ভারতকে প্রভুত্ব ছেড়ে বন্ধু হওয়ার আহ্বান
আগরতলামুখী লংমার্চে নেতাকর্মীদের ঢল
স্বাধীনতা এনেছি দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণের জন্য নয় :রিজভী
- আপলোড টাইম : ০৯:৫২:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
আগরতলা সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা অবমাননা, মিডিয়ায় অপপ্রচার ও সামপ্রদায়িক দাঙ্গার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল গতকাল বুধবার আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করেছে। সকালে রাজধানী ঢাকার নয়পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে হাজার হাজার গাড়ীবহর নিয়ে বিকালে আখাউড়া স্থলবন্দরে গিয়ে শেষ হয়। লংমার্চের গাড়ি বহরকে শুভেচ্ছা জানাতে দীর্ঘ যাত্রা পথের দুই ধারে ছিল বিএনপির নেতাকর্মী ও গণমানুষের ঢল। সকাল ৯টায় রাজধানীর নায়াপল্টনে লংমার্চ উদ্বোধন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পরে পল্টন-ফকিরাপুল-ইত্তেফাক মোড় হয়ে ফ্লাইওভার হয়ে সাইনবোর্ড-চিটাগং রোড-কাঁচপুর মোড়-তারাব-বরফা-ভুলতা, গাউছিয়া-চনপাড়া, মাধবদী-পাঁচদোনা-সাহেপ্রতাব, ভেলানগর-ইটখোলা-মারজাল-বারুইচা হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌছে। আখাউড়ায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই লংমার্চ।
ওই সমাবেশ থেকে ভারতকে প্রভুত্ব ছাড়ার বার্তা দিয়ে বন্ধুত্বের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সব ধরনের ষড়যন্ত্র বন্ধে ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। এই লংমার্চে ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কর্মীরা অংশ নেন। কাস্টমস এলাকা পর্যন্ত লোকজনকে আটকে দেয় আইনশৃংখলা বাহিনী। পথে পথে নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে স্লোগান দেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ছাড়াও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন, এমন সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ও তাদের নামেও স্লোগান দিতে দেখা গেছে। যাত্রা পথে বিভিন্ন স্থানে পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন, স্থলবন্দরের মাঠের পাশের রাস্তায় গ্রাম পুলিশ ও শুল্ক স্টেশনের প্রধান ফটক থেকে ১০০-১৫০ গজ দূরত্বে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে জেলা পুলিশ। দুই দেশের যাত্রীদের হেঁটে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টে যেতে হয়। ইমিগ্রেশনের সামনে বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত ২৮ বাংলাদেশি ও ২৪ ভারতীয় যাত্রী আখাউড়া ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যান। অন্য দিনের তুলনায় যাত্রীদের পারাপার তুলনামূলক কম।
স্বাধীনতা এনেছি দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণের জন্য নয়: রিজভী
লংমার্চে উদ্বোধনী সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করিনি। আজ দিল্লির যারা সামপ্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী, তারা মনে রেখো, তোমরা একজন ভয়ংকর রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিয়েছিলে। ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তারা চায় বাংলাদেশসহ আশেপাশের দেশগুলো তাদের ‘কথা শুনে চলুক’। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা আদালতের মাধ্যমে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করেছেন। এটা এখন সাবজুডিস, আদালতে বিচার চলছে। কিন্তু আমার এখানে ব্যক্তিগত অভিমত আছে, বাংলা নামে একটা প্রদেশ আছে ইন্ডিয়ায়, জয় বাংলা বললে তো আমাকে তো মমতার জয় বলা হবে, বাংলাদেশের তো জয় না। আর বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগানে আমার মানচিত্র, বাংলাদেশকে দেখতে পাব।
প্রভুত্ব ছেড়ে বন্ধুত্বের আহ্বান
ঢাকা টু আগরতলা লং মার্চ গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে এসে শেষ হয়েছে। এ সময় এক সমাবেশ থেকে ভারতকে প্রভুত্ব ছাড়ার বার্তা দিয়ে বন্ধুত্বের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সব ধরণের ষড়যন্ত্র বন্ধে ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা থেকে আসা লং মার্চের গাড়ি বহর আখাউড়ায় প্রবেশ করে। লংমার্চ এর বহর জেলার প্রবেশমুখ আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যান্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের দুপাশে দলীয় নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে লংমার্চ এর গাড়ি বহরকে অভিবাদন জানান। তবে যানজটের কারণে সব গাড়ি বন্দর এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি।
এছাড়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব মোড়ে লং মার্চের পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা দেড়টার দিকে ভৈরবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডে পথসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন আপসহীন থেকে কাজ করে যাবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেব। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লং মার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণ-আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার সকল দোসরদের আশ্রয় দিয়েছে। আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এ দেশের এক ইঞ্চির মাটির দিকে তাকালে, সেই চোখ উপড়ে ফেলা হবে। যেখানে বাংলাদেশের শত্রু থাকে, সেই ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।