এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানের গীতিকার আবু জাফর আর নেই
- আপলোড টাইম : ০৯:৫২:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৯ বার পড়া হয়েছে
গৃজনশীলতার এই ব্যাস্ততম অ্যাভিনিউতে অসাধারণ সব গৃজনের ফুল ফুটিয়েও অনেকটা অন্তরালেই থাকতেন তিনি। যার কালজয়ী সেইসব গান ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘আমি হেলেন কিংবা নূরজাহানকে দেখিনি’, ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি’সহ অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার আবু জাফর নীরবেই তার বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টানলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
আবু জাফরের মেয়ে জিয়ান ফারিয়া গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছেন। বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। আবু জাফর এক মেয়ে ও তিন ছেলে রেখে গেছেন। খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন তার সাবেক স্ত্রী। আবু জাফর চুয়াডাঙ্গা কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তার জন্ম কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাঁদপুর ইউনিয়নের গড়েরবাড়ী কাঞ্চনপুর গ্রামে। এদিকে আবু জাফরের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। এক প্রতিক্রিয়ায় লোক গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, আবু জাফর বাংলা গানের ইতিহাসে অভিনব বাণী ও সুর সংযোজন করেছেন। তার অবদানের তুলনায় তাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে খুবই কম।
রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন আবু জাফর। তার রচিত দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গানগুলো তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ আবু জাফরের গৃষ্টি। এই গান তাকে নিয়ে গিয়েছিল অনন্য উচ্চতায়। গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। গানগুলো এখনো শ্রোতাদের কাছে স্মৃতি হয়ে রয়েছে। আবু জাফর রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন। নিজের রচিত ও সুর করা অধিকাংশ গানে তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। তার সঙ্গে যুগল গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন।
গানের ভুবনে অবদান রাখার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় লিখেছেন বেশকিছু বই। এগুলোর মধ্যে ‘নতুন রাত্রি পুরনো দিন’ (কাব্য), ‘বাজারে দুর্নাম তবু তুমিই সর্বস্ব’ (কাব্য), ‘বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত কবিতা’ (অনুবাদ কাব্য) উল্লেখযোগ্য। অবসরটা খুব নিভৃতেই কেটেছে আবু জাফরের। আড়ালেই ছিল সুরকারের শেষ দিনগুলো। তার পাশে সব সময়ের জন্য ছিলেন এক মেয়ে ও তিন ছেলে। মৃত্যুর পর ভক্তদের সামনে নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তার কালজয়ী গানগুলো। এই গানের মাধ্যমেই তাকে মনে করবেন শ্রোতারা। আবু জাফরের মরদেহ নেওয়া হয় জন্মস্থান কুষ্টিয়ায়। আসরের নামাজ শেষে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জানাজার পর তার দাফন সম্পন্ন হয়।