ইপেপার । আজ রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প

পুকুর নয় রীতিমতো সাগর চুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে


পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে দেশে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিলেন তাতে আওয়ামী লীগার ছাড়া কারো সন্দেহ ছিল না। মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই, যা বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে তারা করেনি। দীর্ঘ এ সময়ে হাসিনা নিজে, তার পরিবারের সব সদস্য এবং সাঙ্গোপাঙ্গরা দেশকে লুটেপুটে খেয়েছেন। তাদের নীতি ছিল ‘ওলটপালট করে দে মা লুটেপুটে খাই।’ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্র্বতী সরকার যেখানে হাত দিচ্ছে সেখানেই দেখতে পাচ্ছে বিগত সরকারের ধ্বংসযজ্ঞ। বিশেষ করে উন্নয়নের নামে চলেছে হরিলুট। মূলত তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি। বলা ভালো, এই দেড় দশকে উন্নয়নের নামে নেয়া সব প্রকল্প গ্রহণের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিল কিভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। এখন পতিত ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের অকল্পনীয় কাহিনীর অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এমন একটি প্রকল্প- বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বাস্তবায়িত ‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়)’। এতে পুকুর নয় সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় নিয়ম ভেঙে। এর বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। প্রাথমিক অডিট আপত্তিতে প্রকল্পের ১৩টি খাতে রাষ্ট্রের দুই হাজার ৪৩ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি উদঘাটিত হয়েছে। নয়া দিগন্তের খবরে বলা হয়েছে, পিপিআর, ২০০৮ এবং স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের মৌলিক নীতিপরিপন্থী কাজের মাধ্যমে প্রতিযোগিতাহীন দরে চুক্তি সম্পাদন করায় শুরুতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অপ্রয়োজনীয় শর্ত বাদ দেয়া হলে ২২ জন দরপত্র ক্রয়কারীর প্রায় সবাই টেন্ডারে অংশ নিতে পারতেন। এতে রাষ্ট্র খুব কম খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারত। বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের অডিট আপত্তি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে পরস্পর যোগসাজশে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে স্ক্রুড স্টিল পাইল (এসএসপি) ব্যবহারের শর্ত আরোপ করে অবাধ প্রতিযোগিতা সঙ্কোচনের মাধ্যমে অনিয়মিতভাবে ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৯ টাকার চুক্তি সম্পাদন করা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি টেন্ডার ডকুমেন্টে অপ্রাসঙ্গিক সীমাবদ্ধ ধারা এসএসপি সংযোজনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে টেন্ডার ডকুমেন্ট ক্রয়কারী একটি প্রতিষ্ঠান বেবিচককে পত্র দিলে সংস্থাটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য পত্রটি সিপিটিইউ বরাবর পাঠায়। সিপিটিইউয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্রয়কারীকে টেন্ডার ডকুমেন্টে এমন কোনো শর্তারোপ করা যাবে না, যার কারণে পিপিআর, ২০০৮ এবং স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের ক্রয়কার্যে অবাধ প্রতিযোগিতা, স্বচ্ছতা এবং সম-আচরণের মতো মৌলিক নীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। অর্থাৎ এসএসপি ব্যবহারের শর্ত থাকা অবাধ ও সম-আচরণের পরিপন্থী। এর পরও প্রকল্প পরিচালক শর্ত পরিবর্তন করেননি। অনুমান করা অন্যায্য হবে না যে, ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ের সায় না থাকলে এভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাট বা আত্মসাৎ করা অসম্ভব। বর্তমান সরকার রাষ্ট্র-সমাজ থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প

পুকুর নয় রীতিমতো সাগর চুরি

আপলোড টাইম : ১০:৩৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫


পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে দেশে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিলেন তাতে আওয়ামী লীগার ছাড়া কারো সন্দেহ ছিল না। মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই, যা বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে তারা করেনি। দীর্ঘ এ সময়ে হাসিনা নিজে, তার পরিবারের সব সদস্য এবং সাঙ্গোপাঙ্গরা দেশকে লুটেপুটে খেয়েছেন। তাদের নীতি ছিল ‘ওলটপালট করে দে মা লুটেপুটে খাই।’ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্র্বতী সরকার যেখানে হাত দিচ্ছে সেখানেই দেখতে পাচ্ছে বিগত সরকারের ধ্বংসযজ্ঞ। বিশেষ করে উন্নয়নের নামে চলেছে হরিলুট। মূলত তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি। বলা ভালো, এই দেড় দশকে উন্নয়নের নামে নেয়া সব প্রকল্প গ্রহণের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিল কিভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। এখন পতিত ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের অকল্পনীয় কাহিনীর অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এমন একটি প্রকল্প- বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বাস্তবায়িত ‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়)’। এতে পুকুর নয় সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় নিয়ম ভেঙে। এর বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। প্রাথমিক অডিট আপত্তিতে প্রকল্পের ১৩টি খাতে রাষ্ট্রের দুই হাজার ৪৩ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি উদঘাটিত হয়েছে। নয়া দিগন্তের খবরে বলা হয়েছে, পিপিআর, ২০০৮ এবং স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের মৌলিক নীতিপরিপন্থী কাজের মাধ্যমে প্রতিযোগিতাহীন দরে চুক্তি সম্পাদন করায় শুরুতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অপ্রয়োজনীয় শর্ত বাদ দেয়া হলে ২২ জন দরপত্র ক্রয়কারীর প্রায় সবাই টেন্ডারে অংশ নিতে পারতেন। এতে রাষ্ট্র খুব কম খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারত। বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের অডিট আপত্তি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে পরস্পর যোগসাজশে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে স্ক্রুড স্টিল পাইল (এসএসপি) ব্যবহারের শর্ত আরোপ করে অবাধ প্রতিযোগিতা সঙ্কোচনের মাধ্যমে অনিয়মিতভাবে ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৯ টাকার চুক্তি সম্পাদন করা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি টেন্ডার ডকুমেন্টে অপ্রাসঙ্গিক সীমাবদ্ধ ধারা এসএসপি সংযোজনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে টেন্ডার ডকুমেন্ট ক্রয়কারী একটি প্রতিষ্ঠান বেবিচককে পত্র দিলে সংস্থাটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য পত্রটি সিপিটিইউ বরাবর পাঠায়। সিপিটিইউয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্রয়কারীকে টেন্ডার ডকুমেন্টে এমন কোনো শর্তারোপ করা যাবে না, যার কারণে পিপিআর, ২০০৮ এবং স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের ক্রয়কার্যে অবাধ প্রতিযোগিতা, স্বচ্ছতা এবং সম-আচরণের মতো মৌলিক নীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। অর্থাৎ এসএসপি ব্যবহারের শর্ত থাকা অবাধ ও সম-আচরণের পরিপন্থী। এর পরও প্রকল্প পরিচালক শর্ত পরিবর্তন করেননি। অনুমান করা অন্যায্য হবে না যে, ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ের সায় না থাকলে এভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাট বা আত্মসাৎ করা অসম্ভব। বর্তমান সরকার রাষ্ট্র-সমাজ থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।