ইপেপার । আজ রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

দামুড়হুদা উপজেলায় সারা বছর ধান চাষ হলেও বিক্রির জন্য নেই কোনো হাট

ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা, কার্পাসডাঙ্গায় হাট চালুর দাবি

আওয়াল হোসেন, দর্শনা:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৭৭ বার পড়া হয়েছে

দামুড়হুদা উপজেলায় এখন সারা বছর ধান চাষ হয়। তবে এই উপজেলায় ধানের হাট না থাকায় কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় ধানের হাট চালুর জন্য কৃষক ও উপজেলা কৃষক জোট চেষ্টা করে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকি ধান বিক্রি করার কোনো হাট না থাকায় আড়ৎ অথবা ফঁড়িয়াদের নিকট এসব ধান বিক্রি করেন এলাকার কৃষকরা।
আর ধান বিক্রির জন্য দামুড়হুদার ৮টি ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার কৃষকদের ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে জীবননগর বা সরোজগঞ্জের হাটে যেতে হয়। ফলে এই এলাকার সাধারণ কৃষকদের অতিরিক্ত পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয়সহ নানা ধরনের হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কার্পাসডাঙ্গা বাজারে ধানের হাট বসানোর বিষয় কুড়ুলগাছী গ্রামের জামাত আলী ও ফজলুর রহমান বলেন, কাপার্সডাঙ্গায় ধানের হাট হলে এলাকার কৃষকদের ধান বিক্রি নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হতো না। তাছাড়া ধানের মূল্যে ভালো পাওয়া যাবে। ইচ্ছামতো সপ্তাহ সপ্তাহ প্রয়োজন মতো ধান বিক্রি করতে পারবেন কৃষকেরা। ধানের হাট হলে খুবই ভালো হবে।
ধান্যঘরা গ্রামের সেকু মালিথার ছেলে আছের আলী বলেন, ‘আমার এক বিঘা ধান ছিল। ধানের হাট হলে সপ্তাহে একদিন ধান বিক্রি করে হাট-বাজার করতে পারব।’ একই গ্রামের রহিম মন্ডলের ছেলে আবুল হোসেনের ৬ বিঘা ধান ছিল, ইলাহি বক্সের ছেলে জামাত আলীর দেড় বিঘা ধান ছিল। তারা বলেন, কাপার্সডাঙ্গা অথবা ধান্যঘরা-দুর্গাপুর মোড়ে হাট বসানো যেতে পারে। সপ্তাহে ২ দিন হাট হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হয়। কার্পাসডাঙ্গা ও কুড়ুলগাছী ইউনিয়নের ৩০-৪০টি গ্রামের শত শত কৃষক ধান বিক্রি করতে পারবে।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ^াস বলেন, ‘আমার আনেক দিনের পরিকল্পনা আছে। এলাকায় ধানের হাট বসলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। আমার উদ্যোগ আছে কার্পাসডাঙ্গা বাজারে একটি ধানের হাট বসানোর।’
কৃষক জোটের উপজেলা সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন ও ইউনিয়ন সভাপতি আহম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের কৃষক জোটের সভায় আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া কার্পাসডাঙ্গা বাজারে একটি ধানের হাট বসানোর বিষয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় কৃষকবান্ধব ধানের হাট স্থাপনের বিষয়ে কৃষক জোটের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে একাধিকবার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং দামুড়হুদা উপজেলা পর্যায়ে শেয়ারিং, লবিং ও দাবিনামা পেশ করা হয়েছে। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় থেকে কার্পাসডাঙ্গায় কৃষকবান্ধব ধানের হাট স্থাপনের বিষয়ে আশ্বাস পেলেও এখন পর্যন্ত ধানের হাট স্থাপন করা হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে কার্পাসডাঙ্গায় একটি কৃষকবান্ধব ধানের হাট স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দামুড়হুদা কৃষি অফিসার ও জেলা প্রসাশকের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কে এইচ তাসফিকুর রহমান বলেন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ মহল আমাকে হাটের বিষয় জানিয়েছেন। আমি কার্পাসডাঙ্গা তফশিল অফিসকে জানিয়েছি কার্পাসডাঙ্গা কোথায় ধানের হাট করা যায়। তাকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছি। ধানের হাট বসানোর বিষয়ে জানতে দামুড়হুদা কৃষি অফিসার শারমীন আক্তারকে দুই দিন ধরে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি। আপনি আমার অফিসে আসেন।’ গতকাল বুধবার দুই বার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দামুড়হুদা উপজেলায় সারা বছর ধান চাষ হলেও বিক্রির জন্য নেই কোনো হাট

ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা, কার্পাসডাঙ্গায় হাট চালুর দাবি

আপলোড টাইম : ০৮:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

দামুড়হুদা উপজেলায় এখন সারা বছর ধান চাষ হয়। তবে এই উপজেলায় ধানের হাট না থাকায় কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় ধানের হাট চালুর জন্য কৃষক ও উপজেলা কৃষক জোট চেষ্টা করে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকি ধান বিক্রি করার কোনো হাট না থাকায় আড়ৎ অথবা ফঁড়িয়াদের নিকট এসব ধান বিক্রি করেন এলাকার কৃষকরা।
আর ধান বিক্রির জন্য দামুড়হুদার ৮টি ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার কৃষকদের ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে জীবননগর বা সরোজগঞ্জের হাটে যেতে হয়। ফলে এই এলাকার সাধারণ কৃষকদের অতিরিক্ত পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয়সহ নানা ধরনের হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কার্পাসডাঙ্গা বাজারে ধানের হাট বসানোর বিষয় কুড়ুলগাছী গ্রামের জামাত আলী ও ফজলুর রহমান বলেন, কাপার্সডাঙ্গায় ধানের হাট হলে এলাকার কৃষকদের ধান বিক্রি নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হতো না। তাছাড়া ধানের মূল্যে ভালো পাওয়া যাবে। ইচ্ছামতো সপ্তাহ সপ্তাহ প্রয়োজন মতো ধান বিক্রি করতে পারবেন কৃষকেরা। ধানের হাট হলে খুবই ভালো হবে।
ধান্যঘরা গ্রামের সেকু মালিথার ছেলে আছের আলী বলেন, ‘আমার এক বিঘা ধান ছিল। ধানের হাট হলে সপ্তাহে একদিন ধান বিক্রি করে হাট-বাজার করতে পারব।’ একই গ্রামের রহিম মন্ডলের ছেলে আবুল হোসেনের ৬ বিঘা ধান ছিল, ইলাহি বক্সের ছেলে জামাত আলীর দেড় বিঘা ধান ছিল। তারা বলেন, কাপার্সডাঙ্গা অথবা ধান্যঘরা-দুর্গাপুর মোড়ে হাট বসানো যেতে পারে। সপ্তাহে ২ দিন হাট হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হয়। কার্পাসডাঙ্গা ও কুড়ুলগাছী ইউনিয়নের ৩০-৪০টি গ্রামের শত শত কৃষক ধান বিক্রি করতে পারবে।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ^াস বলেন, ‘আমার আনেক দিনের পরিকল্পনা আছে। এলাকায় ধানের হাট বসলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। আমার উদ্যোগ আছে কার্পাসডাঙ্গা বাজারে একটি ধানের হাট বসানোর।’
কৃষক জোটের উপজেলা সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন ও ইউনিয়ন সভাপতি আহম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের কৃষক জোটের সভায় আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া কার্পাসডাঙ্গা বাজারে একটি ধানের হাট বসানোর বিষয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় কৃষকবান্ধব ধানের হাট স্থাপনের বিষয়ে কৃষক জোটের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে একাধিকবার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং দামুড়হুদা উপজেলা পর্যায়ে শেয়ারিং, লবিং ও দাবিনামা পেশ করা হয়েছে। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় থেকে কার্পাসডাঙ্গায় কৃষকবান্ধব ধানের হাট স্থাপনের বিষয়ে আশ্বাস পেলেও এখন পর্যন্ত ধানের হাট স্থাপন করা হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে কার্পাসডাঙ্গায় একটি কৃষকবান্ধব ধানের হাট স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দামুড়হুদা কৃষি অফিসার ও জেলা প্রসাশকের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কে এইচ তাসফিকুর রহমান বলেন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ মহল আমাকে হাটের বিষয় জানিয়েছেন। আমি কার্পাসডাঙ্গা তফশিল অফিসকে জানিয়েছি কার্পাসডাঙ্গা কোথায় ধানের হাট করা যায়। তাকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছি। ধানের হাট বসানোর বিষয়ে জানতে দামুড়হুদা কৃষি অফিসার শারমীন আক্তারকে দুই দিন ধরে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি। আপনি আমার অফিসে আসেন।’ গতকাল বুধবার দুই বার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।