ইপেপার । আজ রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কমার সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে শীতজনিত শিশু রোগীর চাপ

১১ দিনে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ৫৫০, বর্হিবিভাগে ১৮০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৪৭ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে চলেছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৪৫ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৪১ এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩০৬ জন। একই সময়ে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে আরও ১ হাজার ৮০৫ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।
গতকাল বুধবার হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, শয্যা সংখ্যার বিপরীতে তিন গুণ রোগী দুটি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। জায়গার সংকট থাকলেও নার্স ও সেবিকারা চিকিৎসাসেবা অব্যহত রেখেছেন। তবে রোগীর স্বজনদের অনেকেই অতিরিক্ত ভিড় এবং চিকিৎসা সেবায় কিছুটা ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। একই সময়ে দুটি ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জনবল সংকটের অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, রোগীর চাপ বাড়ছে, কিন্তু জনবল সংকটের কারণে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
পৌর শহরের বাসিন্দ সুলতানা বেগম তার ১০ মাস বয়সী শিশু সায়রাকে নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা কম। সকালে থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর পুরাতন রোগীদের ছুটি হলে মেয়ের জন্য একটি বেড পেয়েছি।’ সুলতানা বেগম আরও বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও ডাক্তার ও নার্সরা ভালোভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন, এতে আমরা খুশি। কিন্তু বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৬ মাস বয়সী শিশু আরাফাত কাকনের বাবা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে তিন দিন ধরে এখানে ভর্তি রয়েছে। ওকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্যালাইন ছাড়া বেশিরভাগ ওষুধই বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। যদি সব ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহানা পারভীন বলেন, ‘১৩ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতের কারণে নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের ভর্তি হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে।’
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স শিউলী পারভীন বলেন, ‘গত ১০ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। এই ওয়ার্ডে পাঁচজন রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও গড়ে ৬০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। আক্রান্তদের ৯০ ভাগই শিশু।’ তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ সিনিয়র স্টাফ নার্স শিউলী পারভীন জানান, বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, ‘শীতের সময় শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাদের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে না পারলে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাঁশি বা রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং অনিরাপদ খাবারও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে উষ্ণ পোশাক পরানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নিরাপদ খাবার দেওয়া এবং ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা জরুরি। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে সঠিক স্যালাইন প্রয়োগের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, নিউমোনিয়া হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রয়োজন।’
ডা. মিলন আরও বলেন, ‘এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। শীতে ধুলা এবং ঠান্ডা বাতাস থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে। প্রতিদিন শিশুদের শরীর মুছে দেওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি টিকা দেওয়া থাকলে অনেক রোগ এড়ানো সম্ভব।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিব সাদী বলেন, ‘শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বৃদ্ধির মূল কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় ওষুধ সরবরাহে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তবে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ চাহিদা জানিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে জরুরি বেশিরভাগ ওষুধ সরবরাহ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত রোগীর জন্য শয্যা সংকট থাকলেও চিকিৎসক ও নার্সরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে পরিবারগুলোকেও সচেতন হতে হবে। অনেক রোগ প্রতিরোধে সঠিক যত্ন ও পরিচ্ছন্নতাই যথেষ্ট।’ ডা. রকিব সাদী শিশুদের সুরক্ষা ও সেবায় পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা বাড়ানোর পাশাপাশি হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কমার সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে শীতজনিত শিশু রোগীর চাপ

১১ দিনে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ৫৫০, বর্হিবিভাগে ১৮০৫

আপলোড টাইম : ১০:০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে চলেছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৪৫ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৪১ এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩০৬ জন। একই সময়ে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে আরও ১ হাজার ৮০৫ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।
গতকাল বুধবার হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, শয্যা সংখ্যার বিপরীতে তিন গুণ রোগী দুটি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। জায়গার সংকট থাকলেও নার্স ও সেবিকারা চিকিৎসাসেবা অব্যহত রেখেছেন। তবে রোগীর স্বজনদের অনেকেই অতিরিক্ত ভিড় এবং চিকিৎসা সেবায় কিছুটা ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। একই সময়ে দুটি ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জনবল সংকটের অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, রোগীর চাপ বাড়ছে, কিন্তু জনবল সংকটের কারণে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
পৌর শহরের বাসিন্দ সুলতানা বেগম তার ১০ মাস বয়সী শিশু সায়রাকে নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা কম। সকালে থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর পুরাতন রোগীদের ছুটি হলে মেয়ের জন্য একটি বেড পেয়েছি।’ সুলতানা বেগম আরও বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও ডাক্তার ও নার্সরা ভালোভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন, এতে আমরা খুশি। কিন্তু বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৬ মাস বয়সী শিশু আরাফাত কাকনের বাবা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে তিন দিন ধরে এখানে ভর্তি রয়েছে। ওকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্যালাইন ছাড়া বেশিরভাগ ওষুধই বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। যদি সব ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহানা পারভীন বলেন, ‘১৩ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতের কারণে নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের ভর্তি হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে।’
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স শিউলী পারভীন বলেন, ‘গত ১০ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। এই ওয়ার্ডে পাঁচজন রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও গড়ে ৬০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। আক্রান্তদের ৯০ ভাগই শিশু।’ তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ সিনিয়র স্টাফ নার্স শিউলী পারভীন জানান, বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, ‘শীতের সময় শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাদের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে না পারলে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাঁশি বা রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং অনিরাপদ খাবারও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে উষ্ণ পোশাক পরানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নিরাপদ খাবার দেওয়া এবং ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা জরুরি। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে সঠিক স্যালাইন প্রয়োগের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, নিউমোনিয়া হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রয়োজন।’
ডা. মিলন আরও বলেন, ‘এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। শীতে ধুলা এবং ঠান্ডা বাতাস থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে। প্রতিদিন শিশুদের শরীর মুছে দেওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি টিকা দেওয়া থাকলে অনেক রোগ এড়ানো সম্ভব।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিব সাদী বলেন, ‘শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বৃদ্ধির মূল কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় ওষুধ সরবরাহে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তবে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ চাহিদা জানিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে জরুরি বেশিরভাগ ওষুধ সরবরাহ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত রোগীর জন্য শয্যা সংকট থাকলেও চিকিৎসক ও নার্সরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে পরিবারগুলোকেও সচেতন হতে হবে। অনেক রোগ প্রতিরোধে সঠিক যত্ন ও পরিচ্ছন্নতাই যথেষ্ট।’ ডা. রকিব সাদী শিশুদের সুরক্ষা ও সেবায় পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা বাড়ানোর পাশাপাশি হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।