ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

সমাধান ফাউন্ডেশনের ডেরা ঝিনাইদহে, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানে চেয়ারম্যান মেহেদী আটক

দেড়শ যুবক-যুবতীর কাছ থেকে ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫১:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় ৭৪ লাখ টাকা হাতিয়ে পালানোর পর এবার ঝিনাইদহেও ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামের প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার প্রায় দেড়শ যুবক-যুবতীর কাছ থেকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অফিসটিতে অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা মেট্রো-গ-২৬-৭৫২৩ নম্বরের একটি প্রাইভেটকার বিপুল অংকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। তবে সংগঠক ও টাকা সংগ্রাহক হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রথখোলা গ্রামের হায়দার হাসনাত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সরকারি গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই মাস আগে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ার জোড়াপুকুর সড়কের নিঝুম টাওয়ারে অফিস খুলে এই প্রতারণা শুরু করেন মেহেদী। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ৪৬৯ জনের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন করালেও অনেকেই রশিদ ছাড়া টাকা জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে দেড়শ যুবক-যুবতী প্রায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েছেন। সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, তারা যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন প্রডাক্ট এমনকি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তা করবেন।

জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার সংলগ্ন বাদেডিহী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মেহেদী দেশজুড়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। এদিকে, গতকালের অভিযানে তার অফিস থেকে কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। অফিসে পাওয়া নথিপত্র অনুসারে সেক্রেটারি জেনারেল এনামুল হক, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শহীদুল্লাহসহ আরও ১০ জন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।
ঝিনাইদহের মহিষাকুণ্ডু গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, তিনি ও তার স্ত্রী তহমিনা খাতুন ৬১ হাজার টাকা দিয়েছেন। বারোবাজার এলাকার কাজল ৫ লাখ টাকা, হরিণাকুণ্ডুর জোড়াপুকুর গ্রামের মাজেদা খাতুন ৩০ হাজার ৫০০ টাকা, চটকাবাড়িয়া গ্রামের মিতা খাতুন ৩০ হাজার ৫০০ টাকাসহ আরও অনেক যুবক-যুবতী বিনা রশিদে টাকা জমা দিয়েছেন।

এছাড়াও সদরের লেবুতলা গ্রামের সেলিনা খাতুন, হরিণাকুণ্ডুর জোড়াপুকুর গ্রামের আফাজ, বড়ভাদড়া গ্রামের আল আমিন, অনিক, সদরের বড়গড়িয়ালা গ্রামের সোহেল রানা, শ্রীপুর গ্রামের হাসানুজ্জামান, বিল্লাল হোসেন ও কোটচাঁদপুরের দুর্বাকুণ্ডু গ্রামের সাইফুজ্জামানসহ শত শত যুবক টাকা প্রদানের কথা স্বীকার করেন। তারা সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান ও জেলা চিফ অর্গানাইজার হায়দার হাসনাতের কাছে টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতারক চক্রের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং ভুক্তভোগীদের বক্তব্য রেকর্ড করে। অফিসটির কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় খন্দকার মেহেদী হাসান নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া এসআই আরিফ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

সমাধান ফাউন্ডেশনের ডেরা ঝিনাইদহে, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানে চেয়ারম্যান মেহেদী আটক

দেড়শ যুবক-যুবতীর কাছ থেকে ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৯:৫১:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় ৭৪ লাখ টাকা হাতিয়ে পালানোর পর এবার ঝিনাইদহেও ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামের প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার প্রায় দেড়শ যুবক-যুবতীর কাছ থেকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অফিসটিতে অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা মেট্রো-গ-২৬-৭৫২৩ নম্বরের একটি প্রাইভেটকার বিপুল অংকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। তবে সংগঠক ও টাকা সংগ্রাহক হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রথখোলা গ্রামের হায়দার হাসনাত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সরকারি গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই মাস আগে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ার জোড়াপুকুর সড়কের নিঝুম টাওয়ারে অফিস খুলে এই প্রতারণা শুরু করেন মেহেদী। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ৪৬৯ জনের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন করালেও অনেকেই রশিদ ছাড়া টাকা জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে দেড়শ যুবক-যুবতী প্রায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েছেন। সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, তারা যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন প্রডাক্ট এমনকি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তা করবেন।

জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার সংলগ্ন বাদেডিহী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মেহেদী দেশজুড়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। এদিকে, গতকালের অভিযানে তার অফিস থেকে কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। অফিসে পাওয়া নথিপত্র অনুসারে সেক্রেটারি জেনারেল এনামুল হক, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শহীদুল্লাহসহ আরও ১০ জন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।
ঝিনাইদহের মহিষাকুণ্ডু গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, তিনি ও তার স্ত্রী তহমিনা খাতুন ৬১ হাজার টাকা দিয়েছেন। বারোবাজার এলাকার কাজল ৫ লাখ টাকা, হরিণাকুণ্ডুর জোড়াপুকুর গ্রামের মাজেদা খাতুন ৩০ হাজার ৫০০ টাকা, চটকাবাড়িয়া গ্রামের মিতা খাতুন ৩০ হাজার ৫০০ টাকাসহ আরও অনেক যুবক-যুবতী বিনা রশিদে টাকা জমা দিয়েছেন।

এছাড়াও সদরের লেবুতলা গ্রামের সেলিনা খাতুন, হরিণাকুণ্ডুর জোড়াপুকুর গ্রামের আফাজ, বড়ভাদড়া গ্রামের আল আমিন, অনিক, সদরের বড়গড়িয়ালা গ্রামের সোহেল রানা, শ্রীপুর গ্রামের হাসানুজ্জামান, বিল্লাল হোসেন ও কোটচাঁদপুরের দুর্বাকুণ্ডু গ্রামের সাইফুজ্জামানসহ শত শত যুবক টাকা প্রদানের কথা স্বীকার করেন। তারা সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান ও জেলা চিফ অর্গানাইজার হায়দার হাসনাতের কাছে টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতারক চক্রের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং ভুক্তভোগীদের বক্তব্য রেকর্ড করে। অফিসটির কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় খন্দকার মেহেদী হাসান নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া এসআই আরিফ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।