সুখে-দুঃখে সবাই এক থাকবেন, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াবেন
রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্পাদক শরীফুজ্জামান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন হয়ে উঠেছিল ‘এক টুকরো চুয়াডাঙ্গা’, অতিথিসহ নবীন ও বিদায়ীদের সংবর্ধনা দিলো রুসাক
- আপলোড টাইম : ০৯:৪৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৩ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস’স অ্যাসোসিয়েশন অব চুয়াডাঙ্গা (রুসাক)-এর আয়োজনে নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসিসি) অডিটরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল ছাত্র-ছাত্রী ও সদ্য ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ আয়োজন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। রুসাকের সভাপতি শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রথম পর্বে আলোচনা সভা ও বিদায়-বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শরীফুজ্জামান শরীফ। প্রধান বক্তা ছিলেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন।
এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু জোহা জাস্টিসুল হায়দার, রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির, চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মোহাম্মদ স্বরাজ, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, রুসাকের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ও ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র সেলস ম্যনেজার আহসান কবির, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অফিসার ও রুসাকের সাবেক সভাপতি মো. রাসেল, রুসাকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বপ্ন-পূরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ ইসরাফিল আলম, রুসাকের সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার নয়ন, রুসাকের সাবেক সহসভাপতি আসমা খাতুন, সাংবাদিক হুসাইন মালিক, আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান রেজু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি করতে করতে আমার যে অ্যাম্বিশন ছিল, আমি সেই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। তাই ছাত্রদের যেকোনো বিষয়ে আমি দুর্বল অনেকটাই। আমরা এক সময় নবীন হিসেবে গিয়েছিলাম। আমাদেরকেও আমাদের বড় ভাইয়েরা বরণ করে নিয়েছিল। এই ছাত্র বয়সেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। এই ছাত্র জীবনে আমি অনেক কিছু শিখেছি, অনেক কিছু অর্জন করেছি। কীভাবে একটা মানুষের পাশে থাকতে হয়, কীভাবে উপকার করতে হয়, কীভাবে একটা ছাত্রের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে হয়, তা আমি এই ছাত্রজীবনেই শিখেছি। এই ছাত্র বয়সেই আমার সবকিছুর শুরু। সেখান থেকেই প্রচুর ঘাত-প্রতিঘাতের পর একটা জায়গায় এসে পৌঁছিছি।’
শরীফুজ্জামান শরীফ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে বলেন, ‘আবু সাইদ ও মুগ্ধরা জীবন দিয়ে এদেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করে গেছেন। শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করছি। একইসাথে এটাও প্রমাণ হয়েছে, ছাত্রশক্তির জোর কত। তাই আজ উপস্থিত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বলছি, তোমরা ভবিষ্যৎ চুয়াডাঙ্গা গড়বা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার নাম তোমাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ুক সারা পৃথিবীতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চুয়াডাঙ্গা জেলার ছাত্রদের সংগঠন রুসাকে যুক্ত আছেন, তারা পড়াশোনা শেষ করার পর চুয়াডাঙ্গাতে ফিরেও এভাবেই একে অপরের পাশে থাকবেন। সুখে-দুঃখে ও বিপদে সবাই এক থাকবেন, এটাই আমি প্রত্যাশা করি।’
শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চুয়াডাঙ্গার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে যে সংগঠনগুলো পরিচালিত হয়, আমি যতটুকু জানি, তাদের মধ্যে একে-অপরের সাথে যোগাযোগ খুব ভালো। তাই আমার অনুরোধ থাকবে, যারা রুসাকের সদস্য বা এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, আপনারা সবাই সবার সাথে যোগাযোগ বাড়াবেন। বিশেষ করে যারা প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং আজ সমাজে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত আছে, তাদের সাথে। আশা করি, রুসাকও এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।’
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তার বক্তব্যে দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘এখন ডিসেম্বর মাস ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এই ডিসেম্বর মাসেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। আবার ২৪-এর ছাত্র-জনতা দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরে স্বৈরাচার সরকার বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, গণতান্ত্রিক সকল কিছু ধ্বংস করার পর এই তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে এক অভাবনীয়ও বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। একাত্তর থেকে চব্বিশ পর্যন্ত যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী দিনে শুধু বাংলাদেশ না, সারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে এই তরুণরা। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি তরুণ, যাদের বয়স ৩০ এর নিচে। এই তরুণদের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আপনারা জানেন, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করেছি। এখন সবকিছুই প্রযুক্তি নির্ভর, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ জন্য আমাদেরকেও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রজন্মই আগামী সমাজের নেতৃত্ব দেবে। শুধু বাংলাদেশেকে নয়, আমাদের নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনারা এই তরুণ প্রজন্ম সারথী হবেন, সেটাই প্রত্যাশা করি।’
অনুষ্ঠানে শুরুতেই প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শিক্ষার্থীরা। একইসাথে প্রধান অতিথি শরীফুজ্জামান শরীফকে সংবর্ধনা প্রদান শেষে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ফুলের শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নের রুসাকের সদস্যরা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বর্তমান শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।