ইপেপার । আজ শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

আরাকানে নতুন বাস্তবতা: রোহিঙ্গা সঙ্কট ঝুলে গেল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের মংডু শহর দখল করেছে সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর ফলে সীমান্তসংলগ্ন অন্তত ২৭০ কিলোমিটার এলাকা এখন তাদের দখলে। সেখানে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। সেখানকার অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। কারণ আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জাতিগত অস্তিত্ব স্বীকার করে না। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে মংডু সীমান্ত এলাকায় তিন শতাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। নারী-শিশুসহ এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষা করছে। নয়া দিগন্তের এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, অপেক্ষারত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় এ দেশের দালালদের সাথে দেনদরবার করছে। দালালরা জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক। টেকনাফ ও বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে টহল বাড়িয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু সঙ্কট অন্য জায়গায়। রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জান্তা সরকারের সাথে দেন-দরবার করা অর্থহীন হয়ে পড়ল। আবার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগের সুযোগও থাকল না। এ কারণে সঙ্কট সমাধানের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে কম। খবরে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের টেকনাফ উখিয়ার শিবিরগুলোতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিদ্রোহী আরাকান আর্মি সে দেশে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের কেউ রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এ দিকে রোহিঙ্গাশিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আরসা নামের একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপ রোহিঙ্গাশিবিরে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে ভারী অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে আরসার সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পে মহড়া দিচ্ছে। রাতে তারা বেরিয়ে পড়ছে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। সকালে ফিরে এসে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে যায়। তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। এ বিষয়ে সরকারের তরফে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেছেন, তারা এই মুহূর্তে অর্ন্তর্র্বতী সরকারের সাথে আলোচনা করার একান্ত তাগিদ বোধ করছেন। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরকারেরও দ্রুত পদক্ষেপ দরকার। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান চাপে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়া মিয়ানমারের জান্তা সরকার এখন অস্তিত্ব রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার অবকাশ তারা পাবে না। দেশটিতে কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি না ফেরা পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলে থাকবে বলেই মনে হয়। তবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বা অন্য কোনো সুযোগসন্ধানীরা যাতে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ না পায় সেটি এই মুহূর্তেই নিশ্চিত করতে হবে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কুশীলবদের সাথে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার সুযোগ খতিয়ে দেখা যেতে পারে। আরাকান আর্মি মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের মদদ পাচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

আরাকানে নতুন বাস্তবতা: রোহিঙ্গা সঙ্কট ঝুলে গেল

আপলোড টাইম : ১০:২০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের মংডু শহর দখল করেছে সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর ফলে সীমান্তসংলগ্ন অন্তত ২৭০ কিলোমিটার এলাকা এখন তাদের দখলে। সেখানে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। সেখানকার অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। কারণ আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জাতিগত অস্তিত্ব স্বীকার করে না। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে মংডু সীমান্ত এলাকায় তিন শতাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। নারী-শিশুসহ এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষা করছে। নয়া দিগন্তের এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, অপেক্ষারত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় এ দেশের দালালদের সাথে দেনদরবার করছে। দালালরা জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক। টেকনাফ ও বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে টহল বাড়িয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু সঙ্কট অন্য জায়গায়। রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জান্তা সরকারের সাথে দেন-দরবার করা অর্থহীন হয়ে পড়ল। আবার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগের সুযোগও থাকল না। এ কারণে সঙ্কট সমাধানের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে কম। খবরে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের টেকনাফ উখিয়ার শিবিরগুলোতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিদ্রোহী আরাকান আর্মি সে দেশে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের কেউ রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এ দিকে রোহিঙ্গাশিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আরসা নামের একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপ রোহিঙ্গাশিবিরে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে ভারী অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে আরসার সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পে মহড়া দিচ্ছে। রাতে তারা বেরিয়ে পড়ছে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। সকালে ফিরে এসে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে যায়। তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। এ বিষয়ে সরকারের তরফে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেছেন, তারা এই মুহূর্তে অর্ন্তর্র্বতী সরকারের সাথে আলোচনা করার একান্ত তাগিদ বোধ করছেন। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরকারেরও দ্রুত পদক্ষেপ দরকার। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান চাপে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়া মিয়ানমারের জান্তা সরকার এখন অস্তিত্ব রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার অবকাশ তারা পাবে না। দেশটিতে কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি না ফেরা পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলে থাকবে বলেই মনে হয়। তবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বা অন্য কোনো সুযোগসন্ধানীরা যাতে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ না পায় সেটি এই মুহূর্তেই নিশ্চিত করতে হবে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কুশীলবদের সাথে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার সুযোগ খতিয়ে দেখা যেতে পারে। আরাকান আর্মি মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের মদদ পাচ্ছে।