লন্ডন গেলেন খালেদা জিয়া, পথে পথে মানুষের ঢল
- আপলোড টাইম : ০৮:৩৩:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে
উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে নিজের গাড়িতে করে রওনা হন তিনি। তার গাড়িবহর কাকলি গোলচত্বর হয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ১০টায় কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ বিমান ‘রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ করে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি। ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কাতারের রাজধানী দোহা হয়ে আজ বুধবার সকালে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে নামার পর খালেদা জিয়াকে সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হবে। বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ বিএনপি চেয়ারপারসনকে ভর্তি করা হবে। সেখানকার চিকিৎসকরাই তার পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেবেন।০
এদিকে বিদেশযাত্রার প্রাক্কালে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে বিকেল থেকেই গুলশানের বাসভবন ফিরোজার সামনে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। সড়কে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরাও ভিড় জমান। সন্ধ্যার পর ফিরোজার সামনের সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর ছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে খালেদা জিয়ার বাসায় প্রবেশ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসময় তিনি গেটের সামনে থাকা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকুন। এসময় রাস্তা ফাঁকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। এসময় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ দল ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন পর নেত্রীকে বিদায় জানাতে এবং এক নজর দেখতে গুলশান থেকে বিমানবন্দর সড়কে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। গুলশান-২, বনানী এবং বিমানবন্দরের রাস্তায় অবস্থান নেন লাখো নেতা-কর্মী। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তারা।
৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ছাড়াও হৃদরোগ, কিডনি, আর্থ্রাইটিসসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগছেন। এর আগে চিকিৎসার জন্য সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় তিন মাসের বেশি সময় পর ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরেছিলেন তিনি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সফরসঙ্গী মোট ১৬ জন।
ডা. জাহিদ জানান, কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রাজকীয় কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারা মেডিক্সগণ রয়েছেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের ছয়জন সদস্য এই বিমানে যাচ্ছেন। তারা হলেন- অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নূরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এছাড়া বেগম জিয়ার সঙ্গে তার প্রয়াত ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এদিকে লন্ডনে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হিথরো বিমানবন্দরে থাকার কথা রয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সেখানে থাকবেন। এর মধ্যদিয়ে প্রায় সাড়ে সাত বছর পর মা-ছেলের দেখা হবে।
যাত্রাপথে কাতারে এক ঘণ্টার বিরতি (এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে জ্বালানি নেওয়া) থাকবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী। জানা গেছে, লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সামগ্রিক সমন্বয় করবেন তার পুত্রবধূ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জুবাইদা রহমান এবং অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মেডিক্যাল টিম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও লন্ডনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ম্যাডামকে বরণ করতে প্রস্তুত রয়েছি। তবে তার স্বাস্থ্যগত বিষয় চিন্তা করে বিমানবন্দরে যাতে লোকজন জড়ো না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করছেন।’