ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতে প্রচারণা

প্রতিবেশী সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৪০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে


বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার কায়েমের পর ভারত অব্যাহতভাবে সমর্থন জুগিয়েছে। শেখ হাসিনা গুম, খুন ও নারকীয় নিপীড়ন চালিয়ে বাংলাদেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেন। তবু ভারত হাসিনা সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। হতাশার বিষয় হলো- সদ্য পতিত হাসিনার প্রতি দিল্লি তার প্রতি সমর্থন আরো বাড়িয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ভোটাধিকার হরণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয় দেশের সম্পর্ককে বিশ্বের জন্য অনুকরণী উদাহরণ উল্লেখ করেন। এ সম্পর্কের উল্টোদিকে চলা শুরু যখন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে মাফিয়া সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ৫ আগস্টের পর প্রায় প্রতিদিন ভারতের পক্ষ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে- যা অস্বস্তিকর, ক্ষেত্রবিশেষে অগ্রহণযোগ্য। ইসকনের কথিত এক নেতাকে গ্রেফতারের পর ভারতের বিভিন্ন পর্যায় থেকে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অথচ চিন্ময়কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আটক ও জামিন নামঞ্জুরের পরিপ্রেক্ষিতে একদল লোক আদালত প্রাঙ্গণে তাণ্ডব চালিয়েছে। সনাতন ধর্মের সদস্য পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে। আদালত ও পার্শ্ববর্তী মসজিদে ভাঙচুর চালিয়েছে। একজন সরকারি আইন কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের ওই আইনজীবী নওমুসলিমদের পক্ষে আইনি সহায়তা দিতেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন ধার্মিক। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সনাতনীদের নামে একটি গোষ্ঠী উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাদের কর্মসূচিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সশন্ত্র উপস্থিতি দেখা গেছে। আইনজীবী আলিফ হত্যার পর সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আশার কথা- এ ঘটনায় দেশের মানুষ সর্বোচ্চ ধৈরে‌্যর পরিচয় দিয়েছেন। মুসলিম যুবক হত্যা ও ইসকনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত চলমান। এ অবস্থায় ভারত সরকার, দেশটির বিরোধী দলের শীর্ষনেতা এমনকি উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশকে নিশানা করে তীব্র আক্রমণ করছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লোকসভায় বাংলাদেশ সরকারকে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। ভারতের বিরোধী দলের লোকজনও একই রকমের বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ সনাতনীদের নামে একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দৃশ্যমান তৎপরতা চালাচ্ছে। যাদের সাথে পতিত সরকারের দোসররা ইন্ধন দিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যাতন ও পূজামণ্ডপে আক্রমণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ঘটনার বাস্তবতা উল্লেখ না করে এমন প্রচারণা চালানো চরম অসততা। এ দেশে বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গরিব দর্জি বিশ্বজিতকে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। অনেক সংখ্যালঘুর জমিজিরাত দখল করে আওয়ামী পান্ডারা। তবু হাসিনা জমানায় দিল্লি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু চিন্ময়ের গ্রেফতারের ঘটনায় ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে প্রতিকার পাওয়ার যে আগ্রাসী প্রয়াস; তা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। এতে বিষয় স্পষ্ট, ভারতের নিশানা সংখ্যালঘুদের পক্ষে দাঁড়ানো নয়; বরং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করা। আমরা আশা রাখব, ভারত নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেবে। বাংলাদেশেও একই ধরনের ইস্যুতে সততার সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উৎসাহ এবং ক্ষেত্রবিশেষে নীরবতা দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটাবে। এমন নীতি পরিহার দিল্লির জন্য উত্তম।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতে প্রচারণা

প্রতিবেশী সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর

আপলোড টাইম : ১২:৪০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪


বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার কায়েমের পর ভারত অব্যাহতভাবে সমর্থন জুগিয়েছে। শেখ হাসিনা গুম, খুন ও নারকীয় নিপীড়ন চালিয়ে বাংলাদেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেন। তবু ভারত হাসিনা সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। হতাশার বিষয় হলো- সদ্য পতিত হাসিনার প্রতি দিল্লি তার প্রতি সমর্থন আরো বাড়িয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ভোটাধিকার হরণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয় দেশের সম্পর্ককে বিশ্বের জন্য অনুকরণী উদাহরণ উল্লেখ করেন। এ সম্পর্কের উল্টোদিকে চলা শুরু যখন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে মাফিয়া সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ৫ আগস্টের পর প্রায় প্রতিদিন ভারতের পক্ষ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে- যা অস্বস্তিকর, ক্ষেত্রবিশেষে অগ্রহণযোগ্য। ইসকনের কথিত এক নেতাকে গ্রেফতারের পর ভারতের বিভিন্ন পর্যায় থেকে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অথচ চিন্ময়কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আটক ও জামিন নামঞ্জুরের পরিপ্রেক্ষিতে একদল লোক আদালত প্রাঙ্গণে তাণ্ডব চালিয়েছে। সনাতন ধর্মের সদস্য পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে। আদালত ও পার্শ্ববর্তী মসজিদে ভাঙচুর চালিয়েছে। একজন সরকারি আইন কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের ওই আইনজীবী নওমুসলিমদের পক্ষে আইনি সহায়তা দিতেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন ধার্মিক। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সনাতনীদের নামে একটি গোষ্ঠী উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাদের কর্মসূচিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সশন্ত্র উপস্থিতি দেখা গেছে। আইনজীবী আলিফ হত্যার পর সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আশার কথা- এ ঘটনায় দেশের মানুষ সর্বোচ্চ ধৈরে‌্যর পরিচয় দিয়েছেন। মুসলিম যুবক হত্যা ও ইসকনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত চলমান। এ অবস্থায় ভারত সরকার, দেশটির বিরোধী দলের শীর্ষনেতা এমনকি উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশকে নিশানা করে তীব্র আক্রমণ করছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লোকসভায় বাংলাদেশ সরকারকে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। ভারতের বিরোধী দলের লোকজনও একই রকমের বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ সনাতনীদের নামে একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দৃশ্যমান তৎপরতা চালাচ্ছে। যাদের সাথে পতিত সরকারের দোসররা ইন্ধন দিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যাতন ও পূজামণ্ডপে আক্রমণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ঘটনার বাস্তবতা উল্লেখ না করে এমন প্রচারণা চালানো চরম অসততা। এ দেশে বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গরিব দর্জি বিশ্বজিতকে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। অনেক সংখ্যালঘুর জমিজিরাত দখল করে আওয়ামী পান্ডারা। তবু হাসিনা জমানায় দিল্লি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু চিন্ময়ের গ্রেফতারের ঘটনায় ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে প্রতিকার পাওয়ার যে আগ্রাসী প্রয়াস; তা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। এতে বিষয় স্পষ্ট, ভারতের নিশানা সংখ্যালঘুদের পক্ষে দাঁড়ানো নয়; বরং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করা। আমরা আশা রাখব, ভারত নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেবে। বাংলাদেশেও একই ধরনের ইস্যুতে সততার সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উৎসাহ এবং ক্ষেত্রবিশেষে নীরবতা দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটাবে। এমন নীতি পরিহার দিল্লির জন্য উত্তম।