ঝিনাইদহে সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও চুয়াডাঙ্গার প্রশাসন নীরব
ডিসি-এসপির নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা বাড়িয়েছে প্রতারকরা
- আপলোড টাইম : ১০:০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৫২ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গায় সমাধান ফাউন্ডেশনের প্রতারণার ঘটনা আগে সামনে এলেও এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। একটি তদন্ত করার নির্দেশনা জেলা প্রশাসক দিলেও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন। অথচ প্রশাসনের তদন্তে দেরি এবং ব্যবস্থা না নেয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার পরিমাণ বাড়াচ্ছে প্রতারকরা। তবে ঝিনাইদহ প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের কার্যকরি পদক্ষেপে আটক করা হয়েছে সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান। তবে চুয়াডাঙ্গায় প্রশাসনের ঢিলেমিকে সচেতন মহল ভালো নজরে দেখছে না। পত্র-পত্রিকায় স্পষ্ট করে প্রতারণা, প্রতারণার ধরণ, সেই সাথে কার্যক্রমের আইনগত ভিত্তি না থাকার বিষয়গুলো স্পষ্ট করে উঠে আসলেও চুয়াডাঙ্গার প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে কেন গড়িমসি করছে, সেটা নিয়ে এখন উঠেছে নতুন প্রশ্ন। তবে ঝিনাইদহ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় প্রতারণা করতে বিভিন্ন হেভিওয়েট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়েছেন, করেছেন সুপারিশ। প্রশ্ন উঠেছে, চুয়াডাঙ্গাতেও কি ভুয়া সুপারিশের কারণে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি।
জানা গেছে, ঝিনাইদহে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামের প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার প্রায় দেড়শ যুবক-যুবতীর কাছ থেকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অফিসটিতে অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা মেট্রো-গ-২৬-৭৫২৩ নম্বরের একটি প্রাইভেটকার বিপুল অংকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। তবে সংগঠক ও টাকা সংগ্রাহক হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রথখোলা গ্রামের হায়দার হাসনাত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
সরকারি গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই মাস আগে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ার জোড়াপুকুর সড়কের নিঝুম টাওয়ারে অফিস খুলে এই প্রতারণা শুরু করেন মেহেদী। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ৪৬৯ জনের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন করালেও অনেকেই রশিদ ছাড়া টাকা জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে দেড়শ যুবক-যুবতী প্রায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েছেন। সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, তারা যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন প্রডাক্ট এমনকি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তা করবেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সমাধান ফাউন্ডেশনের ট্রেড লাইসেন্স মাত্র ২৫ দিন আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া, একক মালিকানায়, অথচ বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ট্রেড লাইসেন্স যা করা হয়েছে তাতে শুধুমাত্র তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে তাও আবার সরবরাহ ব্যবসা, ব্যক্তিগতভাবে। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সমাধান গ্রুপ’, চালানো হচ্ছে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’-এর নামে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা অফিস তাদের এ কাজের ব্যাপারে কিছুই জানে না।
একক মালিকানার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রেড লাইসেন্সে এ ব্যবসার ধরণ বা উদ্দেশ্য উল্লেখ বাধ্যতামূলক। অথচ সমাধান ফাউন্ডেশন যা উল্লেখ করেছে তা অগ্রহণযোগ্য ও ভুল উপস্থাপন। নিজেদেরকে কখনো চেইন কোম্পানি, কখনো এনজিও হিসেবে পরিচয় দিলেও, জাতীয় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন তারা নেয়নি। এতদিনেও তাদের কোনো ভিত্তিমূলক কার্যক্রম নেই, সমাধান ফাউন্ডেশন চলছে ডেসটিনির মতো এমএলএম/পুঞ্জি/পিরামিড স্কিমে যা দেশের আইনের পরিপন্থি। (উল্লেখ্য, এ স্কিমে দ্রব্য বা সেবা ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় না করে, নতুনভাবে নিয়োগ দিয়ে অর্থ উপার্জনের পর সেই অর্থ পুরানো কর্মীদের মাঝে বেতন হিসেবে বন্টন করা হয়)।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে আশা ও প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে জানুয়ারি থেকে তাদের সুপারশপ, কৃষিখাতসহ বিভিন্ন কার্যকারিতা শুরু হবে। সমাধান ফাউন্ডেশন নামে বাংলাদেশে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, যাদের কর্মকাণ্ড এবং লোগো কোনোটিই চুয়াডাঙ্গার সমাধান ফাউন্ডেশনের সাথে মেলে না। চুয়াডাঙ্গার মধ্যে মাত্র বিগত কয়েকমাসে তারা অফিসিয়াল তালিকাভুক্ত ২৪৪ জন মানুষের কাছে থেকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা নিয়েছে, যা মোট হিসেবে ৭৪ লাখ ২৪ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু সবমিলিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে এর থেকে অনেক গুণ বেশি নারী-পুরুষ তাদেরকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা করে দিয়েছে।
সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রতারণা, সাথে আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে সমাধান ফাউন্ডেশন। সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের নজরের সামনে আসার পরও কেন তাদেরকে সময় দেয়া হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র না থাকলেও এ ধরনের কাজ করছে, আবার তাদের কিছু কাজ দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী। একটি মহল বলছেন, সময় দিয়েই প্রশাসন তাদের ব্যবসা আরও বৃদ্ধি করেছে। সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারের অনুমতির নাম ভাঙিয়ে আরও বেশি অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে ওই প্রতারকরা। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার কয়েকজন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এদিকে, ঝিনাইদহে সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। প্রশাসনের কার্যক্রমের ওপরে আঙ্গুল তুলছেন সচেতন মহল। জেলা সমবায় অফিসার কাজী বাবুল হোসেন বলেন, সমাধান ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের সাথে এখন পর্যন্ত তাদের দেখানো কাগজের মিল পাইনি। তাদের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তাদেরকে বিষয়টি বলার পর এখানকার স্থানীয়রা বলছেন তারা কিছু জানেন না। আমি রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দেব।