ইপেপার । আজ রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

দামুড়হুদায় খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

ইট ভাটার খড়ির চাহিদায় গাছ নিধনের আশঙ্কা

আওয়াল হোসেন, দর্শনা:
  • আপলোড টাইম : ১২:২৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৪৩ বার পড়া হয়েছে

দামুড়হুদা উপজেলায় শীতের শুরুতেই খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন কৃষক ও গাছিরা। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে এ বছর রস সংগ্রহ করে প্রায় ১৩৭ মেট্রিক টন থেকে ১৫০ মেট্রিক টন খেজুর গুড় উৎপাদিত হবে।
দর্শনার আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমি ১৯৭৩ সাল থেকে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করছি। এ বছর ৮০টি খেজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করেছি। ইতোমধ্যে সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৩/৪ কেজি করে গুড় তৈরি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৭/৮ কেজি করে গুড় উৎপাদন হবে। চলতি অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত এ রস ও গুড় সংগ্রহের কাজ চলবে। যত দিন যাবে, তত গুড় বেশি উৎপাদন হবে। আগামী এক মাস পর প্রতিদিন ২/৩ ভাড় গুড় উৎপাদন হবে।’

পরানপুর গ্রামের গাছী হবি বলেন, ‘এ বছর ৫৬টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করেছি। যা থেকে আমি প্রতিদিন ২ কেজি করে খেজুর পাটালী তৈরি করে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।’
একই গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, ‘৭৫টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি শুরু করেছি। যা ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এসব গুড় গ্রামের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবে বেশি বেশি গুড় উৎপাদন করতে পারলে আমি এলাকার সবচেয়ে বড় খেজুর গুড়ের হাট, জয়রামপুর রেলস্টেশনের পাশের হাটে নিয়ে বিক্রি করবো।’ তিনি আরোও বলেন, ‘প্রতি বছরই খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভালো চাহিদা থাকায় এসব খেজুর গাছ ইট ভাটার খড়ি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।’

ইট ভাটার খড়ির চাহিদায় গাছ নিধনের আশঙ্কা:
এদিকে দামুড়হুদায় দিন দিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। এর প্রধান কারণ হিসেবে অনেকেই ইটভাটাগুলোর ভূমিকা উল্লেখ করছেন। গাছ কাটা এবং ইটভাটায় বিক্রির ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, এতে রস ও গুড় উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
রুদ্রনগর মুন ইট ভাটার মালিক লিটন বলেন, ‘প্রতি বছর এ উপজেলা থেকে প্রায় ১০-১২ হাজার খেজুর গাছ ইটের ভাটায় বিক্রি হয়ে থাকে। উপজেলায় বর্তমানে ২৭টি চলমান ইটের ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ভাটায় খেজুর গাছ ও খড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে, বাকি ১৫টি ভাটায় কয়লা ও কিছু কিছু খড়ি ব্যবহার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে গাছ মালিকরা খেজুর গাছ কেটে ফেলেন এবং খড়ি হিসেবে তা ভাটাই বিক্রি করে দেন।’
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকতা শারমীন আক্তার বলেন, ‘দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে যেসব উঁচু উঁচু খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে কৃষকদের কষ্ট হয়, সেসব গাছগুলো কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কিছু খেজুর গাছ মরে যাচ্ছে, সেগুলোও ইটের ভাটায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খেজুর গাছের বিলুপ্তি রোধে এবং রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চারা রোপণসহ কৃষক ও গাছীদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দামুড়হুদায় খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

ইট ভাটার খড়ির চাহিদায় গাছ নিধনের আশঙ্কা

আপলোড টাইম : ১২:২৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

দামুড়হুদা উপজেলায় শীতের শুরুতেই খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন কৃষক ও গাছিরা। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে এ বছর রস সংগ্রহ করে প্রায় ১৩৭ মেট্রিক টন থেকে ১৫০ মেট্রিক টন খেজুর গুড় উৎপাদিত হবে।
দর্শনার আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমি ১৯৭৩ সাল থেকে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করছি। এ বছর ৮০টি খেজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করেছি। ইতোমধ্যে সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৩/৪ কেজি করে গুড় তৈরি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৭/৮ কেজি করে গুড় উৎপাদন হবে। চলতি অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত এ রস ও গুড় সংগ্রহের কাজ চলবে। যত দিন যাবে, তত গুড় বেশি উৎপাদন হবে। আগামী এক মাস পর প্রতিদিন ২/৩ ভাড় গুড় উৎপাদন হবে।’

পরানপুর গ্রামের গাছী হবি বলেন, ‘এ বছর ৫৬টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করেছি। যা থেকে আমি প্রতিদিন ২ কেজি করে খেজুর পাটালী তৈরি করে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।’
একই গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, ‘৭৫টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি শুরু করেছি। যা ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এসব গুড় গ্রামের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবে বেশি বেশি গুড় উৎপাদন করতে পারলে আমি এলাকার সবচেয়ে বড় খেজুর গুড়ের হাট, জয়রামপুর রেলস্টেশনের পাশের হাটে নিয়ে বিক্রি করবো।’ তিনি আরোও বলেন, ‘প্রতি বছরই খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভালো চাহিদা থাকায় এসব খেজুর গাছ ইট ভাটার খড়ি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।’

ইট ভাটার খড়ির চাহিদায় গাছ নিধনের আশঙ্কা:
এদিকে দামুড়হুদায় দিন দিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। এর প্রধান কারণ হিসেবে অনেকেই ইটভাটাগুলোর ভূমিকা উল্লেখ করছেন। গাছ কাটা এবং ইটভাটায় বিক্রির ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, এতে রস ও গুড় উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
রুদ্রনগর মুন ইট ভাটার মালিক লিটন বলেন, ‘প্রতি বছর এ উপজেলা থেকে প্রায় ১০-১২ হাজার খেজুর গাছ ইটের ভাটায় বিক্রি হয়ে থাকে। উপজেলায় বর্তমানে ২৭টি চলমান ইটের ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ভাটায় খেজুর গাছ ও খড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে, বাকি ১৫টি ভাটায় কয়লা ও কিছু কিছু খড়ি ব্যবহার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে গাছ মালিকরা খেজুর গাছ কেটে ফেলেন এবং খড়ি হিসেবে তা ভাটাই বিক্রি করে দেন।’
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকতা শারমীন আক্তার বলেন, ‘দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে যেসব উঁচু উঁচু খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে কৃষকদের কষ্ট হয়, সেসব গাছগুলো কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কিছু খেজুর গাছ মরে যাচ্ছে, সেগুলোও ইটের ভাটায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খেজুর গাছের বিলুপ্তি রোধে এবং রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চারা রোপণসহ কৃষক ও গাছীদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি।’