ভারতের সঙ্গে স্থল বাণিজ্যে স্থবিরতা
- আপলোড টাইম : ০৫:৪৮:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৬ বার পড়া হয়েছে
সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথিত অভিযোগে ভারতের লোকজনের বাধা ও পণ্য পরিবহন জটিলতায় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত বিভিন্ন স্থলবন্দর ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ সীমিত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে ট্রাকও ভারতে যেতে পারছে না। ফলে ট্রাক আটকে থাকার কারণে পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চলমান ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।
তামাবিল স্থলবন্দরের অচলাবস্থা অব্যাহত: স্বাভাবিক হয়নি সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের কার্যক্রম। ১৮ দিনের মতো সময় অতিবাহিত হলেও পাথর কয়লা আমদানির বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। তবে বুধবার ভারতীয় রপ্তানিকারকের পাঠানো মিথানলবাহী দু’টি ট্যাংকলরি খালাসের জন্য স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে প্রবেশ করেছে। ব্যস্ততম এ স্থলবন্দরে পাথর, কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানিকারক মেসার্স মিসবাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিসবাহউল আম্বিয়া বলেন, আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দরের ওজন জটিলতায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
মেসার্স রেজা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস উদ্দিন লিপু জানান, ওপারে পাথর কয়লাবাহী শত শত ট্রাক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, রপ্তানিকারকরা আমাদের কাছে এসব পণ্যবাহী ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মিডিয়ান পেপার, চাল, মিথানল এসব পণ্যসামগ্রী আসছে। তবে এখানকার মূল পণ্য পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। কয়েকদিন ধরে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। মাঝে-মধ্যে দু’-একজন যাত্রী আসছেন। তারা ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই এপার-ওপার যাতায়াত করছেন। একই দৃশ্য সিলেটের শেওলা স্থলবন্দর ও জকিগঞ্জ শুল্ক বন্দরেও। সিলেট জেলার তিনটি সীমান্ত পোর্ট দিয়ে আগে যেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী যাওয়া আসা করতেন এখন তা নেমে এসেছে কয়েকজনে।
স্বাভাবিক হিলি স্থলবন্দর, সতর্ক বিজিবি: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি সহ অন্যসব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। আমদানি রপ্তানির পাশাপাশি হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাওয়া-আসা স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতীয় ভিসার সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশে আলু রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে গত তিনদিন ধরে আলু আমদানি বন্ধ রয়েছে। অবশ্য চাল, পিয়াজ সহ অন্যান্য পণ্য আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলা হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ভারত হিলির অভ্যন্তরে কংগ্রেস দলের আধিপত্য থাকায় বিজেপি’র কোনো কর্ম তৎপরতা দেখা যায় নাই। তবে আলু আমদানি বন্ধ রয়েছে। জয়পুরহাট ২০-বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, সামপ্রতিক কিছু ঘটনাকে ঘিরে হিলি সীমান্তে জনবল বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে আমরা সবসময় সতর্কাবস্থায় রয়েছি।
বাংলাদেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে স্বভাবিক রয়েছে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য: ইস্কন নেতা চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে বিজেপি’র সমাবেশ থেকে বেনাপোলে বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের কড়া হুঁশিয়ারি দেয়ার পরও স্বভাবিক রয়েছে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।
বন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৪১৮ ট্রাক মালামাল আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৮৯ ট্রাক মালামাল। পাসপোর্ট যাত্রী পারাপারও স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ যাত্রী ভারতে পারাপার করেছেন।
বেনাপোল কাস্টম্স হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার শরিফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। বেনাপোল স্থলন্দরের ডেপুটি ডাইরেক্টর রাশেদুজ্জামান সজীব নাজির বলেন, শুধুমাত্র মঙ্গলবার ৪১৮ ট্রাক মালামাল আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। অন্যদিকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৮৯ ট্রাক মালামাল। চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ ভূঁইয়া জানান, গুজবের কারণে পাসপোর্ট যাত্রী কিছুটা কমেছে। তবে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করেছেন।
এদিকে গতকাল সচিবালয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চলমান ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। ভারতের সঙ্গে আমাদের কমার্শিয়াল ইস্যুতে, বাণিজ্যিক ব্যাপারে রাজনীতি আসছে না। ভারত থেকে চাল আমদানি করবে কি করবে না এগুলো ম্যাটার না। যারা প্রতিযোগিতা মূল্যে দেবে, দ্রুত দেবে এবং কোয়ালিটি থাকবে, সেখান থেকে নেবো। সেটা ভারত বা বিভিন্ন দেশ হতে পারে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলছি। ভিয়েতনামের সঙ্গে কথা বলছি। এগুলোর ব্যাপারে রাজনীতি প্রবেশ করবে না।