ইপেপার । আজ রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় চাঁদাবাজির সময় বিএনপির সম্পাদক সোহেল গ্রেপ্তার

দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : পৌর বিএনপির সভাপতিদলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : পৌর বিএনপির সভাপতি

নিজস্ব গ্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৬:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা পৌর ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাকে (৪০) চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কোর্ট মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা মুক্তিপাড়ার জামাত আলীর ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুক্তিপাড়ার নুরুজ্জামান নামে একজন ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানাসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল চাঁদাবাজ চক্র তার নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না পেয়ে অভিযুক্তরা ৬ গাড়ি ইট ও ২ টন রড এবং ৩০ সেফটি কাঠ জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এবং হুমকি দিয়ে যায়, বিষয়টি যদি নুরুজ্জামান তার আত্মীয়-স্বজন ও গ্রতিবেশীদের জানায়, তাহলে তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করবে চাঁদাবাজ চক্রটি।

গত ৬ জানুয়ারি আবারও জোর করে ২ হাজার ইট নিয়ে যায় ওই চাঁদাবাজ চক্রটি। পরে ভয় পেয়ে নুরুজ্জামান বাড়ি করার বাকি ৬০ হাজার ইট অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেন। গতকাল মঙ্গলবার ওই ইট ট্রাকযোগে সারানোর সময় সোহেল রানাসহ কয়েকজন বাধা দিয়ে বলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে ইট সরাতে দেবে না তারা। পরে বিষয়টি নুরুজ্জামান পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে সদর থানার এসআই বাবুল খানসহ সঙ্গীয় ফোর্স কোর্ট মোড় এলাকার ঘটনাস্থল থেকে সোহেল রানাকে আটক করে থানা হেফাজতে নেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই নুরুজ্জামানের স্ত্রী আরিফা পারভীন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ থাকলেও ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি বলে জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। সোহেল রানাসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল চাঁদাবাজ চক্র বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের চাঁদাবাজি করছিল বলে গুঞ্জন ছিল ৫ আগস্টের পর থেকেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিএনপি নেতা বলেন, ‘এ ধরনের গুঞ্জন আমরা শুনছিলাম। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।’ পৌর এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই রানা ৫ তারিখের পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করছিল। ১০-১২ জন সাথে নিয়ে সে হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছিল। বেশ কয়েকটি ঘটনায় মৌখিকভাবে তাকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা সাবধানও করেছিল বলে শুনেছি।’

চাঁদাবাজির ঘটনায় সোহেল রানা নামে ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সদর থানা পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে সোহেল রানা নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নুরুজ্জামানের স্ত্রী আরিফা পারভিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তার বিরুদ্ধে পূর্বের আর কোনো অভিযোগ আছে কি না, তা ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মামলায় তাকে আগামীকাল (আজ বুধবার) আদালতে সোপর্দ করা হবে।’

এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি বলেন, ‘শুনেছি ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাকে আটক করেছে পুলিশ। তবে কি কারণে তাকে আটক করেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানতে পারিনি।’

সিরাজুল ইসলাম মনি আরও বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কজে যদি তিনি জড়িত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে কোনো বিএনপি নেতা-কর্মী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বা দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কোনো ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেন, তাহলে তার দায় নেবে না দল। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করাসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় চাঁদাবাজির সময় বিএনপির সম্পাদক সোহেল গ্রেপ্তার

দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : পৌর বিএনপির সভাপতিদলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : পৌর বিএনপির সভাপতি

আপলোড টাইম : ০৯:১৬:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা পৌর ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাকে (৪০) চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কোর্ট মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা মুক্তিপাড়ার জামাত আলীর ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুক্তিপাড়ার নুরুজ্জামান নামে একজন ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানাসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল চাঁদাবাজ চক্র তার নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না পেয়ে অভিযুক্তরা ৬ গাড়ি ইট ও ২ টন রড এবং ৩০ সেফটি কাঠ জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এবং হুমকি দিয়ে যায়, বিষয়টি যদি নুরুজ্জামান তার আত্মীয়-স্বজন ও গ্রতিবেশীদের জানায়, তাহলে তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করবে চাঁদাবাজ চক্রটি।

গত ৬ জানুয়ারি আবারও জোর করে ২ হাজার ইট নিয়ে যায় ওই চাঁদাবাজ চক্রটি। পরে ভয় পেয়ে নুরুজ্জামান বাড়ি করার বাকি ৬০ হাজার ইট অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেন। গতকাল মঙ্গলবার ওই ইট ট্রাকযোগে সারানোর সময় সোহেল রানাসহ কয়েকজন বাধা দিয়ে বলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে ইট সরাতে দেবে না তারা। পরে বিষয়টি নুরুজ্জামান পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে সদর থানার এসআই বাবুল খানসহ সঙ্গীয় ফোর্স কোর্ট মোড় এলাকার ঘটনাস্থল থেকে সোহেল রানাকে আটক করে থানা হেফাজতে নেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই নুরুজ্জামানের স্ত্রী আরিফা পারভীন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ থাকলেও ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি বলে জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। সোহেল রানাসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল চাঁদাবাজ চক্র বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের চাঁদাবাজি করছিল বলে গুঞ্জন ছিল ৫ আগস্টের পর থেকেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিএনপি নেতা বলেন, ‘এ ধরনের গুঞ্জন আমরা শুনছিলাম। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।’ পৌর এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই রানা ৫ তারিখের পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করছিল। ১০-১২ জন সাথে নিয়ে সে হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছিল। বেশ কয়েকটি ঘটনায় মৌখিকভাবে তাকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা সাবধানও করেছিল বলে শুনেছি।’

চাঁদাবাজির ঘটনায় সোহেল রানা নামে ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সদর থানা পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে সোহেল রানা নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নুরুজ্জামানের স্ত্রী আরিফা পারভিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তার বিরুদ্ধে পূর্বের আর কোনো অভিযোগ আছে কি না, তা ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মামলায় তাকে আগামীকাল (আজ বুধবার) আদালতে সোপর্দ করা হবে।’

এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি বলেন, ‘শুনেছি ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাকে আটক করেছে পুলিশ। তবে কি কারণে তাকে আটক করেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানতে পারিনি।’

সিরাজুল ইসলাম মনি আরও বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কজে যদি তিনি জড়িত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে কোনো বিএনপি নেতা-কর্মী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বা দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কোনো ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেন, তাহলে তার দায় নেবে না দল। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করাসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’