ইপেপার । আজ রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা; ভারতের ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতন ও তার ভারতে পলায়নের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। ভারতের তরফ থেকে এখন তা বিদ্বেষের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমন পরিস্থিতির কারণ মূলত বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিতে দিল্লির অপারগতা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই, নতুন বাস্তবতা দিল্লির মেনে নিতে না পারা ভারতেরই দুর্বলতা। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়া আজগুবি সব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কল্পিত হামলার প্রচারণা সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় দেশটির সরকার সমর্থন দিচ্ছে এমন মনে করার কারণ আছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তার সাপ্তাহিক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। অথচ বিদেশী মিডিয়ার জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা হাসিনার আমলের চেয়ে বেশি নিরাপদে আছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি দৃঢ়তার সাথে বারবার নাকচ করে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে জানানোর সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর একটি কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়ে অপতথ্য, ভুল তথ্য আর মিথ্যা তথ্যের বিস্তার ঘটিয়ে বলার চেষ্টা করছে যে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ নয়। ভারতীয় মিডিয়ার এই অপপ্রচারের জেরেই সে দেশের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গত সোমবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালানো হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠনের সমর্থকরা এ হামলা চালান। একই দিন মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের কাছাকাছি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আয়োজনে কয়েক শ’ লোক বিক্ষোভ করেন। এর আগে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, বাংলাদেশের পতাকা এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। এসব প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি বাড়াচ্ছে। সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটাচ্ছে। আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে সন্ত্রাসী হামলার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করেছে ঢাকা। এ বিষয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত সোমবার রাতের এক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনকে নিরাপত্তা দিতে ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতকে বুঝতে হবে, এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয়। ভারতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন ও মিশন কার্যালয়ে যেভাবে হামলা ও বিক্ষোভ হচ্ছে তা রীতিমতো ভিয়েনা সনদের লঙ্ঘন। প্রতিটি দেশে বিদেশী দূতাবাস এবং সেখানে কর্মরত কূটনীতিকদের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অথচ প্রতিবাদের নামে ভারতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন এবং মিশন কার্যালয়ে যা হচ্ছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননা ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতকে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, ভারতের আগ্রাসী আচরণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। ভারত যাতে বাংলাদেশের সাথে ন্যায্য আচরণ করতে বাধ্য হয় এমন ব্যবস্থা নিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা; ভারতের ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন

আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতন ও তার ভারতে পলায়নের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। ভারতের তরফ থেকে এখন তা বিদ্বেষের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমন পরিস্থিতির কারণ মূলত বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিতে দিল্লির অপারগতা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই, নতুন বাস্তবতা দিল্লির মেনে নিতে না পারা ভারতেরই দুর্বলতা। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়া আজগুবি সব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কল্পিত হামলার প্রচারণা সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় দেশটির সরকার সমর্থন দিচ্ছে এমন মনে করার কারণ আছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তার সাপ্তাহিক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। অথচ বিদেশী মিডিয়ার জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা হাসিনার আমলের চেয়ে বেশি নিরাপদে আছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি দৃঢ়তার সাথে বারবার নাকচ করে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে জানানোর সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর একটি কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়ে অপতথ্য, ভুল তথ্য আর মিথ্যা তথ্যের বিস্তার ঘটিয়ে বলার চেষ্টা করছে যে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ নয়। ভারতীয় মিডিয়ার এই অপপ্রচারের জেরেই সে দেশের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গত সোমবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালানো হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠনের সমর্থকরা এ হামলা চালান। একই দিন মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের কাছাকাছি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আয়োজনে কয়েক শ’ লোক বিক্ষোভ করেন। এর আগে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, বাংলাদেশের পতাকা এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। এসব প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি বাড়াচ্ছে। সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটাচ্ছে। আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে সন্ত্রাসী হামলার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করেছে ঢাকা। এ বিষয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত সোমবার রাতের এক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনকে নিরাপত্তা দিতে ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতকে বুঝতে হবে, এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয়। ভারতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন ও মিশন কার্যালয়ে যেভাবে হামলা ও বিক্ষোভ হচ্ছে তা রীতিমতো ভিয়েনা সনদের লঙ্ঘন। প্রতিটি দেশে বিদেশী দূতাবাস এবং সেখানে কর্মরত কূটনীতিকদের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অথচ প্রতিবাদের নামে ভারতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন এবং মিশন কার্যালয়ে যা হচ্ছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননা ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতকে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, ভারতের আগ্রাসী আচরণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। ভারত যাতে বাংলাদেশের সাথে ন্যায্য আচরণ করতে বাধ্য হয় এমন ব্যবস্থা নিন।