছেন তারা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়, মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট আয় দিয়ে তারা আগের তুলনায় কম দ্রব্য বা সেবা কিনতে পারছেন। এতে করে ৭৮ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছেন। অতি দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়েছেন প্রায় এক কোটি মানুষ। এ ছাড়া ৩৮ লাখ মানুষ দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র শ্রেণিতে নেমে এসেছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন সব মিলিয়ে ২ কোটির বেশি মানুষ।

বিভিন্ন পেশার নিম্নআয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কায় তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আগামী দিনগুলোতে কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।