অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ করুন
দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক, ভারতকে স্পষ্ট বার্তা বাংলাদেশের- আপলোড টাইম : ০৮:৪৪:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না, তাই ভারতকেও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। গতকাল সোমবার ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি। এসময় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য পছন্দ করছে না অন্তর্বর্তী সরকার। বৈঠকে এ ইস্যুতে ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জানানো হয়েছে। ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু ইস্যুতে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই বলে ভারতকে সাফ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে নাক না গলানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সীমান্তে হত্যাকান্ড কাম্য নয় এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে এ ধরনের হত্যাকান্ড সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমরা সবসময় বলেছি যে, সীমান্তহত্যা যেন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। তাদের দিক থেকে তারা বলেছে, সীমান্তে নানা ধরনের অপরাধ হয়। হত্যাকান্ডের সঙ্গে এসব অপরাধের সংযোগ আছে। মো. জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা বলেছি, আমরা কোনো অপরাধ সমর্থন করি না, একই সঙ্গে হত্যাকান্ডকেও সমর্থন করি না। কাজেই দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে কথা বলছি, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের যে অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক যে অঙ্গীকার হত্যাকান্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার, সেটার বিষয়ে তারা যেন শ্রদ্ধাশীল থাকে।
বিকেল পৌনে ৪টায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। বৈঠক শেষে তিনি জানান, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক ও ইতিবাচকভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। এ জন্য দুই দেশের জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশের অর্ন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী দিল্লি। বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অত্যন্ত খোলামেলা, গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। আমি জোর দিয়ে বলেছি যে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক চায়। আমরা সবসময়…অতীতেও দেখেছি এবং আমরা ভবিষ্যতেও এই সম্পর্ককে একটি জনকেন্দ্রিক ও জনমুখী সম্পর্ক হিসেবে দেখব। যে সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকবে সব মানুষের কল্যাণ।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘পরস্পরের জন্য সহায়ক এই সহযোগিতা আমাদের উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে অব্যাহত থাকবে না, এটা ভাবার কারণ নেই। আমি আজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য ভারতের আগ্রহের কথা তুলে ধরেছি। একই সময় আমরা কিছু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি।’ বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, ‘আমি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত আমাদের উদ্বেগগুলো জানিয়েছি। আমরা সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক সম্পত্তির ওপর হামলার কিছু দুঃখজনক ঘটনা নিয়েও আলোচনা করেছি।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ভারত ‘গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রত্যাশা করে মন্তব্য করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘সাম্প্রতিক কিছু বিষয় ও ঘটনাবলি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনার সুযোগ হয়েছিল। আমি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছি। আমরা সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলার মত দুঃখজনক কিছু ঘটনা নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সার্বিকভাবে গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করি।’ ভারত দুই দেশের সম্পর্ককে একটা ইতিবাচক ও গঠনমূলক অভিমুখে নিয়ে যেতে চায় বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ঢাকায় আসা বিক্রম মিশ্রি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে এটাই প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, যা ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) নামে পরিচিত। সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে, দিল্লিতে। ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অত্যন্ত খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। আমি জোর দিয়ে বলেছি, ভারত সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পরস্পরের জন্য সুবিধাজনক সম্পর্ক চায়। আমরা দুই দেশের জনকেন্দ্রিক ও জনমুখী সম্পর্ক অতীতে দেখেছি এবং ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা দেখব।’
সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান বিক্রম মিশ্রি। এরপর বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তিনি যান মন্ত্রণালয়ে। ব্রিফিংয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘বৈঠকে বাণিজ্য, অর্থনীতি, যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় এ সম্পর্ক অব্যাহত না রাখার কোনো কারণ এখানে নেই। এ সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে আমি আজ জোর দিয়ে বলেছি, বাংলাদেশের অর্ন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়।’
‘সম্পর্কে মেঘ এসেছে, এটি দূর করতে হবে’
এদিকে, ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, সেই মেঘটি দূর করতে হবে। বাংলাদেশও বলেছে, এটি দূর করতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গতকাল সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর যমুনার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অপপ্রচারের জবাব লিখিত ও মৌখিক বহুভাবেই বলেছি, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেগুলোকে সাম্প্রদায়িক দেখানোর সুযোগ খুবই কম। সেগুলো কখনো কখনো ব্যক্তিগত, বেশিরভাগই রাজনৈতিক। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার না এটির অংশ, না এটি কোনোভাবেই বরদাশত করছে। যেখানে যেখানে এ রকম অভিযোগ এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে যে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, এই মেঘটি দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি, এই মেঘটি দূর করতে হবে।’